ফাইনালে ভারতকে আট উইকেটে হারালেন উইলিয়ামসনরা
স্পোর্টি ওয়ার্ল্ড নিউজ ডেস্কপ্রথমে ২০১৫। তারপরে ২০১৯। দুই বিশ্বকাপেই ফাঁক থেকে গিয়েছিল কাপ আর ঠোঁটের মাঝে। সম্ভবত তারই শাপমুক্তি ঘটল বুধবারের হ্যাম্পশায়ার বোলে। ভারতকে আট উইকেটে হারিয়ে আইসিসি-র উদ্বোধনী টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নিল নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয়বারের মতো দেশে নিয়ে গেল আইসিসি-র ট্রফি।
প্রথমবারও কিউই শিবিরে আইসিসি ট্রফি এসেছিল ভারতকে হারিয়েই। সেটা ২০০০ সাল। যখন নাইরোবির জিমখানা মাঠে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়দের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে গিয়েছিলেন জনৈক ক্রিস কেয়ার্নস। কিন্তু সেই নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে এই নিউজিল্যান্ডের বিস্তর ফারাক। সেই কিউইরা ভরসা করে থাকত ব্যক্তিগত ক্যারিশমার উপর। আর কেন উইলিয়ামসনরা বিশ্বাস করেন টিমগেমে। যেখানে কোনও একজন পারফর্মারের উপর ভরসা করে না দল। বরং পুরো পারফরম্যান্সই নির্ভর করে থাকে দলগত নৈপুণ্যের উপর। আর দলের অধিনায়ক বিশ্বাস করেন সেই প্রাচীন প্রবাদে – কোনও অধিনায়ক ততটাই ভালো, যতটা ভালো তার দল।
বুধবারের সাউদাম্পটনেই যেমন। বোলারদের দুর্দান্তভাবে ব্যবহার করলেন উইলিয়ামসন। কখনও কাইল জেমিসন উইকেট তুলছেন। নিজের উচ্চতাকে কাজে লাগিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরাচ্ছেন বিরাট কোহলি (১৩), চেতেশ্বর পুজারাদের (১৫)। আবার কখনও বা এক প্রান্ত থেকে এমন চাপ তৈরি করছেন যে উল্টোপ্রান্তের বোলারদের মারতে গিয়ে উইকেট দিয়ে আসছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। যে ফর্মুলা কাজে লাগিয়ে এদিন চার উইকেট তুলে নিলেন টিম সাউদি (৪/৪৮), ট্রেন্ট বোল্টরা (৩/৩৯)। যে ফর্মুলায় প্যাভিলিয়নে ফিরলেন ঋষভ পন্থ (৪১), অজিঙ্ক রাহানেরা (১৫)। তবে এদিনের খেলায় অন্তত দু’ক্ষেত্রে উইলিয়ামসনের ক্ষুরধার নেতৃত্ব চোখে পড়ার মতো। প্রথমত, রবীন্দ্র জাদেজা এবং পন্থ যখন আগ্রাসী হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছেন ঠিক সেই সময়ই নেইল ওয়াগনারকে আক্রমণে আনলেন উইলিয়ামসন। শুরু হল রাউন্ড দ্য উইকেট বোলিং, পাঁজর লক্ষ্য করে। এই পিচে সেই বোলিং সামলানোর মতো টেকনিক বা মানসিকতা সৌরাষ্ট্রের অলরাউন্ডারের নেই। তাই সেই স্ট্র্যাটেজিতে ঠকেই ফিরলেন উইকেটের পিছনে খোঁচা দিয়ে। দ্বিতীয়ত, মহম্মদ শামিকে আউট করা। টেস্ট ক্রিকেটে যে শামি নিচের দিকে নেমে চটজলদি রান করতে পারেন সেটা সব বিপক্ষ অধিনায়কই জানেন। সেভাবেই এদিনও শুরু করেছিলেন বাংলার পেসার। কিন্তু ফ্লাই স্লিপ রেখে তাঁকে প্যাভিলিয়নের রাস্তা দেখাল উইলিয়ামসনের মস্তিষ্ক। পন্থ দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪১ রান করলেও কখনই কিউই বোলারদের মাথায় চেপে বসতে পারেননি। অহেতুক ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলার মাশুল দিয়ে আউট হলেন তিনি। সবমিলিয়ে ১৭০ রানেই অল আউট টিম ইন্ডিয়ার তারকাখচিত ব্যাটিং লাইন আপ।
জেতার জন্য ১৩৯ রান তাড়া করতে নিউজিল্যান্ড যখন ব্যাট করতে নামল তখন খটখটে রোদে পিচ অনেকটাই শুকিয়ে গিয়েছে। তবুও ভারতীয় সমর্থকরা আশা করেছিলেন, মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করবেন কোহলিরা। কিন্তু ততক্ষণে দলের কাঁধ ঝুলে গিয়েছে। অশ্বিন টম ল্যাথাম (৯) এবং ডেভন কনওয়েকে (১৯) স্বল্প ব্যবধানে ফেরালেও কিউই শিবিরে কাঁপুনি ধরানোর কোনও সুযোগই দেননি উইলিয়ামসন (৫২ অপরাজিত) এবং রস টেলর (৪৭ অপরাজিত)।
বছর দুয়েক আগে লর্ডসে স্রেফ ভাগ্যের দোষে বিশ্বকাপ হাতছাড়া হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের। আইসিসি বেঁকে না বসলে সে ক্রিকেটের মক্কাতেই ট্রফি হাতে তুলতে পারতেন উইলিয়ামসনরা। বুধবারের কিউই শিবিরে আক্ষেপ সম্ভবত এটুকুই।