অধিনায়ক এবং শুভমান ছাড়া দাঁড়াতে পারলেন না কেউই;
স্পোর্টি ওয়ার্ল্ড নিউজ ডেস্কযেখানে শেষ করেছিলেন, শুরুটা ঠিক সেখান থেকেই করলেন বিরাট কোহলি। লজ্জার হার। অস্ট্রেলিয়া সফরে প্রথম টেস্ট খেলে পিতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন বিরাট। তবে ফেরার আগে আগে ৩৬-এ অলআউটের লজ্জা সঙ্গী হয়েছিল ভারত অধিনায়কের।
অজি সফরের বাকিটা তো অতীত। অজিঙ্কা রাহানের নেতৃত্বে সেই গৌরবময় অধ্যায় পিছনে ফেলে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নতুন যাত্রা শুরু করেছে ভারত। শুরুতেই বিপর্যয়। ২২৭ রানের বিশাল ব্যবধানে প্রথম টেস্টে হারের মুখ দেখল বিরাটের টিম ইন্ডিয়া।
মঙ্গলবার ম্যাচের পঞ্চমদিন দুটো সেশনও পার করতে পারল না মেন ইন ব্লু। মাত্র ১৯২ রানে গুটিয়ে গেল রবি শাস্ত্রীর দল। সেইসঙ্গে প্রথমটিতে হেরে চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজে যাত্রা শুরু করল ভারত।জয়ের জন্য চতুর্থ ইনিংসে ৪২০ রানের বিশাল লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে তৃতীয় দিনেই ব্যাট করতে নামে টিম ইন্ডিয়া। শুরুতেই রোহিত শর্মার উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ভারত। তবুও অজি সফরের বীরগাথার কথা মাথায় রেখে অনেকেই আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু কোথায় কী! অস্ট্রেলিয়ার সেই ‘বাঘ’রা দেশের মাটিতে কেমন যেন ‘বিড়াল’ হয়ে রয়ে গেলেন।
কিছুটা লড়াই চালালেন তরুণ ওপেনার শুভমন গিল। ভারতীয় ব্যাটিংয়ের বাকিটুকু শুধুই বিরাটময়। অন্যরা এলেন আর গেলেন। প্রত্যাশার চাপ সামলাতে ব্যর্থ পূজারা। বিরাটের ডেপুটি রাহানের ব্যাটেও রানের খরা অব্যাহত। ভারতের নয়া ‘সুপারম্যান’ পন্থও ইংরেজ বোলারদের সামনে বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারলেন না। সুন্দর, অশ্বিনরাও ঘূর্ণি পিচে পারদর্শিতা দেখাতে পারলেন না।
ফলস্বরূপ বালির বাঁধের মতো ভেঙে পড়ল ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপ। তবুও আশা বেঁচে ছিল বিরাটকে ঘিরে। একা কুম্ভ হয়ে অনেকক্ষণ লড়াই চালালেন তিনি। এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে দেখলেন দলের পাঁচ ক্রিকেটারের রণে ভঙ্গ দেওয়ার দৃশ্য। কিন্তু স্টোকসের বল ব্যাট-প্যাডের ফাঁক দিয়ে তাঁর উইকেট খুঁজেই নিতেই প্রহর গোনা শুরু। ৭২ রানে থামলেন বিরাট। ১৯২ রানে থেমে গেল ভারত।
দিনের শুরু অবশ্য খারাপ করেননি চেতেশ্বর পূজারা এবং গিল। ১৫ রান করে পূজারা ফেরার পর পঞ্জাব তনয়কে সঙ্গ দেন ভিকে। কিন্তু ৮৩ বলে মোকাবিলা করে ৫০ রান করার পর গিল প্যাভিলিয়নে ফিরতেই ধস নামে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপে। রাহানে (৩ বলে ০), ঋষভ পন্থ (১৯ বলে ১১), ওয়াশিংটন সুন্দর (৫ বলে ০), রবিচন্দ্রন অশ্বিন (৪৬ বলে ৯)- কেউই অধিনায়কের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সামিল হলেন না লড়াইয়ে।শুধু জ্যাক লিচের ঘূর্ণিই নয়, জেমস অ্যান্ডারসনের সুইং মিশ্রিত পেসও শাসন করল চিপকের বাইশগজ। লিচ নিলেন চার উইকেট। জিমির ঝুলিতে তিনটি। একটি করে উইকেট পেয়েছেন জোফরা আর্চার, ডমিনিক বেস ও বেন স্টোকস।
কেউ বলছেন অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস, কেউ টস ভাগ্য, কেউ আবার প্রথম ইনিংসে বোলিং ব্যর্থতা- হারের কারণ হিসাবে উঠে আসছে মূলত এই তিনটি কারণই। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে ৫৭৮ রান তোলে ইংল্যান্ড। তাই যোগ্য দল হিসাবেই তারা জিতেছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। অনেকের মতে, ভারতীয় পিচে শেষ দিন ব্যাট করা খুবই কঠিন। সেই তুলনায় প্রথম দুই দিন ব্যাটসম্যানদের স্বর্গরাজ্য। তাই টসে হারার ফলে বিরাটদের এই পরিণতি বলে তাঁদের দাবি।
সমালোচকরাও নিজেদের মতো কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁদের মন্তব্য, প্রথম ইনিংসে ভারতের ব্যাটিং পরিকল্পনা দেখেই বোঝা গিয়েছে, আত্মতুষ্টি ভর করেছে দলে। কার্যত সকলেই দ্রুত রান তোলার নেশায় উইকেট দিয়ে এসেছেন। গিল, পন্থদের স্ট্রাইকরেটই তার বড় প্রমাণ। এমনকি, ৫১.০৫ স্ট্রাইকরেটে দেশের নতুন ‘ওয়াল’ পূজারা শেষ কবে ব্যাট করেছেন, তাও মনে করতে যথেষ্ট কসরত হবে পরিসংখ্যান বিদদের।
কারণ যাই হোক, ফলাফল বদলের নয়। দীর্ঘ ৩৩০ দিন পর দেশের মাটিতে ফিরেছিল ক্রিকেট। তবে বিরাটের মতোই কামব্যাকটা স্মরণীয় হল না ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য। দিন তিনেক পরেই একই মাঠে দ্বিতীয় টেস্ট। ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে চলা সেই টেস্টে ফিরছে দর্শকও। আবারও কি রাজকীয় প্রত্যাবর্তন দেখা যাবে? স্বমহিমায় ফিরবে টিম ইন্ডিয়া? উত্তরটা দেবে সময়ই।