• +91 6291642485
  • 6291642485
Banner

খেলার বিভাগ > ক্রিকেট

দুরন্ত লড়াই করেও ইডেন অধরা নাইটদের

অনবদ্য ইনিংসের পর অবিশ্বাস্য ক্যাচে আউট রিঙ্কু

ময়ূখ লাহিড়ী

‘ফাইট! কোনি, ফাইট!’ আশির দশকের খেলাপাগল এবং সিনেমাপাগল বাঙালির কাছে আইকন হয়ে যাওয়া তিনটি শব্দ। কোনওভাবে কি বুধবারের ডি ওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে নামার আগে সেই ছবি দেখেছিল শ্রেয়স আইয়ার অ্যান্ড কোং? নাহলে এই বাড়তি অ্যাড্রিনালিন এল কোথা থেকে?

সেই আশির দশকেই বিখ্যাত ক্রিকেট-লেখক নেভিল কার্ডাসের বিখ্যাত প্রবন্ধগুলির এক সংকলন বেরিয়েছিল। আর সেখান থেকেই ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল তাঁর শব্দবন্ধ – “স্কোরবোর্ড আসলে একটা গাধা।“ ঠিকই বলেছিলেন কার্ডাস। ২১১ তাড়া করতে গিয়ে আট উইকেটে ২০৮ তুলেছে পরে ব্যাট করা দল। দু’রানে হেরে ছিটকে গিয়েছে আইপিএল ২০২২ থেকে। এই পর্যন্তই স্কোরবোর্ডের দৌড়। কত মোক্ষম হিসাবকে উল্টে দেওয়ার রসদ ওই ২০৮/৮-এ ছিল তার পরিধি স্কোরবোর্ডের ক্ষুদ্র পরিসরে মাপতে যাওয়ার চেষ্টাই বৃথা।

তবে এই ধরনের ম্যাচে সমস্যা একটাই। ঠিক কোন ঘটনা বা মুহূর্ত আসল টার্নিং পয়েন্ট সেটা বোঝা দুরূহ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন, ম্যাচের তৃতীয় ওভারে কুইন্টন ডি ককের তোলা সহজ ক্যাচ জাজ-ই করতে পারলেন না অভিজিৎ তোমর। যেমন, লখনউ ইনিংসের ১৮ তম ওভারে টিম সাউদির ২৭ রান দেওয়া। যেমন, লখনউ ইনিংসের শেষ ওভারে নীতীশ রানার ফেলা ক্যাচ বাউন্ডারিতে গিয়ে লাগা। যেমন, আইপিএলের ইতিহাসে প্রথমবার ওপেনিং জুটির অবিচ্ছিন্ন থাকা এবং ২১০ রান তুলে নজির গড়া। দিনের শেষে এসব কিছুই ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াচ্ছে না। বরং তার চেয়ে অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হল নাইট ইনিংসের শেষ ওভারের পঞ্চম বলে রিঙ্কু সিং-এর আউট হওয়া। বা আরও স্পষ্টভাবে বললে, এভিন লিউইসের বাঁ-হাতে নেওয়া ওই অবিশ্বাস্য ক্যাচ।

তবে এখানেও তো পৌঁছনোর কথা ছিল না নাইটদের! ২১১ তাড়া করতে নেমে ইনিংসের চতুর্থ বলেই ডাগ-আউটে বেঙ্কটেশ আইয়ার। দু’ওভার পরেই একই রাস্তায় ম্যাচের অন্যতম খলনায়ক তোমরও। বাঁ-হাতি পেসে তখন আগুন ঝরাচ্ছেন মহসিন খান। নাইটরা তখন রীতিমতো কোণঠাসা। কিন্তু সেখান থেকেই পাল্টা মারের দাওয়াই নিয়ে আসরে নামলেন শ্রেয়স এবং নীতীশ। সাড়ে চার ওভারে দু’জনে যোগ করলেন ৫৬ রান। তার মধ্যে নীতীশেরই ২২ বলে ৪২। নীতীশ আউট হতেই স্যাম বিলিংসকে নিয়ে কাজে লেগে পড়লেন নাইট অধিনায়ক। চতুর্থ উইকেটে যোগ হল সাড়ে ছ’ওভারে ৬৬ রান। কিন্তু শ্রেয়স আউট হতেই রান ওঠার গতিতে ভাঁটা পড়ল। শেষ চার ওভারে জেতার জন্য দরকার ছিল ৬৭ রান। এরকম পরিস্থিতিতে যিনি নাইট শিবিরের সেরা বাজি সেই আন্দ্রে রাসেলই ছিলেন ক্রিজে। কিন্তু কোথায় কি! ১৭ তম ওভার বল করতে এসে ড্রেরাসকে কার্যত বোতলবন্দি করে আউট করলেন মহসিন। অতি বড় নাইট সমর্থকও ভেবে নিয়েছিলেন, কেকেআর কোচ হিসাবে এটাই শেষ ম্যাচ ব্রেন্ডন ম্যাকালামের। কিন্তু অন্যরকম ভেবেছিলেন রিঙ্কু সিং এবং সুনীল নারাইন। ১৮ এবং ১৯ – এই দু’ওভারে ৩৪ রান তুলে ক্ষীণ হলেও আশা জাগিয়েছিলেন দু’জনেই। সেই আশাই বাস্তব রূপ পাচ্ছিল শেষ ওভারে। শেষ ছ’বলে দরকার ছিল ২১ রান। এই পরিস্থিতিতে রিঙ্কু মার্কাস স্টয়নিসের প্রথম বল কভার দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠালেন। পরের দু’বল গিয়ে পড়ল গ্যালারিতে। শেষ তিন বলে চাই পাঁচ রান। চতুর্থ বলে রান নিতে গিয়ে হাত থেকে ব্যাট ছিটকে গিয়েছিল রিঙ্কুর। তবুও দুর্দান্ত ‘রানিং বিটউইন দ্য উইকেটস’-এ নিলেন দু’রান। উইকেটের পিছনে তখন গ্লাভস কামড়াচ্ছেন ৭০ বলে অপরাজিত ১৪০ করা কুইন্টন ডি কক। তাঁর ১০ বাউন্ডারি ও ১০ ছক্কায় সাজানো ইনিংস তখন আরব সাগরের তীরে ডুবে যাওয়ার অপেক্ষায়। কিন্তু পঞ্চম বলেই লিউইসের ওই চোখধাঁধানো ক্যাচ এবং ১৫ বলে ৪০ রান করে বিদায় রিঙ্কুর। আর শেষ বলে উমেশ যাদবের অফস্টাম্প গড়াগড়ি।

সমালোচকরা বলতে পারেন, পুরোনো নিয়মে ব্যাটসম্যানরা ‘ক্রস’ করে গেলে স্ট্রাইক পেতেন নারাইন। সেক্ষেত্রে নাইটদের জেতার একটা বড় সম্ভাবনা থাকত। আর সেটাই টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়াল। যার ফলে এবারের মতো ঘরের মাঠে আর নামা হচ্ছে না নাইটদের।

তর্ক থাকতেই পারে। দ্বিমত থাকতে পারে টার্নিং পয়েন্ট নিয়েও। কিন্তু দু’রানে হারের মধ্যেও যে অপ্রত্যাশিত অক্সিজেন নাইটরা যোগাড় করে নিল তা নিঃসন্দেহে পরের মরশুমে বাড়তি উদ্যম যোগাবে এসআরকে-র দলকে।

     

বিজ্ঞাপন

Goto Top