প্রথম দিনের শেষে ইংল্যান্ডের রান ২৬৩-৩।
স্পোর্টি ওয়ার্ল্ড নিউজ ডেস্কইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টের শুরুটা মোটেই ভালো হল না ভারতের। ইংল্যান্ড অধিনায়ক জো রুটের শতরানে চাপে ভারত। এই ম্যাচ ভারতের আর পাঁচটা সাধারণ ম্যাচ হলেও ইংল্যান্ডের কাছে একেবারেই সাধারণ ম্যাচ নয়। ইংল্যান্ড অধিনায়ক জো রুটের এটি শততম টেস্ট। স্বাভাবিক ভাবেই ইংল্যান্ডের কাছে এই টেস্টের গুরুত্ব অনেক।
ঠিক সেই গুরুত্ব বজায় রেখেই এই টেস্টে খেলতে নেমেছে ইংরেজরা। শুরু থেকেই দাপুটে ইনিংস উপহার ইংল্যান্ড ক্রিকেটারদের। যার জেরে শুরু থেকেই চাপে টিম ইন্ডিয়া। সেই সঙ্গে বলতে হবে, ৩৩০ দিন পর ভারতের মাটিতে কোনও আন্তর্জাতিক সিরিজ বসল। করোনা ভাইরাসের বাড়বাড়ন্তে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ক্রিকেট। পরবর্তীকালে ক্রিকেট ফিরলেও তা ভারতের বাইরে করতে হয়েছিল। নতুন বছরের একেবারে শুরুতেই ভারতের মাটিতে ফিরল ক্রিকেট। এই ইংল্যান্ড সিরিজে নামার আগে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ছিল গোটা ভারতীয় দল। কারণ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তারা জিতে দেশে ফিরেছিল। একই সঙ্গে ইংল্যান্ড ও শ্রীলংকার বিরুদ্ধে জিতে ভারতের মাটিতে সিরিজ খেলতে এসেছে। দুই দলের ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাসে কোনও রকম খামতি ছিল না। কিন্তু প্রথম দিনে ভারতীয় ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স দেখে তা একেবারেই মনে হয় না। খারাপ বোলিং যা ম্যাচ থেকে দূরে নিয়ে যায় ভারতকে। গত ইংল্যান্ড সফরের প্রথম ম্যাচে যা দেখা গিয়েছিল এই ম্যাচেও ঠিক সেটাই দেখা গেল। তবে প্রথম দিনের খেলা দেখে একেবারেই সিরিজের ফলাফল নির্ধারণ করা উচিত নয়। কারণ গত অজি সফরে প্রথম ম্যাচে আটকে যাওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচে কামব্যাক করে ভারত। সেদিক থেকে দেখতে গেলে এখনই কোনও কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে দ্বিতীয় দিনে যে বেশ চাপ দেবেন রুটরা সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
পাশাপাশি ভারতীয় দলও প্রস্তুত থাকবে ইংল্যান্ডের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে। কারণ প্রথমদিনে ভারত যে চাপে পড়েছে সেটা ভালো করেই জানেন ক্রিকেটাররা। সেই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে টিম ম্যানেজমেন্ট যে নতুন কোনও পরিকল্পনা নেবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। চিপকের প্রথমদিনের পারফরম্যান্সে একেবারেই খুশি নন অধিনায়ক বিরাটও। এদিন টসে জিতে প্রথমেই ব্যাট করার সিধান্ত নেয় ইংল্যান্ড। যথারীতি প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরু বেশ ভালো করে ইংল্যান্ড। এই ম্যাচে নজর ছিল ভারতীয় দল গঠনের দিকে। কারণ ছুটি কাটিয়ে দলে ফিরেছেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। ক্যাপ্টেন দলে ফেরায় হনুমাবিহারীকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এই ম্যাচে চোট কাটিয়ে দলে ফিরেছেন ইশান্ত শর্মা, জশপ্রীত বুমরা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন। এছাড়াও দলে নেওয়া হয়েছে শাহবাজ নাদিমকে। ইংল্যান্ডের হয়ে ওপেন করতে নামেন ররি বার্নাস এবং ডোম সিবলে। শুর থেকেই দাপুটে ব্যাটিং করতে থাকেন এই দুই ওপেনার। ভারতীয় বোলাররা কিছু বুঝে ওঠার আগেই রানের গতি বেড়ে যেতে থাকে। শুধু ইশান্ত শর্মা একা নন, জশপ্রীত বুমরাও কিছু করতে পারেননি। বলা ভালো এই ইংল্যান্ড দলকে বেশ হালকা করে নিয়েছিলেন ভারতীয় দলের ক্রিকেটাররা। সেই হুঁশ ফিরতে ফিরতে রান তখন অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে চিপকের পিচে সেটও হয়ে গিয়েছেন দুই ওপেনার। ভারতীয় বোলারদের উপর ক্রমশ চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন ইংরেজরা। বাধ্য হয়ে বোলিং লাইনআপে পরিবর্তন আনেন বিরাট।
টানা পেস অ্যাটাকের পরে নিয়ে আসা হয় রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে। লাইনআপে পরিবর্তনের পরেই সাফল্য পায় ভারত। ৬৩ রানের মাথায় ইংল্যান্ডের প্রথম উইকেটের পতন ঘটে। ৬০ বলে ৩৩ রান করে অশ্বিনের বলে ফিরে যান বার্নাস। ঠিক পরের ওভারেই ফের উইকেট পতন ইংল্যান্ডের। সদ্য ব্যাট করতে নামা লরেন্স ০ রান করে ফিরে যান। পরপর দুই উইকেটের পতনে মনে হয়েছিল ভারত ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু তা হয়নি। রুট নামতেই পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ঘুরে যায়। সিবলের থেকেও রানের গতি বেশি থাকে রুটের। একেরপর এক শট যা ভারতকে চাপে ফেলে দিয়েছিল। সেই মুহূর্তে ল্যাজে গোবরে অবস্থায় পরিণত হয়েছিল ভারত।
শততম টেস্টে ব্যাটিং ঝড় তুলতে থাকেন রুট। বলা ভালো রুটের বড় রানেই চাপে পড়ে যায় ভারত। সেই সঙ্গে চিপকের পাটা পিচ রুটকে বড় রান তুলতে সাহায্য করে। ধীরে ধীরে বড় রানের দিকে এগিয়ে যান ইংল্যান্ড অধিনায়ক। সেই সঙ্গে রুটকে সাহায্য করতে থাকে ডোম সিবলেও। তিনিও বড় রানের দিকে এগিয়ে যান। কিন্তু রুটের থেকে তাঁর রানের গতি অনেকটাই কম ছিল। ধরে ধরে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁর।
ধরে খেলতে গিয়ে বুমরার বলে আউট হয়ে যান সিবলে। ২৮৬ বলে ৮৭ রান করেন তিনি। ততক্ষণে নিজের কাজটি করে নেন রুট। টেস্টে ২০ তম শতরান করেন এই সাহেব ক্রিকেটার। তাঁর ব্যাটে ভর করেই এই মুহূর্তে রানের পাহাড়ে ইংল্যান্ড। প্রথম দিনের শেষে ইংল্যান্ডের রান ২৬৩-৩। ১৯৭ বলে ১২৮ রান করে অপরাজিত আছেন জো রুট। ভারতের হয়ে দুটি মাত্র উইকেট নিয়েছেন বুমরা এবং একটি উইকেট নিয়েছেন অশ্বিন।