সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়
২৪ জুলাই, ২০২০
আজ থেকে প্রায় ৬০ বছর আগে শুরু হয়েছিল এই ধাপ্পাবাজি। আজও তার জের চলছে।
ঘটনা হলো, ১৯৬১ সাল নাগাদ দক্ষিণ আফ্রিকা কমনওয়েলথ থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ফলে আই সি সি ঘোষণা করে যে দক্ষিণ আফ্রিকা আর সরকারীভাবে ততদিন পর্যন্ত খেলতে পারবে না , যতদিন না কমনওয়েলথ এর সদস্য হয়। যাঁরা নিয়মিত ক্রিকেটের ইতিহাসে নজর রাখেন তাঁরা জানেন ভারতকেও একই সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল যখন নতুন সংবিধান গ্রহণের কাজ চলছিল কারণ তখনও ঠিক হয়নি ভারত কমনওয়েলথ এ থাকবে কিনা। পরে ডি মেলো নেহেরুর সাথে দেখা করে আশ্বাস পান এবং ভারত থেকে যায় যেকারণে এম সি সি ১৯৪৯-৫১ ভারতের সাথে খেলেনি এবং তার বদলে বেসরকারি টেস্ট খেলে কমনওয়েলথ দল।
স্বভাবতই এই নিয়মে দক্ষিণ আফ্রিকার ও সরকারি টেস্ট খেলার কথা নয়। কিন্তু তাঁরা আই সি সিকে নিয়মটি পাল্টানোর কথা বলে। ইংল্যান্ড,অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড দক্ষিণ আফ্রিকাকে সমর্থন করে। ভারত,পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্বাভাবিক ভাবেই বিরোধিতা করে। দক্ষিণ আফ্রিকার ভোটাধিকার তখন নেই। ফল সমান।
আই সি সি ঠিক করে ওই সময়ের থেকে যতক্ষণ না সিদ্ধান্ত হচ্ছে ম্যাচ গুলো বেসরকারি ধরা হবে।
ইতিমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা সাসপেন্ড হয়। দুই দশক পরে ফিরে এসে সরকারি টেস্ট খেলা শুরু করে। কিন্তু ১৯৬১ থেকে ১৯৭০ এর টেস্ট নিয়ে আই সি সি কোনো সিদ্ধান্ত নেয় নি। ফলে ঐ সব টেস্ট আসলে বেসরকারি।
কিন্তু শ্বেতাঙ্গ দেশ গুলির ক্রিকেট পত্রিকা ও ইতিহাস-পরিসংখ্যানবিদেরা এগুলিকে জোর করে সরকারি টেস্ট ধরতে থাকে। সচেতনতা না থাকায় ভারত,পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে কোনো প্রতিবাদ আসেনি।
ফলে গ্রেম পোলোক, পিটার পোলোক, ব্যারি রিচার্ডস,মাইক প্রোক্টর, জন ট্রাইকস একটাও সরকারি টেস্ট না খেলেও টেস্ট ক্রিকেটার হয়ে যান। ব্যারি তো টেস্টে ব্র্যাডম্যানের পর সবথেকে বেশি গড় পেয়েছেন, গ্রেম - ম্যাকগ্লিউ এর রেকর্ড ভেঙেছেন (আসলে যেটা কালিনানের ভাঙা), ট্রাইকস বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ২৩ বছর টেস্ট খেলেছেন (তাও আবার দুই দেশের হয়ে)- যেটা আসলে শচীনের একার রেকর্ড।
মজার ব্যাপার কলকাতার যুগান্তর পত্রিকা এর প্রতিটি টেস্ট কে বেসরকারি বলে লিখেছিল। পরের প্রজন্মের কাছে অদ্ভুত ভাবে এই লড়াই বিস্মৃত হয়ে গেছে।