টেস্ট খেলেছেন গ্রেস, রণজি, ফ্রাইদের সঙ্গে
সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়বীণা দাসকে মনে পড়ে? নেতাজির স্কুলশিক্ষক বেণীমাধব দাসের মেয়ে। কলকাতার ডায়োসেশনে পড়তেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশনে গুলি করেছিলেন জ্যাকসনকে। পাঁচটি গুলি। জ্যাকসন তখন বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর। পরবর্তীকালে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন বীণা। বিয়ের পর তাঁর পদবী হয় ভৌমিক। মারা যান অনেক পরে। হিমালয়ে। বীণা কি জানতেন যে যাঁকে তিনি গুলি করতে গিয়েছিলেন তিনি উনবিংশ শতকের শেষ ও বিংশ শতকের প্রথম দিকের এক মহান ক্রিকেটার?
১৮৭০ সালে লিডসে জন্ম হয়েছিল স্যার ফ্রান্সিস স্ট্যানলি জ্যাকসনের। তাঁর বাবা ছিলেন অ্যালারটনের প্রথম ব্যারন উইলিয়াম জ্যাকসন। স্যার ফ্রান্সিস হ্যারোতে পড়াশোনা করেছিলেন। যিনি তাঁর ফ্যাগ (যে জুনিয়র তাঁর সিনিয়রের সর্বক্ষণের সঙ্গী হন) ছিলেন তাঁকে পরবর্তীকালে চিনত গোটা দুনিয়া। বার দুয়েক ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীও হয়েছিলেন উইনস্টন চার্চিল নামের সেই ফ্যাগ।
১৭ বছর বয়সে ইটন বনাম হ্যারো ম্যাচ দিয়ে সিনিয়র ক্রিকেটে হাতেখড়ি স্ট্যানলির। কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে প্রথম খেলা ১৮৯০ সালে সি আই থর্নটন একাদশের বিরুদ্ধে। প্রথম টেস্ট থেকেই ব্যাটে রান। ১৮৯৩ সালে লর্ডসে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অভিষেকেই ৯১ রান। অভিষেকে ‘নার্ভাস নাইন্টি’-তে আউট হওয়া প্রথম ব্যাটসম্যান। পরের বছর উইজডেনের বর্ষসেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার। ১৯০৫ সালে কেনিংটন ওভালে ৭৬ ও ৩১ করে টেস্ট খেলা শেষ করেন। কখনও ইংল্যান্ডের বাইরে খেলেননি স্যার স্ট্যানলি। মাত্র ২০ টি টেস্ট খেলেছিলেন। তাতেই পাঁচটি শতরান-সহ ১৪১৫ রান। ব্যাটিং গড় ৪৮.৭৯। পাশাপাশি, ২৪ টি উইকেটও নিয়েছিলেন। খেলেছিলেন ডব্লু জি গ্রেস, রণজি এবং সি বি ফ্রাই-এর মতো ক্রিকেটারদের সঙ্গে।
১৯০৫-এর অ্যাশেজে ইংল্যান্ডকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন স্যার স্ট্যানলি। দু’টিতে জিতেছিলেন। ড্র হয়েছিল তিনটি ম্যাচ। অর্থাৎ, অধিনায়ক হিসাবে অপরাজিত ছিলেন।
ক্রিকেট কেরিয়ার চলাকালীনই সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন স্যার স্ট্যানলি। লড়েছেন ১৯০০ সালের দ্বিতীয় বুয়র যুদ্ধেও। ১৯১৪ সালে কনজারভেটিভ পার্টির পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। ৭৭ বছর বয়সে গাড়ি দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়।
সি বি ফ্রাই তাঁর ওপর বীণা দাসের আক্রমণের খবর শুনে মজা করে বলেছিলেন, “বলতেই হবে যে বোলার অত্যন্ত নিম্নমানের। পাঁচ বল করেও আউট করতে পারল না! তবে কুমারি মেয়ে, তাই ওভারটা ‘মেডেন’ ছিল।“
সেই মেডেন ওভার দেওয়া কুমারী আরও ৩৯ বছর পর হৃষীকেশ মারা যান। ৭৫ বছর বয়সে।
ছবিঃ
উপরে ১৮৯৯ সালে ইংল্যান্ড দলের সঙ্গে স্যার স্ট্যানলি। মাঝে সারিতে দব্লু জি গ্রেসের বাঁদিকে স্যার স্ট্যানলি, ডানদিকে রণজি। নিচে বীণা দাস (বাঁদিকে), সংবাদপত্রে বেরোনো আক্রমণের খবর (মাঝে), অনুশীলনে স্যার স্ট্যানলি (ডানদিকে)।