ব্রিসবেনে ৩ উইকেটে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিল ভারত।
স্পোর্টি ওয়ার্ল্ড নিউজ ডেস্কঐতিহাসিক সিরজ জয় ভারতের। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভাঙা দল নিয়েও টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিল টিম ইন্ডিয়া। ব্রিসবেনে ৩ উইকেটে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিল ভারত।
টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে হার, অধিনায়ক বিরাট কোহলির দেশে ফিরে আসা, পরের পর ক্রিকেটারের চোটে ক্রিকেটের দীর্ঘ ফরম্যাটের দ্বিতীয় ম্যাচ থেকেই কাবু ছিল ভারত। একে একে ছিটকে যান মহম্মদ সামি, লোকেশ রাহুল, রবীন্দ্র জাডেজা সহ দলের প্রথম একাদশের একের পর এক নির্ভরযোগ্য ক্রিকেটার। তৃতীয় টেস্টে প্রবল যন্ত্রণা স্বত্ত্বেও জাড্ডু এবং অশ্বিন লড়াই করে দলকে সিরিজে বাঁচিয়ে রাখলেও ব্রিসবেনের ভাগ্য নির্ধারণকারী ম্যাচে আর মাঠে নামতে পারেননি তাঁরা। শুধু এই দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারই নন, ব্রিসবেনে দলের বোলিং অ্যাটাকের মূল কাণ্ডারী জসপ্রীত বুমরা’কেও পায়নি ভারতীয় দল। দোসর হিসেবে ছিল ব্রিসবেন প্রশাসনের লাঘু করা নয়া কোয়ারেন্টাইন নিয়ম। পরিস্থিতির কারণে আসরে নামতে হয় বিসিসিসআই প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়’কে।
কার্যত মিনি হাসপাতালের রূপ নেওয়া শিবিরের হাতে থাকা তরুণ এবং অনভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের নিয়েই শেষ ম্যাচে দল নামায় টিম ইন্ডিয়া। পুরো শক্তির অস্ট্রেলিরা বিরুদ্ধে এই ভাঙাচোরা দলের কাছ থেকে প্রত্যাশা কিছুই ছিল না। বরং ভারতীয় ক্রিকেট অনুগামীদের একটাই ‘প্রার্থনা’ ছিল কোনও রকমে ম্যাচটা ড্র যেন করতে পারেননি মহম্মদ সিরাজ’রা।
প্রবাদ আছে ‘মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি’-ভারতের এই জয়টাও খানিকটা সেই রকম। যেখানে আদৌ এই অনভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা ম্যাচ বাঁচাতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় ছিল, সেখানে শেষ ম্যাচ জেতা অনেকটা বাঁশের কেল্লা থেকে কামান দাগানোর ব্যপার। ‘মিরাকেল’ বলে একটা কথা রয়েছে ইংরাজিতে। এই জয়’কে ব্যখা করতে হলে এই শব্দের ব্যবহার বিশেষ করে জরুরি।
অপর দিকে, ভারতীয়দের লড়াইকে খাটো না করেও বলা বাহুল্য অস্ট্রেলিয়া ইনিংসের শুরুতে আর একটু চাপ বাড়ালে হয়তো লজ্জ্বার হারের মুখ দেখতো হত না তাঁদের।
পঞ্চম দিনের জয়ের জন্য ভারতের প্রয়োজন ছিল ৩২৮ রান, হাতে ছিল ১০ উইকেট। ফলে জয়ের আশা নিয়েই মঙ্গলবার ভোরে টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রেখেছিলেন ক্রিকেটপ্রেমী মানুষজন। কিন্তু রোহিত শর্মা’কে ৭ রানে তুলে নিয়ে শুরুতেই ভারতকে ধাক্কা দিয়ে যান প্যাট কামিন্স।
রোহিতের উইকেটের বিশেষ প্রভাব যদিও পড়েনি। চেতেশ্বর পূজারা’কে সঙ্গে নিয়ে টেস্ট টেম্পারমেন্ট কাকে বলে দেখালেন শুভমন গিল। মাত্র ৯ রানের জন্য শতরান হাতছাড়া করলেও গিলের ৯১ রানের ইনিংস-ই তৈরি করে দিয়েছিল ভারতের জয়ের ফাউন্ডেশনটা। গিল প্যাভিলিয়নে ফেরার কিছু পরে ড্রিসিংরুমে হাঁটা লাগান তাঁর পরিবর্তে নামা অজিঙ্ক রাহানে। টি-২০-এর মেজাজে ২২ বলে ২৪ রান করেন দলনেতা। এর পরই আবাহওয়া ‘দফতর’-এর কোনও পূর্বাভাস না থাকালেও হঠাৎই হানা দেয় পন্থ ঝড়। যে সাইক্লোন সমস্ত পরিকল্পনা, ছক বানচাল করে দিন অজিদের। শুধু তাই নয়, অজিদের গড়িমা এবং অহঙ্কারের উপর এমনই থাবা বসালো যার ক্ষত মিটতে বহু বছর লাগবে।
৫৬ রানে পূজারা আউট হলেও বিশেষ প্রভাব পড়তে দেননি পন্থ ঝড়ের বাহক ঋষভ পন্থ। ৮৯ রানের অপরাজিত ইনিংসে শুধু ভারতকে ম্যাচ জেতানোই নয়, কেরিয়ারে প্রথম বারের জন্য কোনও টেস্টের সেরার পুরস্কারও নিজের নামে করেন এই বামহাতি ব্যাটসম্যান। ৯৭ ওভারে ৭ উইকেটের বিনিময়ে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান তুলে নেয় বিরাটহীন ভারত।
সিরিজের সেরা নির্বাচিত হওয়া প্যাট কামিন্স চারটি উইকেট নেন এই ইনিংসে। দু’টি উইকেট শিকার ন্যাথন লিয়ঁ’র। একটি উইকেট পান জস হ্যাজেলউড।
প্রথম টেস্টে সর্ব শক্তি নিয়ে খেললেও স্মিথ-ওয়ার্নারের অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দাঁত ফোটাতে পারেনি ভারত। অ্যাডিলেডে প্রথম ইনিংসে নিজেদের ২৪৪ রানের জবাবে অস্ট্রেলিয়াকে ১৯১ রানের মধ্যে গুটিয়ে দিয়েও সুবিধা তুলতে হয়েছিল ব্যাটিং লাইনআপে ধসের কারণে। কলঙ্কের ইতিহাস তৈরি করে ভারতীয় ইনিংস গুটিয়ে যায় ৩৬ রানে। আট উইকেটে প্রথম টেস্ট জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া।
বিরাট দেশে ফেরায় অজিঙ্ক রাহানের হাতে অধিনায়কত্বের ব্যটন আসতেই ভাগ্য ফেরে ভারতের। রাহানের ক্ষ্রুরধার মস্তিস্ক এবং দক্ষ অধিনায়কত্বে দাপটের সঙ্গে বক্সিং ডে টেস্টে প্রত্যবর্তন করে ভারত। প্রথম ইনিংস অস্ট্রেলিয়ার ১৯৫ রানের জবাবে ভারত ইনিংস শেষ করে ৩২৬ রানে। শতরান করেন অধিনায়ক রাহানে। চাপে পড়ে যাওয়া অস্ট্রেলিয়া গুটিয়ে যায় ২০০ রানে। মাত্র ১৫.৫ ওভারে ৭০ রান তুলে ম্যাচে সমতা ফিরিয়ে আনে ভারত।
তৃতীয় টেস্টে সিডনির মাটিতে ফের নরবড়ে দেখায় ভারতকে। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার ৩৩৮ রানের জবাবে রবি শাস্ত্রীর দলের ইনিংস শেষ হয়ে যায় ২৪৪ রানে। বড় রানের লিড নিয়ে ৩১২ রানে ইনিংস ঘোষণা করে অস্ট্রেলিয়া। জয়ের জন্য ভারতের সামনে লক্ষ্য রাখে ৪০৭ রানে। কার্যত হাত থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিল এই টেস্ট। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্রিসবেন টেস্টের নায়ক ঋষভ পন্থের চওড়া ব্যাটই ঢাল হয়ে দাঁড়ায় অস্ট্রেলীয় বোলারদের একের পর এক ছোড়া পেসের ছোবলের সামনে। ৯৭ রানে করেন পন্থ। শেষ পর্যন্ত অশ্বিন এবং হনুমা বিহারী দলকে সিরিজে টিকিয়ে রাখেন।