ঢাকা বনাম কৃষ্ণনগরের ক্রিকেট-য়ুদ্ধ
সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়১১ই ডিসেম্বর, ১৮৮২ সাল। বাংলার ক্রিকেটের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা হয়। সে দিন প্রথম বারের জন্য বাঙালি ও ইউরোপীয় একসঙ্গে ইডেনে খেলতে নেমেছিল। এর আগে বাঙালি ও ইউরোপীয়দের মধ্যে ক্রিকেট ম্যাচ খেলা হলেও সেই ম্যাচ ইডেনে হয়নি। তাছাড়া বাঙালি ও ইউরোপীয় দল আলাদা ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে। কিন্তু একই দলে এবং ইডেনে এই প্রথম বাঙালিরা খেলতে নামেন। এই ম্যাচটিকে প্রথম ‘নেটিভ’-দের খেলা ‘পাবলিক ম্যাচ’ বলে চিহ্নিত করা হয়।
এই ম্যাচটি খেলা হয়েছিল তৎকালীন বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর এর সম্পূর্ণ প্রদেশ ভ্রমণের শেষে কলকাতায় ফেরা উপলক্ষে। সেই সময়ে বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর ছিলেন স্যার অগাস্টাস রিভার্স থমসন।
ম্যাচটি খেলা হয়েছিল ঢাকা ও কৃষ্ণনগরের মধ্যে। কৃষ্ণনগরের দুই ক্রিকেটার জ্বরের কারণে খেলতে পারেননি। কিন্তু ঢাকা দল তুলনামূলক ভাবে শক্তিশালী ছিল। ঢাকার বজ্রযোগিনী গ্রামের জমিদার বাড়ির তিন ভাই বসন্তকুমার গুহ, অশ্বিনীকুমার গুহ ও যোগেন্দ্রকুমার গুহ ঢাকার হয়ে খেলতে নামেন।
দুপুর ১১:৪৫ নাগাদ ম্যাচ শুরু হয়। বসন্তকুমার গুহ ও ভগবতী চরণ দত্তের (দুজনেই ৫ উইকেট পান) বোলিং এর সামনে মাত্র ৭০ রানে অল আউট হয়ে যায় কৃষ্ঁনগর। খেলায় কৃষ্ণনগর কলেজের প্রিন্সিপাল জে এ মার্টিন ৩৪ ও চিরসরিৎ লাহিড়ী ১৭ করেন।
জবাবে দ্রুত গতিতে প্রথম চারটে উইকেট অল্পরানের মধ্যে পড়ে গেলেও জে ভি এস পোপ ৫৪ ও বসন্তকুমার গুহ ২৯ করায় ১২৮ রান তোলে ঢাকা। এই দুই ব্যাটসম্যান মাঠের চারদিকে শট খেলছিলেন। মার্টিন একাই ৯ উইকেট পান।
দ্বিতীয় ইনিংসে কৃষ্ণনগর ৪ উইকেটে ২১ তোলার পরে ম্যাচ ড্র হয়ে যায়। দুটি করে উইকেট পান ভগবতীচরণ ও বসন্তকুমার গুহ।
এই বসন্তকুমার গুহ ছিলেন প্রথম দুইজন বাঙালীর একজন (অপরজন সারদারঞ্জন রায়) যাঁরা ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণ করেন।
খবরে প্রকাশ , বোন অ্যান্ড শেফার্ড এই ম্যাচের গ্রুপ ফটো তুলেছিলেন। ঢাকা দলের কলকাতা আসা-যাওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিলেন বাবু প্রতাপ চন্দ্র চ্যাটার্জি।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান ডেইলি নিউজ, ২৪ পৃষ্ঠা, ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ১৮৮২। ওভারল্যান্ড সংস্করণ।