একদিনের বিশ্বকাপের মতোই টি-২০ বিশ্বকাপেও ভারতের বিরুদ্ধে জিততে ব্যর্থ পাকিস্তান
সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়
বেজে উঠেছে টি-২০ বিশ্বকাপের দামামা। আজই শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতার মূলপর্বে আগামীকাল মুখোমুখি দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান। এককালে ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশেজের মতো গুরুত্ব পাওয়া এই দুই দলের সম্মুখসমর বর্তমানে পাকিস্তানের ব্যর্থতার জন্য ক্রমশ ম্রিয়মান। কিন্তু দুই দেশের সমর্থকদের কাছে এর উন্মাদনা আদৌ কমেনি। আসুন একবার নজর বোলানো যাক রেকর্ডে।
টেস্ট (১৯৫১/৫২) বা একদিনের ম্যাচের (১৯৭৩/৭৪) মতো পুরোনো না হলেও ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে ভারত-পাকিস্তান প্রতিদ্বন্দ্বিতা খুব নতুন নয়। ১৪ বছর বয়স হয়ে গেল তার। কিন্তু ঠিক যেভাবে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের বিশ্বকাপে পাকিস্তান সাত ম্যাচের একটিতেও জিততে পারেনি তেমনই টি-২০ খেলায় সার্বিকভাবেই তারা ভারতের বিপক্ষে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রথমবার ২০০৭ সালে ডারবানে বিশ্বকাপের লিগ পর্যায়ে মুখোমুখি হয় এই দুই দল। ম্যাচটি টাই হলেও ভারত বোল-আউটে জয়ী হয়। ভারতের রবিন উত্থাপ্পা ৩৯ বলে ৫০ করেছিলেন। মিসবা উল হকের সংগ্রহ ছিল ৩৫ বলে ৫৩। ম্যাচের নায়ক ছিলেন মহম্মদ আসিফ। ১৮ রানে চার উইকেট নিয়েছিলেন এই পাক পেসার । ভারতের ইরফান পাঠান ২০ রানে দু'উইকেট নিয়েছিলেন। দুই দলই নির্ধারিত ওভার শেষে ১৪৪ রান করেছিল।
সেবারের ফাইনালেই দুই দল মুখোমুখি হয় দ্বিতীয়বার। গম্ভীরের ৫৪ বলে ৭৫ ও রোহিত শর্মার ১৬ বলে অপরাজিত ৩০ ভারতকে ৭ উইকেটে ১৫৭ তুলতে সাহায্য করেছিল। উমর গুল নিয়েছিলেন তিন উইকেট। জবাবে দ্রুত গতিতে উইকেট হারালেও মিসবাহ উল হক (৩৮ বলে ৪৩) দলের পতন রোধ করে দলকে প্রায় জয়ের সামনে এনে ফেলেছিলেন। কিন্তু ম্যাচের শেষ ওভারে যখন জয়ের জন্য ছ'রান প্রয়োজন ছিল তখন যোগিন্দর শর্মাকে স্কুপ করে মারতে গিয়ে শ্রীসন্থের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন মিসবা।ভারত উদ্বোধনী টি-২০ বিশ্বকাপ জিতে নেয় পাঁচ রানে। আর পি সিং ২৬ রানে তিন উইকেট নেন। ম্যাচের সেরা ইরফান পাঠান ১৬ রানে তিন উইকেট পান। যোগিন্দর শর্মা ২০ রানে ২ উইকেট নেন।
২০১২ সালের টি-২০ বিশ্বকাপে ভারত শ্রীলঙ্কার প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে পাকিস্তান কে আট উইকেটে হারায়। লক্ষ্মীপতি বালাজি (৩/২২), রবিচন্দ্রন অশ্বিন (২/১৬) ও হরভজন সিং (২/১৬) পাকিস্তানকে ১২৮ রানের বেশি তুলতেই দেননি। জবাবে ১৭ ওভারেই দু'উইকেটে ১২৯ তুলে নিয়ে ভারত জিতে যায়। বিরাট কোহলি ৬১ বলে ৭৮ রানে অপরাজিত ছিলেন যা ভারত-পাকিস্তান টি-২০ ম্যাচে এখনও ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ।
কিছুদিন বাদে পাকিস্তান ভারতে এসে দু'টি টি-২০ ম্যাচ খেলে। প্রথমটিতে দু' বল বাকি থাকতে ৫ উইকেটে জয়ী হয়। ভারত প্রথম উইকেটে ৭৭ রান তুললেও শেষ ৫৬ বলে ৫৬ রান তুলতে ন'উইকেট হারায়। গম্ভীর ৪৩ ও রাহানে ৪২ করেন। উমর গুল ২১ রানে তিন উইকেট নেন। জবাবে ১২ রানে ৩ উইকেট হারিয়েও পাকিস্তান মূলত হাফিজের ৬১ ও শোয়েব মালিকের অপরাজিত ৫৭ রানের জন্য জিতে যায়। ভুবনেশ্বর কুমার মাত্র ন'রানে ৩ উইকেট নেন।
এই একটিমাত্র টি-২০ ম্যাচই পাকিস্তান জিতেছে ভারতের বিপক্ষে। খেলা হয়েছিল ব্যাঙ্গালোরে।
ওই সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারত যুবরাজ সিং-এর ৩৬ বলে ৭২ রানের দৌলতে ১৯২/৫ তোলে। উমর গুল এবারেও ৩৭ রানে চার উইকেট পান। এরপর হাফিজের অনবদ্য অপরাজিত ৫৫ রানও পাকিস্তানকে ১১ রানে পরাজয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি। অশোক দিন্দা ৩৬ রানে তিন উইকেট নেন।
২০১৪ বিশ্বকাপে মীরপুরে পাকিস্তান সাত উইকেটে তোলে ১৩০। আকমল ৩৩ করেন, অমিত মিশ্র ২২ রানে দু'উইকেট নেন। জবাবে ১৮.১ ওভারে ৩ উইকেটে ১৩১ তুলে ভারত জিতে যায়। রায়না অপরাজিত ৩৫ ও কোহলি অপরাজিত ৩৬ করেন।
২০১৬ সালে এশিয়া কাপেও ভারতের হাতে পাকিস্তান নির্মমভাবে পরাজিত হয়। এবারও মীরপুরে মাত্র ৮৩ রানে পাকিস্তান শেষ হয়ে যায়। হার্দিক পাণ্ড্য আট রানে তিন উইকেট নেন। জাদেজা দু'টি উইকেট পান। ভারত ১৫.৩ ওভারে পাঁচ উইকেট হারিয়ে প্রয়োজনীয় রান তুলে নেয়। কোহলি অপরাজিত ছিলেন ৪৯ রানে। আমির ১৮ রানে তিন উইকেট নেন।
সর্বশেষবার ২০১৬ টি-২০ বিশ্বকাপে ইডেনে ম্যাচে ভারত ছ'উইকেটে পাকিস্তানকে হারায়। পাকিস্তান পাঁচ উইকেটে ১১৮ রান করেছিল। জবাবে ১৫.৪ ওভারে চার উইকেটে ভারত ১১৯ তুলে নেয়। কোহলি ফের ৫৫ রান করেন।
আইসিসি আয়োজিত প্রতিযোগিতায় টি-২০ ক্রিকেটে ভারত পাঁচ বারের চারবার সরাসরি ও একবার বোল আউটে পাকিস্তানকে হারিয়েছে। বিগত ন'বছরে কোনো টি-২০ ম্যাচে পাকিস্তান ভারতকে হারাতে পারেনি।
দলগত সর্বোচ্চ (১৯২/৫) ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ (৭৮-কোহলি) ও সর্বমোট রানের ব্যক্তিগত রেকর্ড (২৫৪-কোহলি) ভারতের দখলে। শুধু সর্বোচ্চ উইকেট (১১-উমর গুল) পাকিস্তানের হাতে।
এমন ইতিহাস পাল্টাতেই বদ্ধপরিকর পাকিস্তান। যদিও সেটা বেশ কঠিন বলেই মনে হচ্ছে।