ঠিক যেন অস্ট্রেলিয়া টেস্টের পূণরাবৃত্তি, গত অস্ট্রেলিয়া সিরিজের প্রথম টেস্টে আটকে যাওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচেই কামব্যাক করেছিল অজিঙ্কা রাহানের নেতৃত্বাধীন ভারত। এই ইংল্যান্ড সিরিজেও ঠিক সেই পথই অনুসরন করতে চলেছে বিরাটের নেতৃত্বাধীন ভারত। ইংরেজদের কাছে প্রথম ম্যাচে আটকে যাওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ের পথে টিম ইন্ডিয়া। এই ম্যাচে ভারতের জয় এখনও নিশ্চিত না হলেও যে দিকে এগোচ্ছে তাতে বিরাটদের জয়ের সম্ভাবনা বেশি।
তাঁর সবচেয়ে বড় উদাহরণ ইংল্যান্ডের মাত্র ১৩৪ রানে গুটিয়ে যাওয়া। রুটদের আটকে দেওয়ার প্রধান কারিগড় রবিচন্দ্র অশ্বিন। ২৩.৫ ওভার বল করে ৪৩ রান দিয়ে একাই ৫ উইকেট নিলেন অশ্বিন। শুধু তাই নয়, মুথাইয়া মুরলিধরনদের দলে নাম লেখালেন। ভারতের টেস্ট জার্সি গায়ে ২০০ টি উইকেট নিলেন এই স্পিনার।
মূলত তাঁর বলে ভর করেই দ্বিতীয় দিনের শেষে অনেকটা সুবিধাজনক জায়গায় ভারত। দ্বিতীয় দিনের শুরুটা মোটেই ভালো হয়নি ভারতের কাছে। কারণ দ্বিতীয় দিনে খেলার শুরুতেই মোইন আলির বলে ফিরে যান অক্ষর প্যাটেল ১৪ বলে ৫ রানে। এরপর ইশান্ত নামলেও তিনিও কোনও খাতা খুলতে পারেননি। ক্রমেই চাপ বাড়তে থাকে ঋষভ পন্থের উপর। কোনও রকমে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন তিনি। এরই মধ্যে ফের উইকেট পতন হয় ভারতের। সেটানের বলে কোনও রান না করেই ফিরে যান কুলদীপও। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে রানের গতি বাড়িয়ে অর্ধশতরান করেন পন্থ। উইকেট হাতে না থাকায় তিনিও চালিয়ে খেলতে ভয় পাচ্ছিলেন। এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই মহম্মদ সিরাজ একটি বাউন্ডারি মেরে ফিরে যান। ভারতের প্রথম ইনিং শেষ হয় ৩২৯ রানে। ৭৭ বলে ৫৮ রান করে অপরাজিত থাকেন পন্থ।
চিপকে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপাকে পড়ে ইংল্যান্ড। প্রথম ওভারেই সিবলের সঙ্গে ওপেন করতে নামা ররি বার্নাসকে (৩ বলে ০ রান) ফিরিয়ে দেন ইশান্ত শর্মা। ইনিংস শুরুতেই হোঁচট খাওয়ায় চাপে পড়ে যায় সাহেবরা। তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামেন ডান লরেন্স। আঘাত খাওয়ার পর ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকে ইংল্যান্ড।
প্রথম ওভারে পরেই স্পিনার নিয়ে আসার সিধান্ত নেন বিরাট। দ্বিতীয় ওভারে বল করতে আসেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। প্রথম দুই ওভারে কিছু করতে না পারলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই সিবলেকে (২৫ বলে ১৬ রান) তুলে নেন অশ্বিন। এরপর এক এক করে উইকেটের পতন ঘটতে থাকে ইংল্যান্ডের। গত ম্যাচে দ্বিশতরান করে দেখানো অধিনায়ক জো রুট এদিন কিছুই করতে পারেননি। মাত্র ১৮ রান করে নিজের কৃতিত্ব দেখাতে সক্ষম হন তিনি। সেই অশ্বিনের বলেই বোল্ড হয়ে ফিরতে হয় রুটকে। একের পর এক উইকেট পড়তে চাপে পড়ে য়ায় ইংরেজরা। বলা ভালো ভারতীয় বোলাররা ইংরেজদের চাপে ফেলে দেয়।
পরিস্থিতি এমন হয় যে, ফলোঅনের আশা দেখা দেয়। কারণ মাত্র ৫২ রানেই ৫ উইকেটের পতন ঘটে যায় ইংল্যান্ডের। গত ম্যাচের হারের বদলা এই ভাবেই নিতে থাকে ভারতীয় বোলাররা। ভারতীয় স্পিনারদের বল খেলতে হিসসিম খেতে দেখা য়ায় ব্রিটিশদের। একটা সময় এমনও মনে হয়েছিল একশো রানের মধ্যেই গুটিয়ে যাবে তারা। সেটা হয়নি বেন ফোক্সের জন্য। দলকে কিছুটা হলেও রক্ষা করেন তিনি। যখন ভারতীয় বোলারদের কাছে মাথানত করে ফিরে যাচ্ছেন অন্য সব ব্যাটসম্যানরা। ঠিক সেখানে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে যান তিনি।
ছাড়বার পাত্র নন ভারতীয় বোলাররাও। ম্যাচ যত গড়ায় ততই চিপকেই পিচে বল ঘোরার গতি বেড়ে য়ায়। সেই ট্র্যাপেই পা দেয় অলি সেটান, সটুয়ার্ট ব্রডরা । অশ্বিনের শিকার পাঁচটি উইকেট। ইশান্তের শিকার ২ টি উইকেট। অক্ষরের শিকার 2 টি ডিইকেট এবং একটি মাত্র উইকেট নেন মহম্মদ সিরাজ। ভারতীয় বোলারদের দাপটে ১৩৪ রানে গুটিযে যায় ইংল্যান্ড। ১০৭ বলে ৪২ রান করে অপরাজিত থাকেন ফোক্স।
দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের হয়ে ব্যাট করতে নামেন রোহিত শর্মা এবং শুভমন গিল। ইংল্যান্ডও বিরাটের পথ অনুসরন করতে থাকে। প্রথম ওভারে অলি স্টোনকে বল করানোর পর লিচকে নিয়ে আসে। ইংল্যান্ডের মতো বোকা হয়নি রোহিতরা। প্রথম থেকেই দাপুটে ইনিংস খেলতে থাকেন। মোইন আলির বলে ওভার বাউন্ডারি মারতে ভোলেননি গিল। ইংরেজ বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলা করতে থাকে এই দুই ওপেনার। দুই ব্যাটসম্যানের ব্যাটে চাপে পড়ে যায় রুটরা। তবে দ্বিতীয় দিনের একেবারে শেষের দিকে নিজের উইকেটটি ইংরেজদের হাতে উপহার দিয়ে আসেন গিল। লিচের বলে এলবিডব্লু হয়ে ফিরে যান তরুণ ব্যাটসম্যান। গিল করেছেন ২৮ বলে ১৪ রান। তিনে ব্যাট করতে নেমেছেন পূজারা।
দ্বিতীয় দিনের শেষে ভারতের রান ১৮ ওভারে ৫৪/১। ক্রিজে অপরাজিত রয়েছেন রোহিত শর্মা (৬২ বলে ২৫ রান) এবং চেতেশ্বর পূজারা (১৮ বলে ৭ রান)। ২৪৯ রানের লিড ভারতের।
এই ম্যাচ যেদিকে এগোচ্ছে তাতে ভারতের জয় শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। তবে এই ম্যাচ যে পাঁচ দিন গড়াবে না সেটা এক প্রকার পরিস্কার। এই ম্যাচ জিতলেই প্রথম টেস্ট হারের বদলা নেওয়ার পাশাপাশি সিরিজে সমতা ফেরাবে টিম ইন্ডিয়া। ইংরেজ বধ শুধুমাত্র সময়ে অপেক্ষা। তবে অবশ্যই প্রথম ইনিংসে ভারতের নায়ক সেই রোহিত এবং অশ্বিন। এই দুই ক্রিকেটারের পারফরম্যান্সেই লড়ছে ভারত।