হায়দরাবাদ থেকে উঠে আসছেন আরও এক মহম্মদ
ময়ূখ লাহিড়ী‘নামে কি-ই বা আসে যায়?’ উইলিয়াম শেক্সপিয়র তাঁর বিখ্যাত নাটক ‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’-এ এমনই এক সংলাপ লিখেছিলেন। কিন্তু চার শতাব্দী পর দেখা যাচ্ছে, নাম সত্যিই দাগ কেটে যায়। এবারের আইপিএলেই যেমন। প্রতিযোগিতার প্রথম দিকটা ছিল রাহুলদের দখলে। কে এল রাহুল, রাহুল চাহর, রাহুল তেওয়াটিয়া এবং রাহুল ত্রিপাঠি। তারপরে রাহুলদের জায়গা নিলেন ক্রিসরা। ক্রিস গেইল, ক্রিস মরিস এবং ক্রিস জর্ডন। আর আপাতত সময়টা মহম্মদদের। মহম্মদ শামি এবং মহম্মদ সিরাজ।
কিছুদিন আগে পর্যন্তও হায়দরাবাদের রাস্তায় অটো চালাতেন তাঁর বাবা। সেই আয় থেকেই চলত সংসার আর ছেলের ক্রিকেট খেলার খরচ। সিরাজেরই শহরের ভিভিএস লক্ষ্মণ যখন ইডেনে নতুন রূপকথা তৈরি করছেন তখন সিরাজের বয়স বছর সাতেক। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা সিরাজকে পরবর্তীকালে রাস্তা দেখিয়েছিলেন লক্ষ্মণই। ধারাবাহিকভাবে ১৪০ কিলোমিটার বেগে বল করতে পারেন। হাতে মাপা সুইং রয়েছে। তার জেরেই সানরাইজার্স হায়দরাবাদ শিবিরে সিরাজকে জায়গা করে দিয়েছিলেন লক্ষ্মণ। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটের দুরন্ত ফর্ম আইপিএলের মঞ্চে কিছুতেই দেখাতে পারছিলেন না সিরাজ। না সানরাইজার্সে, না রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সে। বরং ১০০-এর বেশি ওভার হাত ঘোরানো বোলারদের মধ্যে তাঁর ইকনমি রেটই ছিল সবচেয়ে খারাপ (৯.২৯)। চলতি আইপিএলেও সেভাবে দাগ কাটতে পারছিলেন না। নতুন বলও পাচ্ছিলেন না হাতে। কিন্তু বুধবার হাতে নতুন বল পেয়েই বাজিমাত। চার ওভারে মাত্র আট রান খরচ করে তিন উইকেট। তার মধ্যে প্রথম দু’ওভারই মেডেন। আইপিএলের ইতিহাসে প্রথমবার।
তবে কিং খানের দলের বিরুদ্ধেও সিরাজকে নতুন বল দেওয়ার কথা ভাবেননি বিরাট কোহলি। ম্যাচ জিতে স্বীকারও করলেন, নতুন বলে মরিস আর ওয়াশিংটন সুন্দরকে আক্রমণে নিয়ে আসারই পরিকল্পনা ছিল। হঠাৎই মনে হয়েছিল, সিরাজকে বল করালে কেমন হয়? তারপরেই সিরাজকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “মিয়াঁ, তৈয়ার হো?” তৈরিই ছিলেন সিরাজ। আর নতুন বলে অনুশীলন করে নিজেকে কতটা তৈরি করেছেন তা এদিন শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামের ২২ গজেই প্রমাণ করে দিলেন হায়দরাবাদী পেসার।
ভারতীয় ক্রিকেটে হায়দরাবাদের অবদান কম নয়। সাড়ে তিন দশক আগে এই হায়দরাবাদ থেকেই উঠে এসেছিলেন এক ক্রিকেটার। কব্জির মোচড়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। তিনিও ছিলেন এক মহম্মদ। আবারও কি এক হায়দরাবাদী মহম্মদ কব্জিকে কাজে লাগিয়ে বলকে কথা বলাবেন? হয়তো আসন্ন অস্ট্রেলিয়া সফরেই লুকিয়ে রয়েছে তার উত্তর।