১৯ বছর আগে এই মাঠেই রোমহর্ষক টেস্ট জয় সৌরভদের
সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়সালটা ২০০২। পৃথিবী তখনও আজকের মতো ছিল না। সোশ্যাল মিডিয়া তখন খায় না মাথায় দেয় গোছের ব্যাপার। ফলে ফেসবুক তো দূর অস্ত, অর্কুটই ছিল না। পুরনো html ভার্সনে ই-মেল চলতো, লোকে চ্যাট করতো। বহু ফোনে সিম কার্ড ছিল না।
এ বারের ভারত বনাম ইংল্যান্ড টেস্টের আগে সেই সময়েই শেষ বার হেডিংলেতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলেছিল ভারত। সেখানে এর আগে ১৯৫২, ১৯৫৯, ১৯৬৭ সালে ভারত হেরেছিল। ১৯৫২ সালে বিজয় মঞ্জেরেকরের ১৩৩ ও ১৯৬৭ সালে মনসুর আলি খান পতৌদির ১৪৮ করা সত্বেও।
১৯৭৯ সালে ড্র হয়। ১৯৮৬ সালে ভারত জেতে।
২০০২ সালে ভারত গিয়েছিল ইংল্যান্ড সফরে। ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি জেতার পরে প্রথম টেস্টে প্রচুর লড়াই করেও (আগরকারের ১০৯) ভারত হেরে যায় ১৭০ রানে। দ্বিতীয় টেস্ট পার্থিব প্যাটেল ড্র করতে সাহায্য করেন। তৃতীয় টেস্ট, মেঘলা আবহাওয়া। বিপক্ষ দলে ডারেন গফ, অ্যান্ডি ক্যাডিক আছেন। এমনই পিচ যেখানে মুরলীর গড় ৬০, ওয়ার্নের ৯০।
সে বারেও টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলী। সঙ্গে কুম্বলে ও হরভজন এর বোলিং। যেটা কেউ ভাবে নি, এই পিচে ভারত দুটো স্পিনার খেলবে। টস জিতে ব্যাটিং নিলো ভারত এবং দিনের শেষে মাত্র দুটি উইকেট হারিয়ে ২৩৬ তোলে সৌরভের টিম ইন্ডিয়া। দ্রাবিড় ১১০ রানে ব্যাট করছেন। সঙ্গে শচীন। প্রথম উইকেট অবশ্য টেকেনি। সেহবাগ করেন ৮। এর পর সঞ্জয় বাঙ্গার(৬৮)ও রাহুল দ্রাবিড় দ্বিতীয় উইকেটে ১৭০ রান যোগ করলেন। তারপরেই বাঙ্গার আউট।
নামলেন শচীন। দ্রাবিড় (১৪৮) ও বাঙ্গার মিলে ১৭০ রান যোগ করেছিলেন দ্বিতীয় উইকেটে। আর শচীন ও দ্রাবিড় ১৫০ যোগ করেন। পরের জুটিতে ২৪৯ রান যোগ করার পরে শচীন (১৯৩) ও সৌরভ(১২৮)এর জুটি ভাঙে। দ্বিতীয় দিনের শেষে ভারত ৫৮৪/৪।
ভারত তৃতীয় দিন ৬২৮/৮ তুলে ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা করে দেয়।
জবাবে ইংল্যান্ড দাঁড়াতেই পারেনি। প্রথম ইনিংসে ২৭৩ করে ফলো অন করে। অজিত আগারকর ও জাহির খান দুটি করে, হরভজন ও কুম্বলে ৩টি করে উইকেট নেন। ভন ৬১ ও স্টুয়ার্ট ৭৮ রান করেন।
জবাবে দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ড ৩০৯ তোলে। কেবল মাত্র নাসের হুসেন শতরান করেন। কুম্বলে চারটে উইকেট নেয়। ভারত ম্যাচটি ইনিংসে জেতে।
মনে রাখতে হবে, উইজডেন এশিয়া পত্রিকা এই ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করার ও দুই স্পিনার খেলানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া কে ‘সহস্রাব্দের সেরা’ সিদ্ধান্ত বলে ঘোষণা করেছিল।
১৯ বছর আবার হেডিংলে। এ বারও টস জিতে ব্যাট করেছে ভারত। পার্থক্য হল, এ বার জিমি অ্যান্ডারসনের আগুনে বোলিংয়ের সামনে এক প্রকার গুঁড়িয়ে গিয়েছে ভারত। কিন্তু চরম অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে কখন কী হয়, তা কে জানে? এ বারও কিছু স্পেশ্যাল ম্যাজিক হবে নাকি? প্রথম দিনের খেলার শেষে সেই আশাতেই ভারতীয় সমর্থকেরা।