ব্যাটে-বলে নায়ক রাসেল; স্ট্রাইক রেটে টেক্কা দিলেন বিধ্বংসী হার্দিক
স্পোর্টি ওয়ার্ল্ড নিউজ ডেস্ক২১ বছর আগের এক এপ্রিল। নিজের জন্মদিনে ব্যাটে ঝড় তুলে শারজার মরুঝড়কে স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন এক পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চির মারাঠি। আন্দ্রে ডোয়েন রাসেল তখন নেহাতই দশ বছরের বালক। কিন্তু ক্রিকেটের লোকগাথায় ঢুকে যাওয়া সেই মহাকাব্যিক ইনিংসের কথা সম্ভবত তাঁর কানেও পৌঁছেছিল। আর সেই কারণেই বোধহয় রবিবাসরীয় ইডেন রাসেলের ‘বার্থডে ইভ’-এ দেখতে পেল স্ট্রোকের আতসবাজির প্রদর্শনী। তাও সচিনের দলের বিরুদ্ধেই। প্রথমে ব্যাট হাতে ৪০ বলে ৮০ রানের অপরাজিত ইনিংস। পরে বল হাতে চার ওভারে মাত্র ২৫ রান খরচ করে দু’উইকেট। সঙ্গে দু’টি ক্যাচ। বলতে গেলে একার হাতেই মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে দুরমুশ করে গেলেন ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার। নাইটদেরও টিকিয়ে রাখলেন প্লে-অফে ওঠার দৌড়ে। শাপমুক্তি ঘটল টানা ছ’ম্যাচে হারেরও।
অন্য দিন হলে স্রেফ রাসেলের ইনিংসেই ম্যাচ থেকে হারিয়ে যেত বিপক্ষ। কিন্তু উল্টোদিকের দলটার নাম যে মুম্বই। নাইটদের ২৩২/২ স্কোরের (এবারের আইপিএলের সর্বোচ্চ রান) জবাবে তিন বারের আইপিএল চ্যাম্পিয়নরা পৌঁছল ১৯৮ পর্যন্ত। নেপথ্যে হার্দিক পাণ্ড্যের টর্নেডো। মাত্র ১৭ বলে পূর্ণ করলেন ৫০ রান। চলতি আইপিএলের দ্রুততম। তাঁর বিধ্বংসী মেজাজে ভর করেই একসময় অবিশ্বাস্য জয়ের গন্ধ পাচ্ছিলেন রোহিত শর্মারা। কিন্তু শেষমেশ ৩৪ বলে ৯১ রান করে থামতে হল হার্দিককে। বিপক্ষের লড়াইকে সম্মান জানাতে কোনদিনই কার্পণ্য করেনি ইডেন। এদিনও হার্দিকের অতিমানবীয় ব্যাটিংকে উঠে দাঁড়িয়ে কুর্নিশ জানালেন ৬৫ হাজার দর্শক।
চলতি আইপিএলের দ্বিতীয়ার্ধে পৌঁছে নাইট শিবির বুঝেছে, শুধুমাত্র ‘পিঞ্চ হিটার’ ওপেনার দিয়ে ম্যাচ জেতা অসম্ভব। বরং চালাতে গিয়ে কম রানে ওপেনাররা ফিরে গেলে চাপে পড়ে যাচ্ছে মিডল অর্ডার। তাই পরিবর্তিত ছকে ক্রিস লিনের সঙ্গী হচ্ছেন শুবমান গিল। আর সেই ছক এদিন পুরোমাত্রায় সফল। স্রেফ ব্যাকরণ মেনে খেলেও যে টি-২০ ক্রিকেটে দ্রুত রান করা যায় সেটা এদিন আরও একবার দেখিয়ে দিয়ে গেলেন শুবমান। লিনের (২৯ বলে ৫৪ রান) সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রথম উইকেটে ৫৭ বলে তুললেন ৯৫ রান। সেটাই চালকের আসনে বসিয়ে দিয়ে গেল নাইটদের। তাই দিনের শেষে রাসেলের ইনিংসের সমানই গুরুত্ব পাচ্ছে শুবমানের ৪৫ বলে ৭৬ রানের ইনিংস।
ক’দিন আগেই রাসেল বলেছিলেন, সুযোগ পেলে ব্যাটিং অর্ডারে আগে আসতে চান। এদিন সেই সুযোগটাই তাঁকে দিয়েছিল নাইটদের থিঙ্কট্যাঙ্ক। যার সদ্ব্যবহার পুরোমাত্রায় করলেন ‘ড্রেরাস’। আটটি ছক্কা ও ছ’টি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে উৎসবের মেজাজ এনে দিলেন রবিবারের ইডেনে।
বোলিং নিয়ে এদিনও পরীক্ষানিরীক্ষা জারি রাখল নাইট শিবির। বোলিং ওপেন করতে এলেন সন্দীপ ওয়ারিয়র। উইকেট না পেলেও আঁটোসাঁটো বোলিংয়ে নজর কাড়লেন মালয়ালি মিডিয়াম পেসার। লক্ষ্য ২৩৩। সেই চাপ নিতে পারেননি মুম্বইয়ের প্রথম সারির ব্যাটসম্যানরা। তার জেরেই দলীয় মাত্র ৫৮ রানের মধ্যে প্যাভিলিয়নে ফিরে গিয়েছিলেন কুইন্টন ডি কক (০), রোহিত (১২), এভিন লুইস (১৫) এবং সূর্যকুমার যাদব (২৬)। সেখান থেকেই পোলার্ডকে সঙ্গী করে লড়াই চালাচ্ছিলেন হার্দিক। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি।
নিট ফল, আম্বানিদের দলকে হারানোর পর চওড়া হাসি কিং খানের মুখে। সাদা টি-শার্টে ইডেন ঘুরে অভিবাদন জানালেন দর্শকদের। সঙ্গে থাকল অব্যক্ত প্রতিশ্রুতিও – ‘পিকচার অভি বাকি হ্যায়’।