ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের তিন মহারথীর জন্মদিনে বিশেষ প্রতিবেদন
সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়নীল সমুদ্রে ঘেরা ছোট-বড় দ্বীপ। আফ্রিকা থেকে দাস হিসেবে নিয়ে আসা কালো মানুষরা এখানে থাকত। বহুদিন দাসত্ব ছিল তাঁদের। তারপর তাঁরা স্বাধীন হন। নারকেল গাছ আর আখের ক্ষেতে কাজ করা মানুষগুলোর একমাত্র ভালোবাসা ছিল ক্রিকেট। এহেন দ্বীপগুলি একত্র করে তৈরি হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবিয়ান উপসাগরের এই দ্বীপগুলোয় জন্মেছেন ক্রিকেটের মহাতারকারা। ২১ সেপ্টেম্বর এমনই এক দিন। যে দিনে তিন জন মহাতারকার জন্ম।
১.
ঠাকুরদা ছিলেন দাস। বাবা প্রথম প্রজন্ম হিসেবে দাসত্ব থেকে মুক্তি পান। বাবা ছিলেন উইকেট কিপার। প্রথম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটার যিনি বিলেতের মাটিতে শতরান করেন। তিনি বাবার কাছেই খেলা শেখেন। তবে ব্যাটের পাশাপাশি বলও করতেন। বলা যায়, বলটাই বেশি ভালো করতেন। সঙ্গে অনবদ্য ফিল্ডিং। বহু বিপদের ত্রাতা। যাঁর বোলিং-এ ভয় পেয়ে এমসিসি বডিলাইন নিষিদ্ধ করেছিল সেই লিয়ারি কনস্ট্যান্টাইন জন্মেছিলেন ১৯০১ সালে আজকের দিনে ত্রিনিদাদে। ‘ফিয়ার ফ্রি’ ক্রিকেটের প্রবক্তা, স্যার লিয়ারি লন্ডনের হোটেলে কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ার কারণে জায়গা পাননি। ফলে শুরু করেন বিরাট এক আন্দোলন। খোদ ব্রিটিশ মুলুকে কালো মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার কারণে ‘মেম্বার অফ ব্রিটিশ এম্পায়ার’ পান। পরে ব্যারনও হন। টেস্ট খেলেন ১৮ টি। মার্টিন্ডেলের বোলিং পার্টনার স্যার লিয়ারি আজও কিংবদন্তি। ল্যাঙ্কাশায়ার লিগে ৭০০০ রান ও ৮৮৪ উইকেটের মালিক। সেরা বোলিং (১০/১০) আজও ল্যাঙ্কাশায়ার লিগে সেরা বোলিং। টেস্টে ৫৮ টি উইকেট নিয়েছেন। প্রথম শেণির ক্রিকেটে তাঁর উইকেটের সংখ্যা ৪৩৯। প্রথম ক্যারিবিয়ান হিসাবে স্যার লিয়ারি ইংল্যান্ডে ‘পিয়ার’ হন, তাও কৃষ্ণাঙ্গ হয়ে।
২.
প্যাকারে সিরিজের ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়ানো ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাস্ট বোলিং তখন পৃথিবীতে আতঙ্ক ছড়িয়ে ফেলেছে। জোয়েল গার্নারের কেরিয়ার তখন শেষের পথে। উত্থান হয় কার্টলি আমব্রোসের। টেনিস বল ক্রিকেটে ইনিংসে ১০ উইকেট নিয়ে চোখে পড়েন তিনি। ১৯৮৫-৮৬ সালে শেল শিল্ডের খেলায় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হলেও দু’বছর জাতীয় দলে সুযোগ পাননি। যদিও পারফরম্যান্স ছিল যথেষ্ট ভালো। ১৯৮৭-৮৮ সালে রেড স্ট্রাইপ কাপের পাঁচ ম্যাচে ৩৫ উইকেট নেন। এর মধ্যে জামাইকা (৯ উইকেট) ও গাইয়ানাকে (১২) প্রায় একার হাতে শেষ করে দেন। ফলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তিন টেস্টের সিরিজে দলে সুযোগ পান। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। ৫২ গড়ে নেন মাত্র সাত উইকেট। কিন্তু বিলেত সফরে পাঁচ টেস্টে ২২ উইকেট নেন। প্রথম শ্রেণির ম্যাচ গুলোয় ৩৫ উইকেট নিয়ে নজর কাড়েন ও দলে স্থায়ী জায়গা করে নেন। গোটা নব্বই দশকের প্রথম ও মাঝামাঝি ওয়ালশের সঙ্গে জুটি বেঁধে ত্রাস ছড়িয়েছিলেন ক্যারিবিয়ান ফাস্ট বোলিং-এর শেষ মহাতারকা স্যার কার্টলি। ৪০৫ টি টেস্ট উইকেট আছে তাঁর। মাত্র ১ রানে ৭ উইকেটের সেই ভয়াবহ স্পেল আজও অস্ট্রেলিয়া ভোলেনি। ১৯৬৩ সালে আজকের দিনে জন্মেছিলেন আরেক কিংবদন্তি স্যার ভিভের দেশে, স্যার কার্টলি।
৩.
সোনালী অতীত থেকে ধূসর ভবিষ্যতের সাক্ষী রিচি রিচার্ডসন জীবনের শেষ প্রথম শ্রেণির খেলায় মাঠে ফিল্ডিং করতে করতে দেখেছিলেন ছেলেটির তাণ্ডব। কি ভেবেছিলেন? এই কি শেষ চিহ্ন? হ্যাঁ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের পূর্বতন বিধ্বংসী ব্যাটিং-এর শেষ চিহ্ন ক্রিস গেইল জন্মেছিলেন আজকের দিনে ১৯৭৯ সালে। টেস্টে দু’টি ট্রিপল সেঞ্চুরি আছে টেস্টে তাঁর। একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে ডবল সেঞ্চুরি, কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে ২২ টি শতরানের মালিক গেইলের নাম শুনলে বহু বোলারের ঘুম উড়ে যায়। সারা দুনিয়া জুড়ে টি-২০ খেলে বেড়ান তিনি। টি-২০ ক্রিকেটে তাঁর সর্বোচ্চ রান ১৭৫। বিশেষজ্ঞদের মত, টি-২০ ক্রিকেটেও নিজের দিনে দ্বিশতরান করে দেবেন এই জামাইকান। ক্যারিবীয় ক্রিকেটের সোনালী অতীতের শেষ চিহ্ন গেল আজও খেলছেন। লিয়ারি কনির ‘ফিয়ার ফ্রি’ ক্রিকেটের সার্থক উত্তরসূরী আজ ৪১ পূর্ণ করলেন।