আট নম্বরে নেমে যুগ্ম-সর্বোচ্চ রান ব্রিটিশ অলরাউন্ডারের; ক্যাচ ফেলার প্রদর্শনী ভারতের
স্পোর্টি ওয়ার্ল্ড নিউজ ডেস্কলক্ষ্য ৩৩০। আর তা তাড়া করতে গিতে ৩১ তম ওভারে স্কোরবোর্ডে সাত উইকেটে ২০০। অন্য যে কোনও দল হলে এই জায়গা থেকে একপেশেভাবে হারত। বড়জোর হারের ব্যবধান কমানোর চেষ্টা করত। কিন্তু তিনি স্যাম কারান অন্য ধাতুতে গড়া। ‘আক্রমণই রক্ষণের সেরা উপায়’ নীতিতে প্রায় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন বিরাট কোহলিদের মুখের গ্রাস। শেষ পর্যন্ত যে কারান সফল হতে পারলেন না তার জন্য দায়ী খেলার শেষ লগ্নে টিম ইন্ডিয়ার আঁটোসাঁটো বোলিং। আর তার জেরেই রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ শেষে সাত রানে জয় ছিনিয়ে নিল কোহলি অ্যান্ড কোং। ভারতের ৩২৯ রানের জবাবে ন’উইকেটে ৩২২ রানের বেশি তুলতে পারেনি ইংল্যান্ড।
এদিনও টস-ভাগ্য সঙ্গ দেয়নি কোহলির। তবে শুরুটা যথেষ্ট ভালো করেছিলেন রোহিত শর্মা এবং শিখর ধাওয়ান। ওপেনিং জুটিতে ৮৮ বলে ১০৩ রান যোগ করে বড় রানের ভিত তৈরি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু আদিল রশিদের গুগনিতে রোহিত (৩৭) বোল্ড হতেই ছন্দপতন। স্বল্প ব্যবধানে প্যাভিলিয়নে শিখর (৬৭) এবং কোহলি (৭)। ১০৩/০ থেকে আচমকাই ১২১/৩। কে এল রাহুল ক্রিজে এসে আগের ম্যাচের মতোই থিতু হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। কিন্তু রানের গতি বাড়াতে গিয়ে ভুল শট বাছাইয়ের খেসারত দিলেন কর্ণাটকী ব্যাটসম্যান (৭)। ভারতের রান তখন চার উইকেটে ১৫৭। রানরেট সাড়ে ছয়ের উপর। কিন্তু হাতে উইকেট কম। এই পরিস্থিতি থেকে ইংল্যান্ডকে পাল্টা চাপে ফেলার রাস্তা নিয়েছিলেন ঋষভ পন্থ এবং হার্দিক পাণ্ড্য। পঞ্চম উইকেটে মাত্র ৭০ বলে ৯৯ রান যোগ করেন দু’জনে। একদিনের আন্তরজাতিকে পন্থের প্রথম শতরান যখন প্রায় নিশ্চিত দেখাচ্ছে তখনই বাড়তি ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলতে গিয়ে উইকেট দিয়ে এলেন তিনি (৭৮)। তখনও ভারতীয় ইনিংসের ১৪ ওভার বাকি। তবে সেই ১৪ ওভার কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন ছিল পাণ্ড্য ভাইদের লম্বা জুটি। কিন্তু বেন স্টোকসের বল গ্লান্স করতে গিয়ে হার্দিক (৬৪) লেগস্টাম্প খোয়ানোয় টিম ইন্ডিয়ার সেই আশা পূর্ণ হয়নি। বিশেষজ্ঞদের একাংশের আশঙ্কা ছিল, তিনশোও পেরোতে পারবে না ভারত। কিন্তু আট নম্বরে নামা শার্দূল ঠাকুরের কার্যকরী ৩০ রানের ইনিংস সেই ফাঁড়া থেকে উতরে দেয় দলকে। তা সত্বেও ১০ বল আগেই অল আউট হয়ে যায় ভারত। ক্রুনাল পাণ্ড্য ৩৪ বলে ২৫ রান করলেও একটিও বাউন্ডারি মারতে পারেননি। ৩৪ রান দিয়ে তিন উইকেট নেন মার্ক উড।
ইংল্যান্ড ইনিংসের প্রথম বল থেকেই চালাতে শুরু করেছিলেন জেসন রয়। প্রথম পাঁচ বলেই তুলে নিয়েছিলেন ১৪ রান। কিন্তু ওভারের শেষ বলে রয়কে (১৪) বোল্ড করেন ভুবনেশ্বর কুমার। গত দু’ম্যাচ ধরে টিম ইন্ডিয়ার ত্রাস হয়ে ওঠা জনি বেয়ারস্টোও (১) ভুবির শিকার। তিন নম্বরে নামা স্টোকস ১৫ রানের মাথায় লোপ্পা ক্যাচ তুলেছিলেন। কিন্তু সেই সহজ ক্যাচ ফেলে দেন হার্দিক। যদিও ৩৫ রানের বেশি করতে পারেননি স্টোকস। চার নম্বরে নামা দাউইদ মালান একদিনের আন্তর্জাতিকে তাঁর প্রথম অর্ধশতরান করলেন এদিন। কিন্তু তার বেশি এগোতে পারেননি। লিয়াম লিভিংস্টোন (৩৬), মইন আলিরা (২৯) প্রতি-আক্রমণের নীতি নিলেও তা বিশেষ কাজে লাগেনি। ব্যক্তিগত ২২ রানের মাথায় বাউন্ডারিতে ক্যাচ তুলেছিলেন কারান। ইংল্যান্ডের রান তখন সাত উইকেটে ২১৮। কিন্তু এবারও সেই ক্যাচ ফেলে দেন লং অফ থেকে দৌড়ে আসা হার্দিক। ক্যাচ ফস্কেছেন শার্দূল, নটরাজনরাও। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েই দলকে জয়ের রাস্তায় টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন কারান। ১৯৮৪-এর পর প্রথমবার ভারত থেকে একদিনের সিরিজ জিতে ফেরার স্বপ্ন দেখছিল ব্রিটিশরা। কিন্তু শেষপর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। ৬৭ রানে চার উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের মিডল অর্ডারকে ভাঙতে বড় ভূমিকা নেন শার্দূল। পাশে মানানসই ছিলেন ভুবিও (৩/৪২)। একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে আট নম্বরে নেমে যুগ্ম-সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলার রেকর্ড গড়লেন কারান। ভাগ বসালেন তাঁরই স্বদেশীয় ক্রিস ওকসের নজিরে।
তবে কারান ‘ম্যাচসেরা’ নির্বাচিত হওয়ায় কিছুটা অবাক কোহলি। বলছেন, “ব্যাট হাতে মূল্যবান ৩০ রান। বল হাতে চার উইকেট। শার্দূলেরই ম্যাচের সেরা নির্বাচিত হওয়া উচিৎ ছিল।“