তাজের শহরের ছেলের হাত ধরেই এল সিরিজের তাজ; ‘রাহুল স্যার’-কে ধন্যবাদ দিচ্ছেন ম্যাচের নায়ক
স্পোর্টি ওয়ার্ল্ড নিউজ ডেস্ক‘সামার অফ সিক্সটি নাইন’। লোকগাথায় ঢুকে পড়া ব্রায়ান অ্যাডামসের সেই গানই যেন ফিরে এল মঙ্গলবারের প্রেমদাসা স্টেডিয়ামে। সৌজন্যে দীপক চাহর। আট নম্বরে নেমে অপরাজিত ৬৯ রানের ইনিংসে যিনি ঝলসে দিলেন লঙ্কার সিংহদের। অবশ্যম্ভাবী হারের মুখ থেকে ছিনিয়ে আনলেন অবিশ্বাস্য জয়! তাজমহলের শহরের ছেলের দৌলতেই সিরিজের তাজ শিখর ধায়ানদের মাথায়। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই।
২৭৬ রান তাড়া করতে গিয়ে স্কোরবোর্ডে ১৬০/৬। কিছুক্ষণ পরে ১৯৩/৭। নয়ের দশকের শেষের দিক হলে এই অবস্থা থেকে নিশ্চিতভাবেই হার হজম করতে হত ভারতকে। আর প্রেমদাসা স্টেডিয়াম হলে হার আরও নিশ্চিত করে দিতেন চামিন্ডা ভাস এবং মুথাইয়া মুরলিধরন নামের দুই বিভীষিকা। কিন্তু দু’দশক পরে ছবিটার আমূল পরিবর্তিন হয়ে গিয়েছে। ২২ গজ থেকে ভাসদের প্রজন্ম বিদায় নেওয়ার পরে আর সেই মাপের দল গড়ে উঠতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। উল্টোদিকে, টিম ইন্ডিয়ার পাইপলাইনে একের পর এক প্রতিভা। যাঁরা সামান্যতম সুযোগেও নিজেদের প্রমাণ করতে মরিয়া। মঙ্গলবারের চাহরই যেমন। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সাত রান খরচ করে ছ’উইকেট নিয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্রিকেটে বিশ্বরেকর্ড। কিন্তু একদিনের ক্রিকেটে সেভাবে দাগ কাটতে পারছিলেন না। এদিনও বল হাতে দু’উইকেট নিলেন। কিন্তু খরচ করলেন আট ওভারে ৫৩ রান। তবে দিনের শেষে সেসব ফিকে হয়ে যাচ্ছে তাঁর ব্যাটিং বিক্রমের সামনে। অষ্টম উইকেটে ভুবনেশ্বর কুমারকে (১৯ অপরাজিত) সঙ্গে নিয়ে গড়লেন ৮৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। ভারতের পক্ষে অষ্টম উইকেট জুটিতে যা সর্বোচ্চ। আর সেই জুটিই কেড়ে নিয়ে গেল দাসুন শানাকাদের মুখের গ্রাস।
আগের ম্যাচের থেকে এদিনের পিচে স্ট্রোক খেলার সুযোগ ছিল অনেক বেশি। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েই প্রথম উইকেটে ৭৭ রান তুলে নিয়েছিলেন অভীষ্কা ফার্নান্ডো ও মিনোদ ভানুকা। কিন্তু ১৪ তম ওভারে পরপর দু’বলে মিনোদ (৩৬) ও ভানুকা রাজাপক্ষেকে (০) ফিরিয়ে শ্রীলঙ্কাকে জোর ধাক্কা দেন যুজবেন্দ্র চাহল। কিন্তু অভীষ্কা (৫০) ও ধনঞ্জয় ডি সিলভা (৩২) তৃতীয় উইকেটে কিছুটা সামলে দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বল্প ব্যবধানে দু’জনই আউট হওয়ায় ফের সমস্যায় পড়ে যায় শ্রীলঙ্কা। কিন্তু চরিথ অসালঙ্কা (৬৫) এবং চামিকা করুণারত্নের (৩৩ বলে ৪৪ অপরাজিত) পালটা আক্রমণ ২৭৫-এ পৌঁছে দেয় শানাকাদের। চাহল (৩/৫০), ভুবনেশ্বররা (৩/৫৪) নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট তুললেও ডেথ ওভারে রানের গতি সেভাবে রুখতে পারেননি।
প্রথম দু;ওভারে আধডজন বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সাড়াজাগানো শুরু করেছিলেন পৃথ্বী শ এবং ধাওয়ান। কিন্তু তৃতীয় ওভারে হাসারঙ্গার গুগলিতে কাট করতে বোল্ড হয়ে যান পৃথ্বী (১৩)। আগের ম্যাচে নজর কাড়া ঈশান কিষাণও (১) ব্যর্থ। দলীয় ৬৫ রানের মাথায় ধাওয়ানও (২৯) হাসারঙ্গার শিকার হন। চতুর্থ উইকেটে ৫০ রান যোগ করে পরিস্থিতি কিছুটা সামলান মণীশ পাণ্ডে ও সূর্যকুমার যাদব। কিন্তু সুর্যকুমারের স্ট্রেট ড্রাইভে মণীশ (৩৭) দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউট হয়ে যান। পরের ওভারেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন হার্দিক পাণ্ড্যও (০)। যাঁকে এখনও ম্যাচফিট বলে মনেই হচ্ছে না। স্কোরবোর্ডে তখন ১১৬/৫। সূর্যকুমার ৫৩ রান করে লক্ষণ সান্দাকানের বলে এলবিডব্লু হয়ে যান। সেখান থেকে হাল ধরেন চাহর। ক্রুনাল পাণ্ড্য (৩৫) ক্রিজে থাকাকালীন কিছুটা ম্রিয়মানই ছিলেন চাহর। প্রথম ১৮ বলে করেছিলেন মাত্র দু’রান। কিন্তু পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিং করে এবং শ্রীলঙ্কার নিম্নমানের ফিল্ডিং-এর ফায়দা তুলে তিনিই দুর্দান্ত জয় এনে দেন দলকে।
বলা হয়, সমস্ত ভাল ছাত্রই ভবিষ্যতে ভালো শিক্ষক হতে পারেন না। কিন্তু যিনি হন তিনি অন্যদের কয়েক আলোকবর্ষ পিছনে ফেলে দেন। রাহুল শরদ দ্রাবিড় কি সেরকমই একজন? ধাওয়ানদের নতুন হেডস্যারের পারফরম্যান্স আপাতত সেই কথাই বলছে। ম্যাচসেরার পুরস্কার নিয়ে চাহরই যেমন বলে গেলেন, “ব্যাটিং-এর জন্য প্রয়োজনীয় আত্মবিশ্বাস রাহুল স্যারই যুগিয়েছেন। বলেছেন, ব্যাটিং অর্ডারে সাত নম্বরের জন্য তৈরি তুমি। সেই কথা মাথায় রেখেই এগোচ্ছি।“