• +91 6291642485
  • 6291642485
Banner

খেলার বিভাগ > ক্রিকেট

শামি-বুমরার যুগলবন্দিতে লর্ডস জয় ভারতের

দুরন্ত স্পেলে ফের জাত চেনালেন সিরাজ; অভিজ্ঞতায় বাজিমাত ইশান্তের

ময়ূখ লাহিড়ী

ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বলতেন, “আমার অভিধানে অসম্ভব বলে কোনও শব্দ নেই।“ মহম্মদ শামি বা জসপ্রীত বুমরা সেই লেখা পড়েছেন কি না জানা নেই। তবে সোমবার যেরকম অভাবনীয়ভাবে তাঁরা দলকে জয়ের সরণিতে নিয়ে গেলেন তাকে কার্যত অসম্ভবের পর্যায়েই ফেলা যায়। ক্রমাগত পট পরিবর্তন আর পরতে পরতে নাটক। এই দুইয়ে মিলেই সাত বছর পর লর্ডস টেস্টে জয় এনে দিল টিম ইন্ডিয়াকে। ১৫১ রানে জিতে সিরিজে ১-০ এগিয়ে গেল বিরাট কোহলি অ্যান্ড কোং। যে জয়ে উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করলেন দলের পেস চতুর্ভুজ। পরপর দু’মাচে যাঁরা জো রুটের দলকে চারবার অল আউট করলেন।

চতুর্থ দিনের শেষে কোহলিদের রান ছিল ছ’উইকেটে ১৮১। সাকুল্যে ১৫৪ রানের লিড। ব্যাটসম্যান বলতে অবশিষ্ট ছিলেন শুধু ঋষভ পন্থ। তার উপর শেষ দিন সকালেই নতুন বল পেয়ে গিয়েছিলেন জেমস অ্যান্ডারসনরা। টিম ম্যানেজমেন্ট চেয়েছিল, শুরুটা সামলে দিয়ে প্রতি-আক্রমণের রাস্তায় যান পন্থ। কিন্তু সে গুড়ে বালি। স্বভাববিরুদ্ধ্বভাবে রক্ষণাত্মক হতে গিয়ে নতুন বলের শিকার হলেন পন্থ (২২)। দিনের খেলার বয়স তখন ১৫ মিনিট। সামান্য পরেই প্যাভিলিয়নে ইশান্ত শর্মাও (১৬)। দলের রান তখন আট উইকেটে ২০৯। লিড ১৮২ রানের। হারের জুজু তখন রীতমতো জাঁকিয়ে বসেছে লর্ডসের অ্যাওয়ে টিমের ব্যালকনিতে।

এখান থেকেই শুরু উলটপুরাণ। অ্যান্ডারসন, রবিনসন, উড, কারান, মইন আলিদের উদ্দেশ্যে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন বুমরা এবং শামি। এর মধ্যে শামির ব্যাটিং ছিল আলাদা করে চোখে পড়ার মতো। দেখে বোঝার কোনও উপায় নেই যে ব্যাটিং অর্ডারে তাঁর নাম ন’নম্বরে। উল্টোপ্রান্তে সাধ্যমতো যুঝছিলেন বুমরাও। জয়ের গন্ধ পেয়ে তখন বেপরোয়া ইংল্যান্ড। চতুর্থ দিন থেকেই বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছিল উড এবং রোরি বার্নসকে নিয়ে। অভিযোগ, বল বিকৃত করতে জুতোর স্পাইক ব্যবহার করেছেন তাঁরা। ভিডিও ফুটেজে ধরাও পড়েছিল সেই ছবি। তার পর থেকেই উত্তপ্ত হচ্ছিল পরিবেশ। চলছিল বাছাই করা বিশেষণ বর্ষণ। স্লেজিং-এর পরিস্থিতি সামাল দিতে হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছিল আম্পায়ারদেরও। কিন্তু টলানো যায়নি শামি বা বুমরাকে। একদিকে রান যেমন বাড়িয়ে নিচ্ছিলেন, তেমনই মূল্যবান সময় কেড়ে নিচ্ছিলেন রুটদের থেকে। এরই মধ্যে মইনকে ৯২ মিটারের বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে অর্ধশতরানে পৌঁছে গিয়েছিলেন শামি। টেস্ট কেরিয়ারে তাঁর দ্বিতীয় অর্ধশতরান। কিন্তু পরিস্থিতির বিচারে যে কোনও শতরানের চেয়ে বেশি দামী। শেষমেশ দ্বিতীয় সেশনে মিনিট দশেক খেলার পর কোহলি যখন ডিক্লেয়ারের সিদ্ধান্ত নিলেন তখন দলের রান আট উইকেটে ২৯৮। নবম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৮৯ রানের জুটি। শামি অপরাজিত ৫৬ রানে। বুমরা অপরাজিত ৩৪ রানে।

জেতার জন্য ৬০ ওভারে চাই ২৭২ রান। আস্কিং রেটের দিক থেকে দেখলে এই টি-২০ জমানায় অতিমানবিক কিছু নয়। কিন্তু টেস্ট আর টি-২০ ক্রিকেটের পার্থক্য যে ওখানেই! পঞ্চম দিনের সহজ হয়ে আসা পিচেও ব্রিটিশ ওপেনারদের একেবারে শূন্য হাতে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠালেন বুমরা এবং শামি। তবে রোহিত ক্যাচ না ফেললে ছ’রানের মাথায় হাসিব হামিদের উইকেটও খোয়াতে হত ইংল্যান্ডকে। পঞ্চম বোলার হিসাবে আক্রমণে এসেই ইশান্ত ফেরালেন হামিদকে (৯)। চা-বিরতির আগে শেষ বলে ইশান্তের শিকার হলেন জনি বেয়ারস্টোও (২)। ইংল্যান্ডের চার উইকেট ফেলে দিয়ে তখন রক্তের স্বাদ পেয়ে গিয়েছেন কোহলিরা। সেই খুনে মেজাজ সম্বল করেই পথের কাঁটা জো রুটকে (৩৩) ফেরালেন বুমরা। ইংল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে তখন ৬৭/৫। ম্যাচের বাকি ৩৭.৩ ওভার। এই পরিস্থিতিতে ঘণ্টাখানেক ভারতকে আটকে দিয়েছিলেন জস বাটলার এবং মইন। কিন্তু মহম্মদ সিরাজ নতুন স্পেলে আক্রমণে এসে পরপর দু’বলে ফিরিয়ে দিলেন মইন (১৩) এবং কারানকে (০)। সাত উইকেট পড়ে যাওয়ার পরেও দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করছিলেন বাটলার ও রবিনসন। কিন্তু ম্যাচ হাত থেকে বেরোতে দেননি সিরাজ ও বুমরা। ১২০ রানেই শেষ ইংল্যান্ডের যাবতীয় প্রতিরোধ। সিরাজ ৩২ রানে চারটি এবং বুমরা ৩৩ রানে তিনটি উইকেট নেন। পাশে মানানসই ইশান্ত (২/১৩) ও শামি (১/১৩)।

তবে ম্যাচ কোনওভাবে ড্র হয়ে গেলে নিশ্চিতভাবেই আঙুল উঠত কোহলির দিকে। তখন দু’রানে ব্যাট করছিলেন বাটলার। সেই সময় বুমরার বলে স্লিপে যে দুধ-ভাত মার্কা ম্যাচ অধিনায়ক ফস্কালেন যা যে কোনও স্কুল ক্রিকেটারকেও লজ্জায় ফেলবে।

২৫ আগস্ট থেকে লিডসে শুরু সিরিজের তৃতীয় টেস্ট।

     

বিজ্ঞাপন

Goto Top