প্রয়াত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রতি স্পোর্টিওয়ার্ল্ডের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন
ময়ূখ লাহিড়ী‘আজ জানে কি জিদ না করো’। শনিবার থেকে ফরিদা খানুমের এই গানটাই সম্ভবত বারবার শুনছিলেন কলকাতা থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার বাঙালিরা। শুধু গান নয়, প্রার্থনা। কিন্তু যাবতীয় প্রার্থনা বিফল হয়ে গেল রবিবার বেলা ১২ টা ১৫ মিনিটে। থেমে গেল ক্ষিদ্দার ফাইট। অনেক ইতিহাসের সাক্ষী, অনেক ইতিহাস গড়া মানুষটি নিজেই চলে গেলেন ইতিহাসের পাতায়। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
কখনও মঞ্চ, কখনও রুপোলি পর্দা। আইকনিক চরিত্র তৈরি করতে করতে নিজে আইকন হয়ে ওঠা। জীবনের খেলার রসদ খুঁজে নিয়েছিলেন খেলার মাঠ থেকেই। অভিন্নহৃদয় বন্ধু ছিলেন পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়ের। প্রিয় বন্ধুর বিয়েতে অতিথি আপ্যায়ন করার ভার তুলে নিয়েছিলেন নিজের কাঁধে। নিয়মিত হাজিরা দিতেন ফুটবল এবং ক্রিকেট মাঠে। ইস্টবেঙ্গল বা মোহনবাগান, যিনি যে দলেরই সমর্থক হোন না কেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মিলিয়ে দিতে পারতেন দু’পক্ষকেই। স্রেফ তাঁর বাঙালিয়ানা এবং কসমোপলিটান মানসিকতার অনণুকরণীয় মিশেলে। কখনও জীবনযুদ্ধে যুঝতে থাকা অপু, কখনও প্রেমিক অমল, কখনও বিপ্লবী উদয়ন পণ্ডিত, কখনও বা অনুসন্ধিৎসু প্রদোষ মিত্র। অভিনয় জীবনের প্রথম ২৫ বছর কেটে গিয়েছিল এভাবেই একের পর এক চ্যালেঞ্জ নিতে নিতে।
১৯৮৪ সাল। নির্দেশক সরোজ দে ঠিক করলেন, মতি নন্দীর ‘কোনি’ নিয়ে ছবি বানাবেন। ‘ক্ষিদ্দা’-র চরিত্রে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। কীভাবে তৈরি করেছিলেন নিজেকে? দর্শক হিসাবে যখন ময়দানে যেতেন তখন খুঁটিয়ে লক্ষ্য করতেন কীভাবে রহিম সাহেব, পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়, অমল দত্তরা ফুটবলারদের উজ্জীবিত করেন। আর সাঁতারের খুঁটিনাটি জানতে ‘কোনি’-র শুটিং-এর আগে রোজই চলে যেতেন কলেজ স্কোয়্যার বা হেদুয়ায়। সেখানেই শিখেছিলেন সাঁতারের টেকনিক্যাল বিষয়গুলি। তাই পর্দায় ক্ষিদ্দা দেখাতে পেরেছিলেন সাঁতারের সময় হাত এবং মাথার পজিশন। পরে একাধিক সাক্ষাৎকারে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, তাঁর অভিনয় জীবনের অন্যতম সেরা ছবি ‘কোনি’। মধ্যবিত্ত বাঙালিকে ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ যুগিয়েছিল তাঁর প্রবাদ হয়ে যাওয়া তিন শব্দের সংলাপ – ‘ফাইট, কোনি! ফাইট!’ জীবনের নানা ক্ষেত্রে যখন বারবার ধাক্কা খেয়েছেন তখন নিজেকেও চাগিয়ে তুলতেন ওই তিন শব্দেই।
ময়দানের রহিম সাহেব, পি কে, অমল দত্তরা বিদায় নিয়েছেন আগেই। এবার অতীত হয়ে গেলেন পর্দার ‘ক্ষিদ্দা’-ও। থেকে গেল সব খেলার সব কোনিদের জন্য লড়াইয়ের তিন শব্দের মন্ত্র।