কাজে লাগল না ধোনির লড়াই
সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়
প্রবল উত্তেজনার মধ্যে শুরু হল আইপিএল। কলকাতা নাইট রাইডার্স বনাম চেন্নাই সুপার কিংসের মধ্যে ম্যাচ দিয়ে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে। টসে জিতে কলকাতা বোলিং-এর সিদ্ধান্ত নেয়।
ডেভন কনওয়ে আর ঋতুরাজ গায়কোয়াড় ব্যাট করতে নামলে ইনিংসের চতুর্থ বলেই উমেশ যাদবের বলে নীতিশ রানার হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ঋতুরাজ। তখন দলের রান দুই, ব্যক্তিগত শূন্য। এরপর উথাপ্পা নেমে কিছু আক্রমণাত্মক শট খেললেও (দু'টি ছয়) কনওয়ে একদম সুবিধা করতে পারছিলেন না। পঞ্চম ওভারের প্রথম বলেই দলের ২৮ রানের মাথায় মাত্র তিন রান করে (আট বলে) আবার উমেশের বলেই শ্রেয়স আইয়ারের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন।
এরপর উথাপ্পা (২৮) ও রায়ুডু (১৫) দলকে যখন স্থিতিশীল অবস্থায় আনছেন তখনই বরুণ চক্রবর্তীর বলে উথাপ্পাকে স্টাম্প করেন শেল্ডন জ্যাকসন। চেন্নাই তখন ৪৯/৩। মাত্র পাঁচ বলের ব্যবধানে রান আউট হন রায়ুডু। চেন্নাইয়ের রান তখন ৫২/৪। এরপর দলনায়ক জাদেজা ও শিবম দুবে কিছুক্ষণ ক্রিজে কাটানোর পরে রাসেলের বলে নারাইনের হাতে ক্যাচ দিয়ে শিবম (৩) ফিরলেন যখন তখন অর্ধেক চেন্নাই মাত্র ৬১ রানে শেষ। নামলেন ধোনি।
কিন্তু ধোনি ও জাদেজাকে প্রায় অকেজো করে দেন কেকেআরের বোলাররা। ১০.৫ ওভারে ৬১/৫ থেকে এক সময় ১৭ ওভারে ৮৪/৫ হয়ে যায় সিএসকে। একসময় মনে হচ্ছিল, ১০০ রানের গণ্ডি টপকানো খুব কঠিন হবে তাদের। এমন সময় অভিজ্ঞ ধোনির পুনরায় আগমন ঘটে। প্রথমেই রাসেলের এক ওভারে তিনটি চার মারেন ধোনি। ওই ওভারে ওঠে ১৪। এর পরের ওভারে শিবম মাভি(৪-০-৩৫-০)-র এক ওভারে ১৫ ওঠে। শেষ ওভারে আবার রাসেল। এবার ওঠে ১৮। শেষ বলে জাদেজা ছয় মারেন।
ফলে চেন্নাই ১৩১/৫ তোলে। ষষ্ঠ উইকেটে ধোনি ও জাদেজা ৫৬ বলে ৭০ রান যোগ করেন। জাদেজা ২৮ বলে ২৬। তিনি এক সময় ২৭ বলে ২০ করে অপরাজিত ছিলেন একটাও চার না মেরে। অন্যদিকে ধোনি ৩৮ বলে ৫০ করেন ৭টি চার ও ১টি ছয় মেরে। রাসেলের বোলিং এক সময় ছিল ২-০-৬-১। সেই বোলিং দাঁড়ায় ৪-০-৩৮-১। তবে সুনীল নারাইন চার ওভারে মাত্র ১৫ রান দেন। উমেশ যাদব ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে দু'উইকেট নেন। ধোনির এটি আইপিএলে ২৪ তম অর্ধশতাধিক রানের ইনিংস।
কেকেআর জবাবে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু কর। বেঙ্কটেশ আইয়ার ও রাহানে প্রথম ছ'ওভারে অবিচ্ছিন্ন থেকে ৪৩ রান তুলে ফেলেন। কিন্তু এরপরেই আইয়ার ডোয়েন ব্রাভোর বলে ধোনির হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ১৬ বলে ১৬ করে। ৬.২ ওভারে কেকেআর ৪৩/১। নামলেন নীতীশ রানা। বাকি চার বলে মাত্র এক রান হল।
কিন্তু এরপরেই শিবম দুবের ওভারে দুটো চার এল, একটা বাই চার হল। মিচেল স্যান্টনার বল করতে এলে (তাঁর দ্বিতীয়, দলের নবম) প্রথম বলেই ছয় মেরে বসলেন রানা। সেই ওভারে ১১ রান উঠল।
দশম ওভারে ব্রাভো ফিরলেন, ওভারের দ্বিতীয় বলে চার মারলেন তাঁকে রাহানে। কিন্তু শেষ বলে রানা তাঁকে লেংথ বলে পুল করতে গিয়ে আউট হয় গেলেন। মরিয়া হয়ে চালিয়েছিলেন। ক্যাচ নিলেন রায়ুডু। রানা করলেন ১৭ বলে ২১। তারমধ্যে ব্রাভোর ন'বলে করেন দু'রান। দশ ওভারের শেষে কেকেআর ৭৬/২। নামলেন অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার।
এর খানিক পরেই স্যান্টনারের বল মারতে গিয়ে জাদেজার হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট রাহানে (৩৪ বলে ৪৪,৬×৪,১×৬)। এবার কেকেআর সমস্যায় পড়ল। দলের রান ৮৭/৩ (১১.৪)। নামলেন স্যাম বিলিংস।
শেষ আট ওভারে দরকার মাত্র ৪২। এই বিলিংস ২০১৮ সালে চেন্নাইকে কলকাতার বিরুদ্ধে জিতিয়েছিলেন। দ্বিতীয় স্ট্র্যাটেজিক টাইম আউটের সময় কলকাতা ১৪ ওভারে ৯৮/৩।
বিলিংস ও আইয়ার কেকেআর-কে ধীরেসুস্থে যখন জয়ের কাছাকাছি নিয়ে গেছেন তখন বিলিংস তুষার দেশপান্ডের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ব্রাভোর বলে (২২ বলে ২৫, ১×৪,১×৬)। কেকেআর ১২৩/৪। জিততে আর ন'রান বাকি। বাকি ১৫ বল। ব্রাভো এই উইকেট নিয়ে মালিঙ্গার আইপিএলে সর্বাধিক ১৭০ উইকেট পাওয়ার রেকর্ড স্পর্শ করলেন। নামলেন শেলডন জ্যাকসন।
পরের ওভারের তৃতীয় বলে চার মেরে অধিনায়ক আইয়ার প্রথম ম্যাচেই কলকাতা নাইট রাইডার্সকে ছ'উইকেটে জয় এনে দিলেন। ১৮.৩ ওভারে ১৩৩/৪ তুলে নিল কেকেআর । আইয়ার ১৯ বলে ২০ করে অপরাজিত থাকলেন। ব্রাভোর ২০ রানে তিন উইকেট কোনও কাজে এল না।