(জিম লেকার, অনিল কুম্বলের পরে এ বার টেস্ট ক্রিকেটে এক ইনিংসে ১০ উইকেট নিলেন নিউজিল্যান্ডের আজাজ প্যাটেল। ১০ উইকেট নিয়ে অনুসন্ধানমূলক ফিচার লিখলেন ক্রিকেট গবেষক সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়)
শনিবার মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে যা ঘটল, তার তুলনা মেলা ভার। ভারতের মাটিতে একজন স্পিনার এক ইনিংসে ভারতেরই বিরুদ্ধে ১০ উইকেট তুলে নিয়ে চলে গেলেন। আজাজ প্যাটেল। সে নিউজিল্যান্ডের হলেও জন্ম ওই মুম্বই শহরেই। টেস্টে তো দূর, প্রথম শ্রেণির খেলাতেও নিউজিল্যান্ডের এর আগে মাত্র একজনই এই রেকর্ডের অধিকারী। তিনি হলেন আলবার্ট এডওয়ার্ড মস। লিস্টারশায়ারে জন্ম ও এসেক্সে মৃত্যু হলেও জীবনে চারটে ম্যাচ ১৮৮৯/৯০ সালে নিউজিল্যান্ডের ক্যান্টারবেরির হয়ে খেলেন। যেগুলো পরে প্রথম শ্রেণির বলে ধরা হয়। তার প্রথম ম্যাচেই ওয়েলিংটনের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে (ম্যাচের দ্বিতীয়) ২৮ রানে ১০ উইকেট নেন। প্যাটেলের মতো তিনিও নিউজিল্যান্ডের লোক নন। প্যাটেল আবার জিম লেকার ও অনিল কুম্বলের পর তৃতীয় বোলার হিসেবে এই রেকর্ড করলেন। তবে তার দলের জেতা মুশকিল মুম্বইয়ের এই দ্বিতীয় টেস্টে। ভারত ৩২৫ তুললেও নিউজিল্যান্ড ভারতে সর্বকালীন নিম্ন রানে আউট হয়েছে। ৬২। তারই মধ্যে প্যাটেল আবার নট আউট। তারপর ভারত কোহলির নিয়ম মেনে ফলো অন না করিয়ে দিনের শেষে ৬৯/০। মায়াঙ্ক প্রথম ইনিংসের ১৫০ রানের পর আবার দিনের শেষে অপরাজিত ৩৮।
সে যাই হোক, প্যাটেলের কীর্তি তাতে ছোট হওয়ার নয় যদিও। এই নিয়ে ৯০ বার প্রথম শ্রেণির খেলায় এক ইনিংসে ১০ উইকেট হল। অনেকে আবার একাধিক বার পেয়েছেন, যেমন ডব্লু জি গ্রেস, জিম লেকার।
ভারতের মাটিতে প্রথম ইনিংসে দশ উইকেট পান ফ্র্যাঙ্ক ট্যারান্ট। সেই কোন ১৯১৮/১৯ সালে। তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলছে। পুনার ডেকান জিমখানা মাঠে লর্ড ওয়েলিংডনের দলের বিরুদ্ধে ৯০ রানে ১০ উইকেট নেন কোচবিহার মহারাজা দলের হয়ে। সেই ম্যাচে ফ্র্যাঙ্ক ট্যারান্ট বল আর ব্যাট নিয়ে ছেলেখেলা করেন। সে গল্প আরেক দিন হবে। তার ৩৬ বছর পরে সুভাষ গুপ্তে বোম্বের হয়ে ৭৮ রানে ১০ উইকেট নেন। ব্রেবোর্ন স্টেডিয়ামের সেই খেলায় পাকিস্তান সার্ভিসেস ও ভাওয়ালপুর যৌথ একাদশের বিরুদ্ধে এই ঘটনা ঘটান। এরপর বাংলার প্রেমাংশুমোহন চ্যাটার্জী অসমের জোড়হাটে অসমের বিরুদ্ধে বাংলার হয়ে এই কৃতিত্ব ঘটান রঞ্জি ট্রফিতে। বোলিং গড় ছিল ১৯.৫-১১-২০-১০।
এর ২৯ বছর বাদে রাজস্থানের প্রদীপ সুন্দরম ৭৮ রানে দশ উইকেট নেন। বিদর্ভের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচ হয়েছিল জয়পুরের বরকতউল্লাহ খান স্টেডিয়ামে।
১৩ বছর বাদে অনিল কুম্বলে পাকিস্তানের বিপক্ষে ফিরোজ শাহ কোটলায় ৭৪ রানে দশ উইকেট নেন। তখন সেই দলে রাহুল দ্রাবিড় ছিলেন। দুই বছর বাদে আগরতলার মহারাজা বীর বিক্রম কলেজ স্টেডিয়ামে পূর্বাঞ্চলের দেবাশিস মোহান্তি দক্ষিণাঞ্চলের বিরুদ্ধে মাত্র ৪৬ রানে ১০ উইকেট নেন। তৃতীয় ব্যাটার ছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়, ক্যাচ ধরেন দীপ দাশগুপ্ত। আজ রাহুল দ্রাবিড় ভারতের কোচ, আর দীপ দাশগুপ্ত কমেন্টেটর। জানা নেই মোহান্তি দেখছেন কিনা।
দারুন বল করেছিলেন তিনি। শ্রীরাম, লক্ষণ, দ্রাবিড়, যোশী, শ্রীনাথ, আশীষ কাপুর, বিজয় ভরদ্বাজ, তিলক নাইডুর মতো ব্যাটিং লাইনআপ ৩৭ ওভারে মুড়িয়ে যায়। তারপর এই প্যাটেল।
মাত্র দুই সপ্তাহ আগে দক্ষিন আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটে একটা দশ উইকেট নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তার আগে ২০১৮/১৯ সালে কলম্বো ক্রিকেট ক্লাবের পুষ্পকুমারা পেয়েছিলেন। তার ১১ বছর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওটিস গিবসন ডারহ্যামের হয়ে এই কৃতিত্ব ঘটান। তাঁর আগে মোহান্তি, তার আগে কুম্বলে, তার তিন বছর আগে নঈম আখতার; রাওয়ালপিন্ডি বি দলের হয়ে পেশোয়ারের বিরুদ্ধে। তার একবছর আগে ১৯৯৪ সালে জনসন, মিডলসেক্সের হয়ে। ১৯৯১/৯২ সালে জয়বিক্রমাসিংহে, সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবের হয়ে। তার আগে '৮০ এর দশকে তিনটে(এডি হেমিংস একজন এঁদের মধ্যে), '৭০ এর দশকে হয়নি, ষাটের দশকে ৫টা। পঞ্চাশের দশকে ৮টা। তার মধ্যে দুটো ভারতীয়। ৮টার মধ্যে চারটে ১৯৫৬ সালে, তারই মধ্যে লেকার দুটো, দুটোই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে, একটা টেস্টে, একটা ট্যুর ম্যাচে।