সেঞ্চুরি ফস্কেও ‘দাদা’-র মুখে হাসি ফোটালেন পৃথ্বী; কাজে এল না দীনেশ-রাসেলের লড়াই
স্পোর্টি ওয়ার্ল্ড ডেস্কআশা ছিল জয়ের হ্যাটট্রিকের। বদলে এল সুপার ওভারে হারের হ্যাটট্রিক। টি-২০ জমানায় এক ওভারে ১১ রান আপাতদৃষ্টিতে সহজ লক্ষ্য বলেই মনে করা হয়। কিন্তু ক্রিকেটের ব্যাকরণ বই থেকে থেকে তুলে আনা বোলিং-এর সামনে সেই লক্ষ্যও সে দুরূহ হয়ে দাঁড়াতে পারে তা দেখিয়ে দিলেন কাগিসো রাবাদা। তাই সুপার ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি হজম করেও দমে যাননি। পরের তিনটি বল যে জায়গায় রাখলেন সেটাই গড়ে দিল ম্যাচের ভাগ্য। ওভারের তৃতীয় বলে যে ইয়র্কারে আন্দ্রে রাসেলের মিডল স্টাম্প উপড়ে দিলেন তা ক্রিকেটীয় পরিভাষায় ‘আনপ্লেয়েবল’। আর সেখানেই শেষ নাইটদের জয়ের আশা। এই নিয়ে আইপিএলে তিনবার সুপার ওভারে গড়াল নাইটদের ম্যাচ। আর তিনবারই ‘ভালো খেলিয়াও পরাজিত’ শাহরুখের দল।
ম্যাচ শুরুর আগেই কিছুটা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিলেন দীনেশ কার্তিকরা। নেপথ্যে চোট পাওয়া সুনীল নারিনের না থাকা। মনে করা হয়েছিল, প্রথম ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও ক্রিস লিনের সঙ্গে নাইটদের ইনিংস ওপেন করতে আসবেন ফর্মে থাকা নীতিশ রানা। যাতে বাঁহাতি-ডানহাতি কম্বিনেশন বজায় রাখা যায়। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে প্রথম বল খেলতে আসেন এদিনই আইপিএলে অভিষেক হওয়া নিখিল নায়েক। সন্দীপ লামিছানের স্পিনের সামনে আটকে যিনি ১৬ বলে ৭ রানের বেশি করতে পারেননি। ফুটওয়ার্কের মারাত্মক সমস্যায় ভুগছেন লিন। এদিনও ২০ বলে ১৮ রানের বেশি করতে পারেননি। রবিন উথাপ্পা (৬ বলে ১১ রান) এবং রানা (২ বলে ১ রান) এদিন ব্যর্থ। কার্তিকের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে শুবমান গিল (৫ বলে ৪ রান) আউট হওয়ার পর কেকেআরের রান দাঁড়ায় পাঁচ উইকেটে ৬১। গড়পড়তা ম্যাচের ভাগ্য ওখানেই ঠিক হয়ে যেত। কিন্তু অন্যরকম ভেবেছিলেন আন্দ্রে রাসেল এবং কার্তিক। ঘাড়ের উপর চড়ে বসা দিল্লিকে পাল্টা আক্রমণ করার ছক নেন তাঁরা। ষষ্ঠ উইকেটে যোগ করেন ৫২ বলে ৯৫ রান। এরই মধ্যে হর্ষল পটেলের বিমারে কাঁধে বড় চোট পান রাসেল। মাঠে একাধিকবার তার শুশ্রুষা করতে হয়। তবুও দমেননি রাসেল। আধডজন ছকা ও চারটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে মাত্র ২৮ বলে করে যান ৬২ রান। উল্টোদিকে ইনিংস ধরার কাজটা করছিলেন কার্তিক। ৩৬ বলে ৫০ রান করে আউট হন তিনি। শেষ ১০ ওভারে ওঠে ১২১ রান। নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে নাইটদের রান দাঁড়ায় আট উইকেটে ১৮৫।
দিল্লি ক্যাপিটালস তৃতীয় ওভারেই শিখর ধাওয়ানের (৮ বলে ১৬ রান) উইকেট হারিয়েছিল। কিন্তু দলকে বিপদে পড়তে দেননি পৃথ্বী শ’ এবং অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার। দ্বিতীয় উইকেটে ৫০ বলে ৮৯ রান যোগ করে ম্যাচের ভাগ্য একরকম ঠিকই করে দিয়েছিলেন তাঁরা। রাসেলের বলে শ্রেয়সের সহজতম ক্যাচ শুবমান ফেলে দেওয়ার পর ম্যাচ থেকে একেবারেই হারিয়ে যাওয়ার মুখে ছিল নাইটরা। কিন্তু দু’বল পরে সেই শুবমানের হাতেই ক্যাচ দিয়ে আউট হন শ্রেয়স (৩২ বলে ৪৩ রান)। জেতার জন্য তখন আট ওভারে ৭০ রান প্রয়োজন দিল্লির। ক্রিজে জমে যাওয়া পৃথ্বীর আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের সামনে সেই লক্ষ্য সহজই দেখাচ্ছিল দিল্লির কাছে। কিন্তু ঋষভ পন্থ (১৫ বলে ১১ রান) এবং পৃথ্বী (৫৫ বলে ৯৯ রান) অল্প ব্যবধানে ফিরতেই কিছুটা চাপে পড়ে যায় দিল্লি। তার আগে স্ট্র্যাটেজিক টাইম-আউটের সময় ডাগ-আউট থেকে এসে পৃথ্বীদের পরামর্শ দিয়ে যান সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। শেষ ওভারে জেতার জন্য মাত্র ছ’রান প্রয়োজন ছিল দিল্লির। কুলদীপের আঁটসাঁটো বোলিংয়ের সামনে প্রথম চার বলে ওঠে চার রান। শেষ দু’বলে দু’রান প্রয়োজন, এমন সময়ে মারতে গিয়ে ডিপ মিড-উইকেটে শুবমানের হাতে ধরা পড়েন হনুমা বিহারী (৩ বলে ২ রান)। শেষ বলে দু’রান নিতে গিয়ে রান আউট হন কলিন ইনগ্রাম (৭ বলে ১০ রান)।
তবে খেলার শেষে অপেক্ষা করে ছিল দিনের সেরা ফ্রেম। যখন একইসঙ্গে উচ্ছ্বসিত মেজাজে দিল্লির ডাগ- আউটে ধরা দিলেন কোচ রিকি পন্টিং এবং পরামর্শদাতা সৌরভ। কে বলবে ঠিক ১৬ বছর আগে এক মার্চেই বিশ্বকাপ ফাইনালে দু’জন ছিলেন যুযুধান প্রতিপক্ষ!