নজর কাড়লেন রিঙ্কু, নীতীশ, অনুকূলরা
ময়ূখ লাহিড়ী
‘দেওয়ালে পিঠ ঠেকার আগে দেওয়াল জুড়ে লেখ’। বাংলার রাজনৈতিক আঙিনায় সুপরিচিত শব্দবন্ধ। বাংলার ক্রিকেটার-বিহীন কলকাতা নাইট রাইডার্স সেই শব্দবন্ধের সঙ্গে পরিচিত কি না জানা নেই। তবে টানা পাঁচ ম্যাচ হারের পর সোমবারের ওয়াংখেড়েতে কিং খানের দল যেভাবে ঘুরে দাঁড়াল তাতে এই শব্দবন্ধই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি মানানসই। প্লে-অফের অন্যতম দাবিদার রাজস্থান রয়্যালসকে সাত উইকেটে হারিয়ে ইডেনে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখল কেকেআর। যার নেপথ্যে থাকল উমেশ যাদব, অনুকূল রায়, রিঙ্কু সিং-এর মতো অখ্যাত শহর থেকে উঠে আসা ক্রিকেটারদের কার্যকরী অবদান।
রিঙ্কু সিং-এর কথাই ধরা যাক। আলিগড়ের টেনিস বল ক্রিকেট থেকে উঠে আসা প্রতিভা। এই নিয়ে পঞ্চম মরশুম চলছে কেকেআরে। কিন্তু দীনেশ কার্তিক, ইয়ন মর্গ্যানদের জমানায় সেভাবে সুযোগই পাননি। হাতে গোনা কয়েকটি ম্যাচে সেভাবে জাত চেনাতে পারেননি। মূল কাজ ছিল পরিবর্ত ফিল্ডার হিসাবে মাঠে নামা। এবারও আইপিএলের প্রথমার্ধে তাঁকে প্রথম একাদশে রাখেননি শ্রেয়স, ম্যাকালামরা। কিন্তু ক্রমাগত মুখ থুবড়ে পড়তে থাকা মিডল অর্ডারে পরীক্ষামূলকভাবে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। ২৮ বলে ৩৫ রান করে নজরে পড়েছিলেন। আর সোমবার ওয়াংখেড়ের চ্যালেঞ্জিং ২২ গজে স্ট্রোকের আতসবাজি ছোটালেন ২৪ বলে ৪৩ রানের অপরাজিত ইনিংসে। ৩৮ বলে ৬৬ রানের জুটি বাঁধলেন নীতীশ রানার সঙ্গে। সেই নীতীশ যিনি রিঙ্কুর সঙ্গে একই মরশুমে নাইট শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন। সেই নীতীশ যাঁর ব্যাটিং পজিশন হাইপারটেনশনের রুগির রক্তচাপের মতোই ওঠা-নামা করেছে। কখনও ওপেনিং, কখনও চার, কখনও পাঁচ, কখনও বা ছ’নম্বরে। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে নাইট শিবিরের দাবি কখনও বদলায়নি। উইকেটের একদিক ধরে রাখ। কিন্তু চালিয়ে খেল। সেই দাবি পূরণে এদিন পুরোদস্তুর সফল দিল্লির বাঁ-হাতি। লং-অন আর ডিপ মিডউইকেটের মাঝকান দিয়ে অশ্বিনকে গ্যালারিতে ফেলে দিলেন। আবার তার পরের বলেই শর্ট থার্ড ম্যান এবং ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট থাকা সত্বেও রিভার্স সুইপে বল বাউন্ডারি পার করে দিলেন। শেষপর্যন্ত অপরাজিত থাকলেন ৩৭ বলে ৪৮ রান করে।। ৩২ বলে ৩৪ রানের স্থিতধী ইনিংসে দলকে নির্ভরতা যোগালেন শ্রেয়সও। যার জেরে এক ম্যাচেই ভেন্টিলেশন থেকে জেনারেল ওয়ার্ডে চলে এল রক্তাল্পতায় ভুগতে থাকা মিডল অর্ডার।
তবে ব্যাটসম্যানদের এমনভাবে পারফর্ম করা মন্দ কিন্তু গড়ে দিয়েছিলেন বোলাররা। চলতি আইপিএলে ধারাবাহিকভাবে ভালো বল করছেন উমেশ যাদব। এদিনও হতাশ করলেন না বিদর্ভের পেসার। উইকেটে পেসারদের জন্য কোনও সাহায্যই মজুত নেই। কিন্তু তার মধ্যেও স্রেফ দুর্দান্ত লাইন-লেংথ বজায় রেখে ব্যাটসম্যানদের বোতলবন্দি করে রাখলেন উমেশ। নিট ফল, চার ওভারে ২৪ রান খরচ করে দেবদত্ত পাড়িক্কলের উইকেট। পাওয়ার প্লে-র মধ্যেও উইকেট মেডেন নিলেন।
‘সমস্তিপুরের রবীন্দ্র জাদেজা’ নামে পরিচিত অনুকূল ঠাকুর। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলেছিলেন পৃথ্বী শ’-এর অধিনায়কত্বে। ছিলেন প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী। তারপর পৃথ্বী মুম্বই লবির স্নেহধন্য হওয়ায় নিজের আন্তর্জাতিক অভ্যুদয় ঘটিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু ঝাড়খন্ডের অনুকূলের সেই আনুকূল্য জোটেনি। নতুন বল হাতে তাঁর পারফরম্যান্স নজর কাড়ল সুনীল গাভাসকরেরও। চার ওভারে ২৮ রান দিয়ে নিলেন করুণ নায়ারের উইকেট। স্পেলের শেষ বলে রিয়ান পরাগ তাঁকে সাইটস্ক্রিনে ফেলে না দিলে অনুকূলের বোলিং বিশ্লেষণ রীতিমতো ভালো দেখাত।
তবে জয়ের পিছনে বড় অবদান থাকছে নাইটদের স্ট্র্যাটেজিরও। জস বাটলার চলতি আইপিএলে বিপক্ষের ত্রাস হয়ে দেখা দিচ্ছেন। কিন্তু এদিনের ম্যাচে তাঁকে পরিকল্পনামাফিক ডাগ-আউটে ফেরাল কেকেআর। সঞ্জু স্যামসন ৫৪ রান করলেন ঠিকই। কিন্তু চেনা মেজাজে দেখা যায়নি তাঁকে। রাজস্থান ইনিংসের শেষদিকে শিমরন হেটমায়ার ১৩ বলে অপরাজিত ২৭ রান না করলে দেড়শোর গণ্ডিও পেরোত না রাজস্থান। বোলাররা তাদের ১৫২/৫-এ আটকে রেখে যে জমি তৈরি করে দিয়েছিলেন সেটাই কাজে লাগালেন নীতীশ, রিঙ্কুরা।
১০ ম্যাচে আট পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবলে আপাতত সাত নম্বরে নাইটরা। প্লে-অফের টিকিট পাকা করতে হলে বাকি চার ম্যাচেই জয় চাই তাদের।