সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়
২৩ জুলাই, ২০২০
সেটা ১৯৭৭ সাল। জন প্লেয়ার লীগে নটিংহ্যাম এর হয়ে নর্দ্যাম্পটনের হয়ে ৮ ওভার বোলিং করে ৭ টা মেডেন দিয়ে মাত্র ১ রানের বিনিময়ে ১ উইকেট পান কলকাতার ছেলে দিলীপ দোশি। সমারসেটের ব্রায়ান ল্যাংফোর্ড (৮-৮-০-০) ছাড়া এই রেকর্ডের ধারে কাছে তখন কেউ নেই। কিন্তু দোশি অবাক হয়ে যান তখন, যখন পরের সপ্তাহে কেন্টের বিরুদ্ধে তিনি বাদ পড়েন। কারণ ? দক্ষিণ আফ্রিকার ক্লাইভ রাইস যিনি ওই মরশুমে দোশির সঙ্গে কাউন্টি খেলেন তিনি মনে করতেন একদিনের ম্যাচে স্পিনার খেলানো ঠিক নয়। ফলে ট্রেন্ট ব্রিজের ফ্ল্যাট উইকেট ঘরের মাঠ হওয়ার পরেও মরশুমে ৮০ উইকেট নিয়ে দোশি ছিলেন ব্রাত্য।
এর মাত্র একদশকের কিছু বাদে ৪২ বছর বয়সী রাইস দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক হয়ে ওয়ান ডে খেলতে নামেন। গলায় মালা পরে, ইডেনে , অর্থাৎ সেই দোশির ঘরের মাঠে , নিজের শহরে – কলকাতায় হাত জোড় করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে করতে নামেন মাঠে। দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সরকারি ভাবে ফিরে আসে ২১ বছর বাদে। সেই ২১ বছর আগে যে রাইস দলে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি তখন ছিলেন ২০/২১ এর নবযুবক। কিন্তু দেশ ক্রিকেটে ফেরার সময় তিনি ৪২ !
রাইসের পূর্বপুরুষ ক্রিকেট খেলতেন। দাদামশায় কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে খেলেছেন, দাদামশায়ের দাদু – খেলেছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে। রাইস ট্রান্সভালের হয়ে খেলা শুরু করেন , শেষ জীবনে নাটালে যান। ১৯৭১/৭২ এর অস্ট্রেলিয়া সফরে দলে ছিলেন , কিন্তু সফর হয়নি। এরপর রামসবটমের হয়ে ল্যাংকশায়ার লীগে খেলেন, দুই মরশুম সেকেন্ড ইলেভেন খেলেন, অবশেষে একযুগ নটিংহ্যামশায়ারের হয়ে খেলেন। হ্যাডলির সঙ্গে জুটি বেঁধে ফিরিয়ে নটিংহ্যামের লারউড-ভোস জুটির স্মৃতি।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ২১টি বেসরকারি/রেবেল টেস্ট ও ৩৮টি বেসরকারি/রেবেল একদিনের ম্যাচ খেলা রাইস খেলেছেন প্যাকারের ওয়ার্ল্ড সিরিজেও। ফলে সাসপেন্ড হয়েছেন কাউন্টি ক্রিকেটে, ফিরে এসেছেন এমনকি ভারত ইংল্যান্ড সফরে গিয়ে নটিংহ্যামশায়ার দলে তাঁর অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আপত্তি করে খেলতে অস্বীকার করায় নটিংহ্যাম তাঁকে বাদ দিয়েই খেলেছে।
এত কিছুর পরেও বিশ্ব আজও মনে করে আশির দশক ছিল ‘পঞ্চ-চৌখসের যুগ’। বোথাম, হ্যাডলি, কপিল বা ইমরানের থেকে একবিন্দু পিছিয়ে ছিলেন না ‘জ্যেষ্ঠ-চৌখস’ ক্লাইভ রাইস।
বেঁচে থাকলে ৭১ হতো ঘরোয়া একদিনের ক্রিকেটে প্রথম পাঁচটি ডাবল পাওয়া এই ক্রিকেটারের।