দাঙ্গা বদলে দিয়েছিল পাঞ্জাবের দুই ক্রিকেটারের জীবন
সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়সেটা ১৯৪৬/৪৭..... ভারতের অবস্থা তখন খুবই উত্তপ্ত। দেশভাগ হচ্ছেই এটা সবাই জেনে গেছে। তুলকালাম চলছে চারদিকে। '৪৬ এর আগস্টে ডাইরেক্ট একশন ডে পর্বও মিটে গেছে। তার প্রতিক্রিয়া চলছে গোটা দেশ জুড়ে। জ্বলছে বাংলা, জ্বলছে পাঞ্জাব।
এমন সময় ভারতীয় ক্রিকেট মহলে আবির্ভাব ঘটেছে এক তরুণ পাঞ্জাবীর লাহোরের মুসলিম পরিবারের ছেলে নর্দান ইন্ডিয়ার রঞ্জি খেলতে নেমেছিলেন সেই ১৭ বছর বয়সে। ১৯৪৭ এর মার্চ অবধি রঞ্জি ও অন্যান্য প্রথম শ্রেণির ম্যাচে প্রায় ১৮ গড়ে ৫৩ টি উইকেট তুলে নিয়েছেন মাত্র ১৩ ম্যাচে। ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি আছে। ভারত তখন সদ্য টেস্ট খেলে ফিরেছে ইংল্যান্ড থেকে এবং ঐ দল নিয়ে অবশিষ্ট ভারতের সঙ্গে বেশ কয়েকটা ম্যাচ খেলেছে, চেষ্টা করছে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার। এই যুবককে তো বাদ দেওয়া যায় না। ইনিও নির্বাচিত হলেন। এর নাম ? --- ফজল মামুদ।
এদিকে আর এক লাহোরের পাঞ্জাবী, মুসলিম ভারতে ক্রিকেট খেলে বিখ্যাত হয়েছে। একই মরশুমে (১৯৪৩/৪৪) তিনিও খেলা শুরু করেন নর্দান ইন্ডিয়ার হয়ে রঞ্জি ট্রফি খেলা। এরপরে বোম্বে পেনটাঙ্গুলার এ মুসলিম দলের হয়ে খেলেন, ভারতের তিনটে বেসরকারি ও তিনটে সরকারি টেস্ট খেলেন, এমনকি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে ভার্সিটি ম্যাচ খেলেন। তিনিও অস্ট্রেলিয়া সফরে নির্বাচিত হন ভারতের হয়ে। ততদিনে ৪১টি প্রথম শ্রেণির খেলায় ২২০০ রান হয়ে গেছে ৪টে শতরান সহ ও ৭৯ উইকেট। এর নাম আব্দুল হাফিজ।
দলে আছেন আমির ইলাহী, গুল মহম্মদ এমনকি জাহাঙ্গীর ইরানী।
ইরানী, গুল মহম্মদ, ইলাহীরা পৌঁছে গেলেন। কিন্তু দাঙ্গায় আটকে গেলেন আব্দুল হাফিজ। চেয়ে বসলেন প্লেন ভাড়া। ট্রেনে দিল্লী পৌঁছনো মোটেই সুখকর হবে না।
এদিকে ফজল অতি কষ্টে লাহোরের এয়ারপোর্টর দিকে রওনা দিলেও জানতে পারলেন কসাইয়ের মতো কাটাকাটি খুনোখুনি হচ্ছে। এক সহৃদয় ব্যক্তি তাঁকে টিকিট দিয়ে করাচী পাঠিয়ে দিলেন। সেখানে নিরাপদে পৌঁছে তিনিও প্লেন ভাড়া চাইলেন বোর্ডের কাছে।
বোর্ড রাজি হলো না। ফলে ফজল আর আবদুলের যাওয়া হলো না অস্ট্রেলিয়া। তাঁরা পাকিস্তানেই রয়ে গেল।
এরপর পাকিস্তান টেস্ট খেললে আব্দুল হাফিজ নামের সঙ্গে কারদার যোগ করে হয়ে গেলেন পাকিস্তানের প্রথম ক্যাপ্টেন আর দুনিয়া জুড়ে ইমরান-সরফরাজ-ওয়াসিম-ওয়াকার-শোয়েব আখতার- দের পূর্বসূরি হয়ে কাঁপাতে চলে এলেন ফজল মামুদ। বদলে গেল ইতিহাসের গতিপথ। যিনি ৬টি রঞ্জি ম্যাচে নিয়েছিলেন ১৯ উইকেট, তিনি ১০টি কায়েদ এ আজম ট্রফিতে তুললেন ৬২ উইকেট।
প্লেন ভাড়া পেলে ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফরের ফল অন্যরকম দাঁড়াতো।