ব্যাটে-বলে লড়লেন শুরু রাসেল-নারাইন
ময়ূখ লাহিড়ী
অশনিসঙ্কেত ছিল দিনের শুরুতেই। যখন কাফ মাসলের চোটে ম্যাচ থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন দলের মূল স্ট্রাইক বোলার উমেশ যাদব। গত দু’ম্যাচেই নাইটদের প্রথম ‘ব্রেক থ্রু’ জুগিয়েছিলেন বিদর্ভের পেসার। কিন্তু লখনউ সুপার জায়ান্টস ম্যাচেও প্রথম ওভারেই উইকেট হাসিল করেছিল নাইটরা। নেপথ্যে অধিনায়কের দুর্দান্ত ফিল্ডিং। বিপক্ষ অধিনায়ক কে এল রাহুল কোনও বল খেলার আগেই প্যাভিলিয়নে। যে কোনও আন্ডারডগ দলই এই পরিস্থিতিতে বাড়তি অ্যাড্রিনালিন ঝরাবে। কিন্তু সেখানেই ভুল করে বসলেন শিবম মাভি, হর্ষিত রানা, অনুকূল রায়রা। তাঁদের আদ্যন্ত নিয়ন্ত্রণহীন বোলিং-এর ফায়দা তুলে গোয়েঙ্কাদের দলকে রীতিমতো হাইওয়েতে তুলে দিলেন কুইন্টন ডি কক (২৯ বলে ৫০), দীপক হুডারা (২৭ বলে ৪১)। বলা হয়, টি-২০ ক্রিকেটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ইনিংসের ১৯ তম ওভার। আর মাভির সেই ওভারেই ম্যাচ কার্যত নিজেদের দিকে টেনে নিয়ে গেল লখনউ। ওভারের ছ’বলেই ছক্কা হতে পারত। তা যে শেষমেশ হল না তার পিছনে মাভির চওড়া কপাল। প্রথম তিন বলে ছক্কা হাঁকানোর পর চতুর্থ বলে বাউন্ডারিতে ধরা পড়লেন মার্কাস স্টয়নিস (১৪ বলে ২৮)। আর শেষ দু’বলে জোড়া ছক্কা এল জেসন হোল্ডারের ব্যাট থেকে।
বিবর্ণ, ছন্দহীন বোলিং আক্রমণের মধ্যে কিছুটা সমীহ আদায় করলেন শুধু আন্দ্রে রাসেল আর সুনীল নারাইন। তিন ওভারে ২২ রান খরচ করে তিন উইকেট নিলেন জামাইকার রাসেল। চার ওভার হাত ঘুরিয়ে কুড়ি রান দিয়ে এক ত্রিনিদাদের নারাইন। টিম সাউদি চার ওভারে ২৮ রান দিয়ে এক উইকেট নিলেন ঠিকই। কিন্তু তাঁকে কোনও সময়ই বিপজ্জনক লাগেনি।
উমেশ-হীন বোলিংকে যতই কুৎসিত লাগুক, স্কোরবোর্ডে ১৭৬/৭-এর বেশি তুলতে পারেনি লখনউ। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের জঘন্য পারফরম্যান্সের কোনও ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বাবা ইন্দ্রজিৎ এখনও বুঝে উঠতে পারলেন না যে আইপিএল আর তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগ এক জিনিস নয়। কদাকার ফুটওয়ার্ক আর হোমওয়ার্কের চূড়ান্ত অভাবই তাঁকে ফেরাল শূন্য রানে। শ্রেয়সের আউট হওয়ার ধরনও একইরকম কুৎসিত। নিজেকে আপাদমস্তক বর্ম দিয়ে মুড়ে ফেলার পরেও দুষ্মন্ত চামিরার গতি আর বাউন্সের সামনে যেভাবে নাজেহাল হয়ে আউট হলেন তাতে মুম্বই ক্রিকেটের ‘খারুশ’ মানসিকতার লেশমাত্র নেই। অ্যারন ফিঞ্চ ইদানিং ম্যাচ পরিস্থিতিকেই ‘নেট’ ভেবে ফেলেছেন। দৃষ্টিকটূভাবে ফিরলেন আপার কাট করতে গিয়ে। আর নীতীশ রানা কী শট খেলতে গিয়েছিলেন তার ব্যাখ্যা একমাত্র তিনিই দিতে পারবেন। নিট ফল, সাত ওভারের মধ্যে স্কোরবোর্ডে ২৫/৪। ম্যাচের ভাগ্য তখনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তবু নিয়তিকে খণ্ডাবার একটা চেষ্টা চালাচ্ছিলেন ড্রেরাস। কিন্তু তিনি ফিনিশার। ইনিংস গড়া তাঁর কাজ নয়। বলের পর ব্যাট হাতেও রাসেল (১৯ বলে ৪৫) আর নারাইনই (১২ বলে ২২) টানলেন দলকে। কিন্তু তারপরেও সাড়ে ১৪ ওভারেই শেষ ইনিংস। আইপিএলের ইতিহাসে ওভারের নিরিখে তৃতীয় সর্বনিম্ন। এর আগে ২০১৭ আইপিএলে ইডেনে ৯.৪ ওভারে অল আউট হয়ে গিয়েছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। সেই বছরই তৎকালীন দিল্লি ডেয়ারডেভিলসকে ১৩,৪ ওভারে দুমড়ে দিয়েছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। আর ২০১৫ আইপিএলে ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধে ১৩.৪ ওভারে শেষ হয়ে গিয়েছিল তৎকালীন কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। রেকর্ড বলছে, উদ্বোধনী আইপিএলে মুম্বইতে ৬৭ রানে অল আউট হয়ে গিয়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়রা। কিন্তু সেই দলও ১৫.২ ওভার ব্যাট করেছিল।
নাইটদের ৭৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে নিজেদের নেট রানরেট অনেকটাই চাঙ্গা করে নিল কে এল রাহুলের দল। যা আপাতত পয়েন্ট টেবলের এক নম্বরে পৌঁছে দিয়েছে তাদের। একইসঙ্গে, ১৬ পয়েন্ট তুলে প্লে-অফে নিজেদের জায়গা পাকা করে নিল লখনউ।