গ্রেসের বিরুদ্ধে খেলেছিল পার্সিদের দল
সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়বুধবার থেকে শুরু হল ক্রিকেট দুনিয়ার ৮৯ বছরের পুরনো ক্রিকেট সিরিজ। ভারত বনাম ইংল্যান্ড। যার বর্তমান নাম পতৌদি ট্রফি। একবার নজর করা যাক এর ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে।
ব্রিটিশ উপনিবেশ হওয়ার ফলে ভারতে ক্রিকেট ব্রিটিশদের হাত ধরেই শুরু হয়। ঠিক আজ থেকে ৩০০ বছর আগে। উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে ভারতীয়রা ক্রিকেট খেলা শুরু করে। মূলতঃ পার্শিরা ভারতে প্রথম ক্রিকেটের অনুগামী হন। পার্শিদের প্রথম ক্রিকেট ক্লাব ওরিয়েন্টাল সিসি তৈরি হয় ১৮৪০ সালে।
এরও প্রায় চার দশক পরে ডঃ ডি এইচ প্যাটেলের উৎসাহে ও সাহায্যে ১৮৮৬ সালে তিন মাসের সমুদ্রযাত্রা করে ইংল্যান্ডে পৌঁছয় পার্শিদের দল। সেখানে দ্বিতীয় ম্যাচেই এমসিসির বিরুদ্ধে খেলতে নামে তারা। এমসিসির অধিনায়ক ছিলেন ডব্লিউ জি গ্রেস। যদিও সেই সফরে ২৮ ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটি ম্যাচে জয়ী হয় পার্শিরা। মাত্র ১ বার ২০০ রান তোলে ও চারটে হাফ সেঞ্চুরি হয়,শাপুর ভেদওয়ারের হ্যাটট্রিক ছাড়া বলার কিছুই ছিল না এই সফরে। তবুও উৎসাহিত হয়ে ১৮৮৮ সালেই তাঁরা আবার ইংল্যান্ড যান। আগের দলের মাত্র দুজন এই দলে ছিল।
১৮৮৮ সালের সফর ছিল মনে রাখবার মতো। ৩১টি ম্যাচের মধ্যে ৮ জয়, ১২টি ড্র। মেহেলসা পাভরি ১৭০ টি উইকেট নেন। কথিত আছে নরফোকের বিরুদ্ধে ম্যাচে তাঁর বলে উইকেটের বেল ৫০ গজ দূর থেকে কুড়িয়ে আনতে হয়। ব্যাট হাতে কুপার ৯৫২ করেন। রাইটার ও বাপাসোলা এই সফরেই সুযোগ পান। এই সফর উৎসাহিত করে ব্রিটিশদের। ফলে জি এফ ভার্নানের নেতৃত্বে একটি অপেশাদার দল ভারতে সফর করে ১৮৮৯-৯০ মরশুমে।
সিলোন থেকে কলকাতা, পাঞ্জাব, আগ্রা, লখনৌ, বম্বে ইত্যাদি শহরে ১৩টি ম্যাচ খেলে ১০ টি জয়ী হয় এই দল।একটি হারে(পার্শিদের কাছে)। দুটি ড্র করে।
কলকাতায় গ্রিনওয়ে শতরান করেন। যদিও ভার্নানের দলের হয়ে আর্থার গিবসন ১৩ ম্যাচে ৩৯২ রান করেন ও ৬৪টি উইকেট নেন। বল হাতে হর্নসবি ১০ ম্যাচে ৬৮ উইকেট নেন, ভার্নান ব্যাট হাতে ১১ ম্যাচে ৪৭৭ করেন।
এর পর ইংল্যান্ডের প্রাক্তন টেস্ট ক্যাপ্টেন লর্ড হ্যারিস বম্বের ছোটলাট হয়ে ভারতে এলে প্রেসিডেন্সি কাপ চাপ চালু করেন। ওই বছরেই লর্ড হক ভারতে দল নিয়ে আসেন। যাঁর বেশিরভাগ খেলোয়াড় তখনই বা পরে টেস্ট খেলে। এই দলটি চারটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে ভারতে।এর মধ্যে একটা ম্যাচে পার্শিরা জেতে, একটা হারে।এই দলে স্ট্যানলি জ্যাকসন ছিলেন (পরে বাংলার ছোটলাট হন, যাকে সুভাষচন্দ্র বসুর স্কুল মাস্টার বেণীমাধব দাশের মেয়ে বীণা দাশ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশনে গুলি করেছিলেন)।
এই সফরেই ভারত প্রথম বেসরকারি টেস্ট খেলে এলাহাবাদের আলফ্রেড পার্ক(বর্তমানে মদনমোহন মালব্য পার্কে)।
লর্ড হক তাঁর আত্মজীবনীতে ইডেনের প্রশংসা করে একে ওভালের থেকে ভালো মাঠ বলেছিলেন।
এর কিছুদিনের মধ্যেই ইংল্যান্ডের হয়ে রঞ্জি টেস্ট খেলেন ও অভিষেকেই শতরান করেন।
১৯০২-০৩ সালে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি অথেনটিক ভারতে খেলতে এসে জেন্টলম্যান অফ ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে বেসরকারি টেস্ট খেলেন। ভারতের হয়ে ইংল্যান্ডের প্রাক্তন টেস্ট ক্রিকেটের সি টি স্টাড খেলেছিলেন। আবার ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছিলেন লব বোলিং এর শেষ জাদুকর সিম্পসন হেওয়ার্ড। গোটা সফরে দলটি ১৯টি ম্যাচ খেলে। যার মধ্যে সিম্পসন-হেওয়ার্ড ১৮ ম্যাচে মোট ৮৭০ রান করেন ৩৪ গড়ে ও ১০২টি উইকেট নেন ১১ গড়ে। সঙ্গে ১৯টি ক্যাচ। এর মধ্যে পেশোয়ারের বিরুদ্ধে ডবল সেঞ্চুরি, যুক্ত প্রদেশের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ও বিহার ওয়ান্ডারার্সের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক ও অওধের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে ১৯ রানে ৮ উইকেট, তাঁর পারফরম্যান্সের স্মরণীয় ঘটনা। ইডেনে দুটি ম্যাচেই খেলেছিলেন। যদিও গোটা সফরে মাত্র তিনটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ ছিল, উনি তাতে ৯৩ রান করেন (সর্বোচ্চ ৪৫) ও ১০ উইকেট পান। ম্যাচগুলি বম্বে (জংলি গ্রেগের ডবল সেঞ্চুরি), পার্শি ও জেন্টলম্যান অফ ইন্ডিয়া (বেসরকারি টেস্ট) দলের বিরুদ্ধে ছিল।
ছবিতে-১৮৮৬ সালে পার্সিদের সেই দল।