টেস্ট দলে তিনি সুযোগ না-পাওয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন ল্যাংডেন
সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়একবার সত্যজিৎ রায় স্কুলে পড়ার সময় মহা সমস্যায় পড়ে যান। তাঁকে কিছু ছেলে জিজ্ঞাসা করেছিল পঞ্চম জর্জ তাঁর কি রকম আত্মীয় ? বহু বছর পর ‘যখন ছোট ছিলাম’ গ্রন্থে জানান, স্কুলে আগে থেকেই সবাই জানত সুকুমার রায় তাঁর বাবা এবং উপেন্দ্রকিশোর রায় তাঁর ঠাকুর্দা। এর ওপর যখন জানাজানি হয়ে গেল যে এইচএমভি-র শিল্পী কনক দাশ তাঁর মাসি এবং প্রখ্যাত ক্রিকেটার কার্তিক বোস তাঁর কাকা তখনই এই জাতীয় কৌতুক তাঁকে শুনতে হয়েছিল।
হ্যাঁ, কার্তিক বসু ছিলেন সত্যজিৎ রায়ের পিসিঠাকুমার ছেলে। অর্থাৎ ‘কেশে মাখো কুন্তলীন, রুমালেতে দেলখোশ / পানে খাও তাম্বুলীন, ধন্য হোক এইচ বোস’ ছড়ার এইচ বোস মানে হেমেন বোসের ছেলে। হেমেন-মৃণালিনীর অনেক ছেলে মেয়ে। তাঁর মধ্যে হিতেন, বাবু, বাপি, কার্তিক আর গণেশ ছিলেন ক্রিকেটার। কার্তিক বসু ছিলেন এঁদের মধ্যে সেরা ব্যাটসম্যান।
প্রথম বাঙালী ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে শতরান করেন কার্তিক বসু। ১৯২০ ও ১৯৩০ দশকের সেরা বাঙালী ব্যাটসম্যান ছিলেন তিনি। ১৯৪০-এর দশকেও চুটিয়ে খেলেছেন তিনি। বাংলার প্রথম রঞ্জি জয়ী দলের সদস্য ছিলেন কার্তিক বসু। তার আগে ভারতের হয়ে বেসরকারি টেস্টও খেলেন তিনটি। তাঁকে সরকারি টেস্টে না নেওয়ায় রবার্ট ল্যাংডেন প্রকাশ্যে বাংলাকে বঞ্চনা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। বাংলা ও বাঙালিকে ক্রিকেটে সেই প্রথম বঞ্চনার অভিযোগ।
সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ব্রেবোর্ন স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখেছিলেন কার্তিক বসুর ছবি। গর্বে তাঁর বুক ফুলে উঠেছিল। একমাত্র বাঙালী ক্যাপ্টেন হিসেবে সিসিআই কে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কার্তিক বসু। খেলেছিলেন হিন্দু দলের হয়েও।
১৯৮৯-৯০ সালে রঞ্জিজয়ী দলের অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু নন, আরমহার্স্ট স্ট্রিটের ওই বাড়িতে সেই শান-বাঁধানো উইকেটে প্র্যাকটিসে যেতেন পরবর্তী কালের বাংলার অনেক মহীরুহ। আজও ময়দানের আনাচে-কানাচে কান পাতলে শোনা যায় কার্তিক বসুর কোচিং-এর গল্প। তাঁর ছাত্ররা ময়দানে খেলেছেন নব্বই দশকের শেষার্ধ অবধি, এখন তাঁরা নিজেরাই কোচ।
বাংলার মার্থা গ্রেস ছিলেন মৃণালিনী। চার ভাই, একগাদা ভাইপো, নাতি রা, নিজের ছেলেরা সবাই ক্রিকেটার। আর হেমেন বোস তাম্বুলীন বা দেলখোশ এর জন্য না হলেও ‘বাংলার জ্যাক হবস’ কার্তিক বসুর পিতা হিসেবে গর্ব করতেই পারেন।