ভারতের জয় শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা।
স্পোর্টি ওয়ার্ল্ড নিউজ ডেস্কবল হাতে পাঁচটি উইকেট নিয়েছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তাঁর সেই দাপুটে বোলিংয়ে মাত্র ১৩৪ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতেই সেই রক্ষক অশ্বিন। দ্বিতীয় দিনের শেষেই ম্যাচের পরিস্থিতি দেখে বোঝা গিয়েছিল এই ম্যাচে ভারতের জয় শুধুমাত্র সময়ে অপেক্ষা। সেই দিকেই যেন আরও এগিয়ে গেল বিরাট ব্রিগেড।
এই সিরিজে ভারতের মতিগতি দেখে বোঝা গিয়েছিল এই সিরিজও ঠিক অজিদের মতো এগোচ্ছে। কারণ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে আটকে যাওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ের মুখ দেখেছিল রাহানেরা। এই সিরিজেও ঠিক সেই পথ অনুসরন করেই এগোচ্ছেন রোহিতরা। প্রথম ম্যাচে রুটদের কাছে পরাজিত হওয়ার পর চিপকের দ্বিতীয় ম্যাচে অনেকটাই ভালো জায়গায় টিম ইন্ডিয়া।
এই ম্যাচে প্রথম ইনিংসে যেমন ভারতীয় দলের নায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন রোহিত শর্মা। ঠিক এই ইনিংসেও ভারতীয় দলের নায়ক অবশ্যই রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ঘরের মাঠে নিজের দাপুটে ইনিংস উপহার দিলেন তিনি। তাঁর শতরানে ভর করেই ভারত এখন জয়ের দোরগোড়ায। চিপকের ঘুর্ণি পিচকে কোনও রকম তোয়াক্কাই করলেন না তামিল এই ক্রিকেটার। ঘরের মাঠে নিজেই রাজত্ব করে গেলেন। ইংল্যান্ড দল প্রথম ম্যাচের পর যে একেবারে হালকা করে নিয়েছিল সেটা বেশ ভালো ভাবে টের পাওয়া গেল। সেই সুযোগটাই কাজে লাগায় কোহলি, রাহানেরা।
তবে এই পথ এতটা মসৃন হত না যদি না অশ্বিন এই ভাবে খেলতেন। কারণ তৃতীয় দিনের শুরুতেই চেতেশ্বর পূজারা এবং রোহিত শর্মার উইকেটের পতন ঘটে। দ্বিতীয় দিনের একেবারে শেষে শুভমন গিল ফিরে যান। এদিন শুরু থেকেই কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে চলে যায় ভারত। রান আউট হয়ে ফিরে যান পূজারা ২৩ বলে ৭ রানে। এদিন প্রথম উইকেটের শিকার হন তিনি। এর পরেই লিচের বলে ফিরে যান রোহিত ৭০ বলে ২৬ রানে। পরপর দুটি উইকেটের পতনে চাপে থাকে ভারত।
তবে লিড থাকায় কিছুটা হলেও নিশ্চিন্ত থাকে ভারত। চাপ থেকে কাটাতে দায়িত্ব নেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। কারণ ঋষভ পন্থও সেই ভাবে উঠতে পারেননি। শুধু পন্থ ১১ বলে ৮ রানে একা নন , সেই সঙ্গে ব্যর্থ হয়েছেন অজিঙ্কা রাহানেও ১৪ বলে ১২ রানে। পরপর উইকেট পতনে চাপে পড়ে যান অধিনায়ক। চিপকের পিচে তখন রাজত্ব চালাচ্ছেন জ্যাক লিচ, মোইন আলিরা।
ঠিক সেই মুহূর্তে নিজের আসল রুপ ধারণ করেন অধিনায়ক। অশ্বিনকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন তিনি। চিপকেই পিচে তিনি একাই রাজত্ব করেন। এই জুটিতে ভর করেই এগিয়ে যেতে থাকে ভারত। সেই পরিস্থিতিতে ভারতের হয়ে ধরে খেলা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। সেই কাজটাই করে যান এই দুই ক্রিকেটার।
ধীরে ধীরে রানের গতি বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে ভারতের বাউন্ডারির সংখ্যাও। এরই মধ্যে বিরাটের ক্যাচও মিস করে ইংল্যান্ড। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অর্ধশতরান করেন তিনি। কিন্তু শতরানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আগেই মোইন আলির বলে শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে যান ভারত অধিনায়ক। ১৪৯ বলে ৬২ রান করেন কোহলি।
ক্রিজে একা পড়ে যান অশ্বিন। সেই সময় থেকে দলকে একাই এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন তিনি। এক কথায় বলতে গেলে অ্যাশ ঝড়ে কাবু হয গোটা চিপক স্টেডিয়াম। ঘরের মাঠে নিজের সেরাটা উজার করে দেন তিনি। শুধু তাই নয়, টেলএন্ডারদের নিয়ে শতরানের দিকে এগিয়ে যান তিনি। এমনকী একটা সময় মনে হয়েছিল শতরান মনে হয় করতে পারবেন না অশ্বিন। কারণ সেই মুহূর্তে কুলদীপ, ইশান্তরা ব্যাট করছে। শেষের দিকে কিছুটা হলেও চালিযে খেলতে থাকেন অ্যাশ। এমনকী বসে থাকেননি ইশান্তও। মাত্র ৭ রানের মধ্যে একটি ওভার বাউন্ডারিও নিজের পকেটে পুরে নেন ইশান্ত।
ইশান্ত ফিরে যেতে অশ্বিনের শতরান ক্রমশ কঠিন হয়ে যায়। ঠিক সেই মুহূর্তে সিরিজকে ধরে খেলার পরামর্শ দেন অ্যাশ। যেমন কথা তেমন কাজ। ফ্রন্ট ফুট হোক বা ব্যাকফুট। দুর্দান্ত ডিফেন্স করে যান সিরাজ। সেই সুযোগেই পঞ্চমতম টেস্ট শতরান করে নেন অশ্বিন। সেই মুহূর্তে ভারতের ড্রেসিংরুমে যেন উতসবের আমেজ। এমনকী অশ্বিনের শতরানের লাফিযে ওঠেন সিরাজও। ঠিক তার পরেই এই দুই ক্রিকেটার রানের গতি বাড়ান।
কোনও দিকে না তাকিয়ে বাউন্ডারি এবং ওভার বাউন্ডারি টার্গেট করেন তারা। এমনকী দুটি লম্বা ছক্কা মারেন সিরাজও। ১৪৮ বলে ১০৬ রানে অশ্বিন ফিরে যেতেই থামে ভারতের ইনিংস। ২১ বলে ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন সিরাজ। ২৮৬ রানে আটকে যায় ভারত। ৪ টি করে উইকেট নিয়েছেন জ্যাক লিচ এবং মইন আলি। একটি উইকেট নিয়েছেন অলি সেটান। ৪৮২ রানের টার্গেট দেওয়া হয় ইংরেজদের।
বড় রানের টার্গেট মাথায় নিয়ে ব্যাট করতে নামেন রনি বার্নাস এবং সিবলে। প্রথমের চার-পাঁচ ওভার ভালো ভাবে খেললেও অশ্বিন এবং অক্ষরদের সামনে বেসামাল হয়ে পড়ে। গোধুলীতে এই দুই স্পিনারের ঘূর্ণিতে বেশ চাপে পড়ে যায় ইংরেজরা। এমনকী ল্যাজে গোবরে পরিস্থিতি হয়।
পরিস্থিতি বুঝতে পেরে সুযোগ কাজে লাগান অশ্বিনরা। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের প্রথম শিকার সিবলে। অক্ষরের বলে এলবিডব্লু হয়ে ফিরে যান সিবলে ২৫ বলে ৩ রানে। শুরুতেই উইকেট পতনে চাপে পড়ে যায সাহেবরা। এর কিছুক্ষনের মধ্যেই ফের উইকেট পতন ঘটে। অশ্বিনের বলে ফিরে যান বার্নাস ৪২ বলে ২৫ রানে। এখানেই থেমে থাকেনি ভারতীয় বোলাররা। দিনের শেষে আরও একটি উইকেট তুলে নেন অক্ষর। লিচকে প্রথম বলেই ফিরিয়ে দেন তিনি। ৩ উইকেট পতনে কোনঠাশা ইংল্যান্ড। তৃতীয় দিনের শেষে ইংল্যান্ডের রান ৫৩-৩। ক্রিজে অপরাজিত আছেন ডান লরেন্স ১৯ রানে এবং জো রুট ২ রানে। ইংল্যান্ডকে জিততে হলে প্রয়োজন ৪২৯ রান। সেটা যে তাদের কাছে বেশ কঠিন তা ভালো করেই জানে রুট ব্রিগেড। ভারতের জয় শুধুমাত্র সময়ে অপেক্ষা।