প্রাথমিকভাবে উইজডেনেও জায়গা পায়নি ইতিহাসের প্রথম টেস্ট ম্যাচ
সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়১৮৭৭ সালে আজকের দিনে পৃথিবীর প্রথম টেস্ট ম্যাচের আসর বসেছিল মেলবোর্নে। ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ দিয়ে। আসলে দল দু’টির নাম ছিল লিলিহোয়াইট একাদশ বনাম ভিকটোরিয়া ও নিউ সাউথ ওয়েলস যৌথ একাদশ।
১৮৭৮ সালে যখন ইংল্যান্ড থেকে প্রথম প্রতিনিধিত্বমূলক সফরে যাওয়া হল অস্ট্রেলিয়ায়, তখন উইজডেনের সম্পাদক নাইট গোটা সফরকে নিয়ে লিখলেন বটে – কিন্তু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আলাদা আলাদা অংশে। ফলে, যাকে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম টেস্ট ম্যাচ বলে ধরা হয়, তা প্রায় অনুল্লেখিত থেকে গেল।
এমনকি ১৮৭৯ সালে নাইটের মৃত্যুর পর যখন জর্জ ওয়েস্ট সম্পাদক হলেন তখনও ১৮৮০ সালের খেলাগুলির সাথে কয়েকটি মাত্র লাইন লিখলেন গোটা সফরকে নিয়ে।
এখন প্রশ্ন হল, কেন? কেউ কেউ বলেন যে ১৮৭২ সালের পরবর্তীকালে যখন সমুদ্রের তলা দিয়ে টেলিগ্রাফ লাইন পাতা হয় তখন তার খরচ ছিল খুব বেশি। ফলে উইজডেন তখন জাহাজগুলিতে পাওয়া যায় এমন কাগজ ব্যবহার করতেন। যেমন ‘লিডার’, ‘অস্ট্রেলিয়ান’, ‘স্পোর্টসম্যান’ প্রভৃতি।
আসল কারণ অবশ্য তা নাও হতে পারে। সেই সময় উইজডেন দাবি করত যে তারা তাদের পুরোনো প্রতিষ্ঠিত প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রচারসংখ্যার নিরিখে পিছনে ফেলে দিয়েছে। ঠিক তখনই জেমস লিলিহোয়াইট জুনিয়র তাঁর দল নিয়ে অস্ট্রেলিয়া যান এবং সেখানে ভিক্টোরিয়া ও নিউ সাউথ ওয়েলসের যৌথ দলের বিরুদ্ধে যে ম্যাচ খেলেন তাই ১৮৯৫ সালে প্রথম টেস্ট ম্যাচের সম্মান পায়। যেহেতু লিলিওহোয়াইটের দল তাই উইজডেন সেই বিষয়ে কিছুই লেখেনি।
১৮৬৬-তে ফ্রেড লিলিহোয়াইটের মৃত্যু হওয়ায় জন লিলিহোয়াইট তৈরি করেছিলেন ‘জন লিলিহোয়াইট ক্রিকেটারস কম্প্যানিয়ন’। তারা আবার দাবি করত যে তাদের গ্রন্থ খেলাটির সর্ববৃহৎ বার্ষিক প্রকাশনা। আবার এও বলত যে বাকিরা নাকি ‘ফ্যাক্ট’-এর প্রতি খুব একটা নজর দেয় না। ফলে তাদের ১৮৭৮ সালের সংস্করণে তারা ১৮৭৭-এর ওই ম্যাচগুলির পূর্ণ খবর ছাপে।
১৯০০ সালে লিলিহোয়াইটদের প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গেলেও তাদের ভূত উইজডেনকে তাড়া করে বেড়াত। কারণ, ১৯৩০ সালে কেইন যখন সম্পাদক তখন উইসডেন দাবি করেছিল যে ১৮৭৭ সালের লিলিহোয়াইট বা ১৮৭৮-৭৯ সালের লর্ড হ্যারিসের দল কোনটাই ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ, প্রথম দল ছিল আর্থিক উদ্দেশ্যে তৈরি আর দ্বিতীয় দল চরম অপেশাদার। মনে রাখা প্রয়োজন ফ্রেড স্পফোর্থ এই দলের বিরুদ্ধে হ্যাট্রিক করেছিলেন যা টেস্টে প্রথম বলে ধরা হয়।
এর যুক্তি মানতে হলে ১৮৮০ সালের লর্ডস টেস্টকে প্রথম ‘টেস্ট ম্যাচ’ বলে ধরতে হয়। কিন্তু তা তারা কোনোদিন ধরেনি। ধরেছে কিন্তু ১৮৭৭-কেই। কারণ? দীর্ঘদিন ধরে উইজডেনের পরিসংখ্যানবিদ ছিলেন সিডনি সাদারটন। যার বাবা জেমস সাদারটন ঐ ১৮৭৭-এর খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। জর্জীয় যুগের যে ক’জন হাতে গোনা ক্রিকেটার টেস্ট খেলেছেন তিনি তাদের একজন। আজও সবথেকে বেশি বয়সে টেস্ট অভিষেকের রেকর্ড জেমস সাদারটনের নামেই রয়েছে। এমনকি, ১৯৭১ সালের প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচকেও উইজডেন গুরুত্ব দেয়নি। সংক্ষিপ্ত স্কোর ছেপেছিল। যাই হোক, ১৮৮২-৮৩ সালের সফর নিয়ে লিলিহোয়াইটরা ২৩ পাতা ছাপলেও উইজডেন এক পাতাও লেখেনি।
১৮৮৪-তে জন উইডেন অবিবাহিত অবস্থায় মারা গেলেন। তাঁর ম্যানেজার হেনরি লাফ সম্পাদনার দায়িত্ব নিলেন। উইজডেন আস্তে আস্তে পেশাদার হল।
অনেক পরে ১৯৭৭ সালে শতবার্ষিকী টেস্ট এর সময় তারা ব্র্যাকেটে ঐ টেস্টের সাথে ১৮৭৭ সালের ম্যাচের পুরো স্কোর ছাপে।
১৮৯৪ সালে এম সি সি সরকারি ভাবে টেস্ট ম্যাচের সংজ্ঞা ঘোষণা করলে এই ম্যাচ পৃথিবীর প্রথম টেস্ট ম্যাচের স্বীকৃতি পায়।