এখনও কঠিন নাইটদের প্লে-অফ অঙ্ক; আম্পায়ারিং নিয়ে ফের বিতর্ক
ময়ূখ লাহিড়ী
সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ইনিংস চলছে। পাওয়ার প্লে-র শেষ ওভার। বল হাতে আন্দ্রে রাসেল। ওভারের দ্বিতীয় বলেই তাঁকে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড কেন উইলিয়ামসন। নিজামের শহরের দলের ডাগ-আউটে তখন মাথা নিচু করে কপালে হাত দিয়ে মাথা নাড়ছেন ব্রায়ান লারা।
শনিবারের ম্যাচের সম্ভবত সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ফ্রেম হয়ে থাকল ওটাই। এক ক্যারিবিয়ানের বুক-চেতানো অলরাউন্ড পারফরম্যান্সই চলতি আইপিএল থেকে কার্যত লারাদের বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে দিল।
কলকাতা নাইট রাইডার্স ইনিংসের পাওয়ার প্লে- শেষ হওয়ার পরেই সানরাইজার্স কোচ টম মুডি বলছিলেন, এই পিচে প্রথমে ব্যাট করা দল ১৭৫ তুললে লড়াই হবে সমানে সমানে। আর বিশ্বকাপজয়ী অজির কথা প্রায় অক্ষরে অক্ষরে পালন করে ছ’উইকেটে ১৭৭ তুলেছিল কিং খানের দল। কিন্তু লড়াই? কোথায় কী! অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে ১২৩/৮ পর্যন্ত পৌঁছল সানরাইজার্স। উল্টোদিকে, ৫৪ রানে ম্যাচ জিতে নিজেদের প্লে-অফে ওঠার রাস্তা কিছুটা হলেও পরিষ্কার করে রাখল কেকেআর।
গত কয়েক মরশুম ধরেই নাইট শিবিরে একটা রেওয়াজ চালু হয়েছে। ভালো শুরু করেও গাড্ডায় পড়বে দল। আর সেখান থেকে দর্শকদের একগুচ্ছ ক্যাচ প্র্যাকটিস দিয়ে দলের রানকে ভদ্রস্থ জায়গায় নিয়ে যাবেন আন্দ্রে রাসেল। কেকেআরের বিরুদ্ধে নামার আগে সব দলই তাই আলাদা করে পরিকল্পনা করে বিধ্বংসী জামাইকানকে নিয়ে। আর সেখানেই ভুল। ব্যাটসম্যান রাসেলকে নিয়ে পরিকল্পনা করা মানে অর্ধেক স্ট্র্যাটেজি নিয়ে নামা। বোলার রাসেলকে খেলার আলাদা হোমওয়ার্ক করে না নামলে ২২ গজে তার মাশুল দিতেই হয়। শনিবারের পুনেতে সেই মাশুলই দিল সানরাইজার্স। একটা সময় ছিল যখন বল করতে এলেই বাড়তি রান খরচ করতেন রাসেল। উইকেট পেতেন ঠিকই। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাঁকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে উইকেট উপহার দিয়ে আসতেন বিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা। ২০২২ আইপিএলের বোলার রাসেল তার থেকে অনেকটাই আলাদা। লাইন-লেংথ অনেক নিয়ন্ত্রিত। ‘নাকল’ বল পুরো আয়ত্ত করতে না পারলেও তর্জনী আর মধ্যমার মাঝে ফাঁককে ব্যবহার করে চমকপ্রদভাবে গতির হেরফের করছেন। স্লোয়ারের জালেই গুজরাত টাইটান্স ম্যাচে এক ওভারে পাঁচ রান দিয়ে চার উইকেট নিয়েছিলেন রাসেল। আর সেই জালেই শনিবার আটকে গেল উইলিয়ামসন অ্যান্ড কোং। চার ওভারে মাত্র ২২ রান খরচ করে তিন উইকেট নিয়ে গেলেন ড্রেরাস।
শনিবার বেঙ্কটেশ আইয়ার (৭) ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে আউট হয়ে গেলেও পাওয়ার প্লে-তে ৫৫ রান তুলে ফেলেছিল নাইটরা। কিন্তু আচমকাই ছন্দপতন। অষ্টম ওভারের শুরুতে স্কোর ছিল ৬৫/১। সাড়ে চার ওভার পরে সেটাই গিয়ে ঠেকল ৯৪/৫-এ। মন্থর অথচ বাউন্সি পিচে ভালো শুরু করেও দ্রুত প্যাভিলিয়নে ফিরলেন নীতীশ রানা (১৬ বলে ২৬), অজিঙ্ক রাহানে (২৪ বলে ২৮), শ্রেয়স আইয়াররা (৯ বলে ১৫)। সেই খাদের মুখ থেকেই দলকে ফিরিয়ে আনলেন রাসেল। স্যাম বিলিংসের সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে যোগ করলেন ৪৪ বলে ৬৩ রান। শেষ করলেন ওয়াশিংটন সুন্দরের ওভারে তিনটি ছক্কা হাঁকিয়ে। ২৮ বলে অপরাজিত ৪৯ রানের নজরকাড়া ইনিংস দিয়ে।
হারলেই চলতি আইপিএল থেকে কার্যত বিদায়। এই পরিস্থিতিতে উইলিয়ামসন ফেরার পরেও লড়াই চালাচ্ছিলেন অভিষেক শর্মা (২৮ বলে ৪৩) ও এডেন মার্করাম (২৫ বলে ৩২)। কিন্তু টিম সাউদি (২/২৩), উমেশ যাদব (১/১৯), বরুণ চক্রবর্তীদের (১/২৫) মিলিত প্রচেষ্টায় জয় পেতে সমস্যা হয়নি নাইটদের।
তবে এরই মধ্যে আবারও বিতর্ক বাঁধল আম্পায়ারিন নিয়ে। রিঙ্কু সিংকে এলবিডব্লু হওয়ার পর রিভিউয়ের আবেদন করেছিলেন বলে নাইট শিবিরের দাবি। কিন্তু তা যতক্ষণে আম্পায়ারদের দৃষ্টগোচর হল ততক্ষণে আবেদন করার সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে।
এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি তাতে প্লে-অফের শেষ দু’টি জায়গার জন্য লড়াইয়ে রয়েছে চারটি দল। পয়েন্ট টেবলে তিন নম্বরে রয়েছে রাজস্থান রয়্যালস। ১২ ম্যাচ খেলে ১৪ পয়েন্ট তাদের। নেট রানরেট +০.২২৮। বাকি দু’টি ম্যাচের একটিতে জিতলেই প্লে-অফের টিকিট পেয়ে যাবে তারা। সমসংখ্যক পয়েন্ট পেয়ে চারে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। কিন্তু তারা খেলেছে ১৩টি ম্যাচ। নেট রানরেটেও (-০.৩২৩) পিছিয়ে রয়েছেন বিরাট কোহলিরা। ১২ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে দিল্লি ক্যাপিটালস। ঋষভ পন্থদের নেট রানরেট +০.২১০। এরপরেই ১৩ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট পাওয়া নাইট রাইডার্স। যাদের নেট রানরেট আপাতত (+০.১৬০)। এই পরিস্থিতিতে রবিবারের লখনউ-রাজস্থান ম্যাচ নাইট শ্রেয়সদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। যে ম্যাচে রাজস্থান হারলে নাইটদের সুবিধা হবে। সমান গুরুত্বপূর্ণ সোমবারের পাঞ্জাব-দিল্লি ম্যাচও। তারপরেও বুধবার লখনউয়ের বিরুদ্ধে জিততে হবে নাইটদের। তবেই ইডেনে খেলার কিছুটা সম্ভাবনা রয়েছে।