কাজে এল না ভুবনেশ্বর কুমারের (৪/১৩) নজরকাড়া বোলিং
ময়ূখ লাহিড়ী
টি-২০ বিশ্বকাপের জন্য আদৌ কি প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির মঞ্চ তৈরি করে দিতে পারছে আইপিএল? দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারা পর উঁকি দিচ্ছে এই প্রশ্নই। প্রথম দলের একগুচ্ছ তারকা ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড সফরের জন্য ব্যস্ত। তাই দ্বিতীয় সারির দল নিয়েই নামতে হয়েছে টিম ইন্ডিয়াকে। গত বছরও বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের জন্য ছিল প্রায় একই পরিস্থিতি। কিন্তু সেখানে এমনভাবে নাকানিচোবানি খায়নি দল। অথচ, দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে দল হিসাবে ক্লাবস্তরের বলে মনে হচ্ছে ‘মেন ইন ব্লু’-কে। হঠাৎ করে নেতৃত্বের দায়িত্ব পেয়ে যাওয়া ঋষভ পন্থকে পুরোপুরি দিশেহারা দেখাচ্ছে।
নিন্দুকেরা বলতেই পারেন, রাহুল দ্রাবিড়ের মতো ব্যক্তিত্ব কোচের পদে থাকা সত্বেও দলের এই হাল হবে কেন? ঘটনা হল, দ্রাবিড়কে গত সিকি শতাব্দী ধরে যাঁরা দেখা আসছেন তাঁরা খুব ভালো করেই জানেন, নিজের গণ্ডির বাইরে পা রাখতে একেবারেই পছন্দ করেন না ‘দ্য ওয়াল’। সে ২০০৪-এর পাকিস্তান সফরের বিতর্কির মুলতান টেস্ট হোক (যখন শচীন তেন্ডুলকর ১৯৪ রানে অপরাজিত থাকা অবস্থায় ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া) অথবা রবিবারের বরাবাটি স্টেডিয়াম। ‘টু-পেসড’ নয়, কার্যত ‘মাল্টি-পেসড’ পিচে দল যখন প্রথমে ব্যাট করে ধুঁকতে ধুঁকতে ১৪৮-এ পৌঁছল, তারপরেই সরেজমিনে গিয়ে পিচ দেখে এলেন দ্রাবিড়। সেইমতো দলের সঙ্গে আলোচনাও করতে দেখা গেল তাঁকে। কিন্তু ২২ গজে নেমে তো দ্রাবিড় খেলবেন না! সেখানে ঋষভ নেতৃত্বের যা নমুনা দেখালেন তা এককথায় স্কুলছাত্রসুলভ।
এমনিতেই ভারতীয় ক্রিকেটে ঋষভের অবস্থান অনেকটা যৌথ পরিবারের ছোট ছেলের মতো। দিনের পর দিন হাঁকড়াতে গিয়ে দৃষ্টিকটূ শট খেলে আউট হবেন। অথচ, ‘ওটাই ওর স্বাভাবিক খেলা’-মার্কা আহ্লাদ দিয়ে তাঁকে দিনের পর দিন সুযোগ দেওয়া হবে। এহেন ঋষভের হাতে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার ভার দিলে যা হয় তাই হচ্ছে। বোলিং পরিবর্তনের কোনও মাথামুণ্ডু নেই। নেই কোনও হোমওয়ার্কও। গত দু’দশক ধরে বিদেশি দলগুলির মধ্যে ভারতের মাটিতে সবচেয়ে সফল দক্ষিণ আফ্রিকা। কাট, সুইপ পুল – এই তিন অস্ত্রে ভর করে ‘র্যাঙ্ক টার্নার’-এও দুর্দান্ত লড়াই করতে পারে। আর গত কয়েক বছরে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ভারতের বিরুদ্ধে এবং ভারতের মাটিতে যিনি ধারাবাহিকভাবে সফল সেই হেনরিখ ক্লাসেনের জন্য কোনও পরিকল্পনা দলের থিঙ্কট্যাঙ্কের রয়েছে বলে মনে হল না। যে পিচে বল প্রায় ঘুরছেই না, সেখানেও যুজবেন্দ্র চাহলকে দিয়ে চার ওভার বল করিয়ে গেলেন পন্থ। যে চার ওভারে উঠল ৪৯ রান। এর মধ্যে শেষ ওভারে ২৩ রান। অক্ষর পটেল এক ওভার বল করেই ১৯ রান বিলিয়ে দিলেন। ১৪৮ রানের পুঁজি নিয়ে খেলতে নেমে স্পিনাররা যদি পাঁচ ওভারে ৬৮ রান খরচ করে দেন তাহলে ম্যাচের আর আদৌ কিছু বাকি থাকে কি?
পিচে বল হামেশাই থমকাচ্ছে। কখনও অপ্রত্যাশিতভাবে বাউন্স করছে। কিন্তু এই উইকেটেরও চরিত্র বুঝে ব্যাট করলে যে রান পাওয়া যায় সেটা দেখিয়ে দিয়েছিলেন ঈশান কিষাণ (২১ বলে ৩৪), শ্রেয়স আইয়ার (৩৫ বলে ৪০), দীনেশ কার্তিকরা (২১ বলে ৩০ অপরাজিত)। আর সেই রাস্তায় হেঁটেই ভারতীয় স্পিনারদের বেআব্রু করে দিলেন ক্লাসেন। প্রথম কয়েক ওভার বুঝে নিলেন পিচের চরিত্র। আর তারপরেই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে ৪৬ বলে ৮১ রানের চোখধাঁধানো ইনিংস খেলে গেলেন।
সুনীল গাভাসকর, গ্রেম স্মিথের মতো বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন ব্যাটিং অর্ডার নিয়েও। ঠিক কোন যুক্তিতে অক্ষরকে কার্তিকের আগে পাঠানো হল তা এককথায় অবোধ্য। ম্যাচের শেষে ঋষভ বলছেন, ১০-১৫ রান কম করেছিল দল। অক্ষরের জায়গায় কার্তিককে পাঠালে সেই রান উঠতেই পারত।
তবে দলের এই ভরাডুবির মধ্যেও নজরকাড়া বোলিং করে গেলেন ভুবনেশ্বর কুমার। তাঁর দুর্দান্ত ইনসুইংয়ে একসময় ২৯/৩ হয়ে গিয়েছিল প্রোটিয়ারা। কিন্তু তারপরেই ক্লাসেন এবং টেম্বা বাভুমার (৩০ বলে ৩৫) জুটি আর এলোমেলো বোলিং পরিবর্তন ম্যাচের রাশ এনে দিল দক্ষিণ আফ্রিকার হাতে। যেখান থেকে আর কখনও ম্যাচে ফিরতে পারেনি টিম ইন্ডিয়া।
যার জেরে ২০২২-এ দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এখনও জয় অধরা টিম ইন্ডিয়ার। ম্যান্ডেলার দেশের সফর থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত দু’টি টেস্ট, তিনটি একদিনের ম্যাচ এবং চলতি সিরিজের দু’টি টি-২০ – সবেতেই হার হজম করতে হল তাদের।