পুরোনো দলের বিরুদ্ধে চার উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা প্রাক্তন নাইট
ময়ূখ লাহিড়ী
সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলিতেছে। কলকাতা নাইট রাইডার্সে খেলে তাঁরা সেভাবে নজর কাড়তে পারেননি। কিন্তু অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজিতে গিয়েই নিজেদের জাত চিনিয়েছেন এবং অবধারিতভাবে জ্বলে উঠেছেন নাইটদের বিরুদ্ধেই। যেভাবে একসময় কেকেআরের নেমেসিস হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ক্রিস গেইল নামের এক জামাইকান। যে তালিকায় রয়েছেন সঞ্জু স্যামসন নামের এক দুরন্ত প্রতিভা। যে তালিকায় রয়েছেন দীনেশ কার্তিক নামের এক বহু যুদ্ধের ঘোড়া। সেই তালিকায় এবার নবতম সংযোজন কুলদীপ যাদব। গত দু’মরশুমে বেগুনি জার্সি গায়ে বেশিরভাগ সময়ই কাটাতে হয়েছে রিজার্ভ বেঞ্চে। কিন্তু দিল্লি ক্যাপিটালসে যোগ দিয়েই নেমে পড়েছেন বেগুনি টুপির দৌড়ে। আর রবিবারের ব্রেবোর্নে সেই রাস্তাতেই কয়েক পা এগিয়ে গেলেন কুলদীপ। নিজের পুরোনো দলের বিরুদ্ধে ৩৫ রান খরচ করে তুলে নিলেন চারটি মূল্যবান উইকেট। নিয়ে গেলেন ম্যাচসেরার পুরস্কারও। যে পারফরম্যান্সে ভর করে পয়েন্ট টেবলের ‘ফার্স্ট বয়’ কেকেআর-কে ৪৪ রানে হারাল দিল্লি ক্যাপিটালস।
অপমানের প্রতিশোধ নিতে পুরোনো দলের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠবে শ্রেয়স আইয়ারের ব্যাট; চেনা ব্রেবোর্নে স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছোটাবেন রাহানে – নাইট সমর্থকরা এমন আশাতেই বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু কোথায় কী! শার্দূল ঠাকুর, ওয়াশিংটন সুন্দররা যখন নাইটদের বোলিং নিয়ে ছেলেখেলা করে ২০ বলে ৪৯ রান তুলছেন, বিপক্ষের দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছেন ২১৬ রানের পাহাড়প্রমাণ লক্ষ্য, তখন সেই পিচেই আট রান করতে ১৪ বল নিয়ে নিলেন রাহানে। শ্রেয়স (৩৩ বলে ৫৪) ব্যক্তিগত লড়াই করেই ফিরে গেলেন ডাগ-আউটে; দলের লড়াই গৌণ হয়ে গেল। মিডল অর্ডারের ব্যক্তিনির্ভরতা যে চাপ তৈরি করল তাতে মনে হল, ২১৬ কেন, ১৮০ রান লক্ষ্য হলেও একইভাবে খাবি খেত নাইটদের ব্যাটিং। প্রত্যেক দিন রাসেল বা কামিন্স জেতাবেন না, নাইটদের সংসারে দীর্ঘদিন কাটানো নীতীশ রানাদেরও দায়িত্ব নিতে হবে। যে দায়িত্ব ২০ বলে ৩০ রানেই ফুরিয়ে যায় না। নিট ফল, ১৭১ রানেই শেষ নাইটদের যাবতীয় প্রতিরোধ। যার জেরে আইপিএল ২০২২-এর প্রথম রাউন্ডে ব্রেন্ডন ম্যাকালামের বিরুদ্ধে ট্রান্স-তাসমান দ্বৈরথ জিতে নিলেন রিকি পন্টিং।
ব্যাটিং পিচে নজর কাড়লেন পৃথ্বী শ’-ও। উমেশ যাদবের আগুনে গতির বল তাঁর হেলমেটে লেগে বাউন্ডারিতে পৌঁছে গেল। কিন্তু তাতে একটুও চিড় ধরেনি পৃথ্বীর মনোবল বা মনঃসংযোগে। আগের ম্যাচে ৩৪ বলে ৬১ করার পর এদিনও খেলে গেলেন ২৯ বলে ৫১ রানের ঝকঝকে ইনিংস। যে মেজাজে ব্যাট করলেন তাতে ডেভিড ওয়ার্নারের মতো আগ্রাসী ব্যাটসম্যানকেও ম্রিয়মান লাগল। মিডল ওভারে সুনীল নারাইন স্বমূর্তি না ধরলে এদিনই আইপিএলে সর্বোচ্চ রান তোলার নজির গড়ে ফেলতে পারত দিল্লি।
সবমিলিয়ে শুক্রবার সানরাইজার্স হায়দরাবাদের মুখোমুখি হওয়ার আগে হেডস্যার ম্যাকালামের টেবলে একরাশ হোমওয়ার্কের খাতা।