৪১ বারের রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন মুম্বইকে ৬ উইকেটে হারিয়ে প্রথম বার রঞ্জি ট্রফি জিতল মধ্যপ্রদেশ। তা নিয়ে লিখলেন সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়।
রঞ্জি ট্রফির ইতিহাসে প্রথমবারের জন্য মধ্যপ্রদেশ বিজয়ী হওয়ার সন্মান লাভ করলো। আজ ব্যাঙ্গালোরে রঞ্জি ফাইনালের পঞ্চম দিনে তাঁরা সরাসরি মুম্বাইকে হারিয়ে এই অনবদ্য সন্মান লাভের সুযোগ পেলো। এর ২৩ বছর আগে এই রকম এক ফাইনালে কর্ণাটকের বিরুদ্ধে শেষ পর্বে ৪৫ মিনিটের মধ্যে ৬ উইকেট হারিয়ে তাঁরা অল্পের জন্য ট্রফি হাতছাড়া করে। এই ঘটনা নিশ্চিত ভাবে এইবার তাঁরা পুনরায় যাতে না ঘটে তার জন্য প্রস্তুত হয়ে এসেছিল। নক আউট পর্বে ভেঙ্কটেশ আইয়ার এবং আবেশ খান দলের সঙ্গে না থাকা সত্ত্বেও তাঁদের অসুবিধা হয় নি। কোয়ার্টার ফাইনালে মধ্য প্রদেশ হারায় পাঞ্জাবকে। সেমিফাইনালে বাংলা ও ফাইনালে মুম্বইকে সরাসরি হারিয়ে এই অসামান্য সাফল্য অর্জন করে তাঁরা।
তৃতীয় দিনের শেষে ৪৭৫/৬ নিয়ে চতুর্থ দিন খেলতে নেমে রজত পতিদারের শতরান সহ (১২২) ৫৩৬ রান তোলে। সারাংশ জৈন শেষের দিকে পিটিয়ে ৫৭ করেন। শামস মুলানী আবার ৫ উইকেট নেন (১৭৩ রানে)। ১৬২ রানে প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে পড়ে একপ্রকার ভগ্ন-মনোরথে মুম্বই দ্বিতীয় ইনিংসে দাঁড়াতেই পারেনি। শুভেদ পার্কার ৫১, সরফরাজ খান ৪৫ ও অধিনায়ক পৃথ্বী শাহ ৪৪ রান করলে মুম্বাই মাত্র ২৬৯ রান তোলে। মধ্য প্রদেশ দলের কুমার কার্তিকেয় ৯৮ রানে ৪উইকেট পান। গৌরব যাদব ও পার্থ সাহানি দুটি উইকেট পান। পঞ্চম দিনে লাঞ্চের পর জয়ের জন্য ১০৮ রান দরকার ছিলো মধ্য প্রদেশের। তাঁরা ২৯.৫ ওভারে ৪ উইকেট খুইয়ে ১০৮ রান তুলে নেয়। শামস মুলানি আবার ৩ উইকেট নেন।
এই জয়ের পর উচ্ছসিত ও তৃপ্ত ভঙ্গিতে মধ্য প্রদেশের দলনায়ক আদিত্য শ্রীবাস্তব বলেন যে ২০১৩ সাল থেকে এক সঙ্গে খেলার ফল এই জয়। নিশ্চিত ভাবে কিছু সিনিয়র এবং নতুন খেলোয়াড়ের অসামান্য সংমিশ্রণ এই জয়ের পিছনে অবদান রেখেছেন। দলের কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত এই জয়ে উচ্ছসিত। জেতার পর আবেগ চেপে রাখতে পারেন নি। তিনি জানান ২৩ বছর আগে যেভাবে ফাইনালে মধ্যপ্রদেশকে তুলেও অধিনায়ক হিসেবে জিতে মাঠ ছাড়তে পারেননি আজ সেই অভাব পূর্ণ হলো। উল্লেখ করা যায় সেই ম্যাচ ছিল তাঁর জীবনের শেষ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ।
এদিকে মুম্বাই দলের অধিনায়ক পৃথ্বী শাহ রানার্স হয়েও দলকে অভিনন্দন বলেছেন আগামী দিনে দল অনেক উন্নতি করবে। বিশেষ করে সরফরাজ খান ও আরমান জাফরের কথা তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে ৭০ বছর পর মধ্য ভারত থেকে রঞ্জি জয়ী দল বেরোনয় খুবই উচ্ছ্বসিত মধ্য প্রদেশের ক্রিকেট মহল। শেষ বার রঞ্জি জিতেছিল হোলকার বাংলা কে ১৯৫২/৫৩ হারিয়ে। এরপরের মরশুমে মাদ্রাজের বিরূদ্ধে ফাইনালে হেরে যায় হোলকার। সেই শেষ। এরপর মধ্য প্রদেশের আগমন। সেই হোলকার দলের অধিনায়ক ও কিংবদন্তি ক্রিকেটার মুস্তাক আলির পুত্র গুলরেজ আলি আজ সন্ধ্যায় আমাদের দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন যে বাংলার বিরুদ্ধে জয়ের সময় তিনি মাঠে ছিলেন তাঁর পিতার সঙ্গে। খেলা শেষ হওয়ার ৪৫মিনিট আগে যখন মাত্র এক উইকেট বাকি হোলকরের তখন মুস্তাক হতাশ হয়ে মাঠ ছেড়ে চলে গেলেও তিনি যাননি। মাঠে বসে ঐতিহাসিক লড়াই প্রত্যক্ষ করেন। এরপর কোচ হিসেবে ১৯৯৮/৯৯ মরশুমে উইলস ফাইনালে মধ্য প্রদেশ যখন ইডেনে বাংলাকে হারায় তখন তিনি মধ্য প্রদেশের ম্যানেজার এবং তাঁর পুত্র আব্বাস আলি দলের সদস্য। সেই মরসুমেই ফাইনালে কর্ণাটকের কাছে হারের সময়েও তিনি ম্যানেজার ছিলেন। তিনি বর্তমান কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত এর ভূয়সী প্রশংসা করেন। উল্লেখ করা যায় মধ্য কোনোদিন মুম্বইকে সরাসরি হারায়নি আগের ১৪ বারের মধ্যে দুবার লিড নেওয়া ছাড়া। শেষবার হোলকার যখন বোম্বেকে হারায় তখন দেশ স্বাধীন হয়নি। হোলকারের অধিনায়ক ছিলেন সি কে নাইডু। দলে মুস্তাক ছিলেন।
মধ্য প্রদেশের নির্বাচক অনুপ সবনিস অত্যন্ত খুশি। কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত এর সঙ্গে ক্লাব ও রঞ্জি একসঙ্গে খেলেছেন বলে আরও বেশি খুশি। দেশের এক নম্বর কোচ হিসেবে তিনি আখ্যা দিয়েছেন তাঁকে। উল্লেখ করা যাক তিনি বোম্বে ও মধ্য প্রদেশ দুই দলের হয়েই রঞ্জি খেলেন। ঐতিহাসিক বোম্বে হরিয়ানা ফাইনালে তাঁর চোটের জন্য দলে সুযোগ হয় আবে কুরুভিল্লার।