ধরাশায়ী কোহালির দল
স্পোর্টি ওয়ার্ল্ড নিউজ ডেস্ক,ভারত : ২৪৪ এবং ৩৬/৯
অস্ট্রেলিয়া : ১৯১ এবং ৯৩/২
৮ উইকেটে জয়ী অস্ট্রেলিয়া
ম্যাচের সেরা টিম পেইন
চিমটি কেটে দেখতে হচ্ছিল, এ কোনও দুঃস্বপ্ন নয়তো! ৪, ৯, ২, ০, ৪, ০, ৮, ৪, ০, ৪, ১। না না, এটা কারও মোবাইল নম্বর নয়। কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বরও নয়। সিঙ্গল ডিজিটগুলি হল ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ব্যক্তিগত রান সংখ্যা।
পুরো অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্স। অতি বড় অজি ভক্তও হয়তো দলের এরকম জয় কল্পনা করেননি। ঠিক যেমন ভারতীয় সমর্থকরা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি, এরকম লজ্জা উপহার দেবেন তাদের প্রিয় ‘টিম ইন্ডিয়া’র কারিগররা। দ্বিতীয় দিনের শেষেও যে দলটি চালকের আসনে বসে ছিল, তারাই কোনও এক অজ্ঞাত কারণে সাজঘরে ফেরার প্রতিযোগিতা শুরু করে দিল ম্যাচের তৃতীয় দিনে। হঠাৎ করেই কেমন যেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠলেন হ্যাজেলউড-কামিন্সরা। মনে হল যেন তাঁদের হাত থেকে গোলাপী বল নয়, আগুনের গোলা বেরিয়ে আসছে। আর উল্টোদিকে কোহলি, পূজারা, রাহানে’রা নন, সেই গোলাগুলির মোকাবিলা করছেন পাড়ার চিন্টু, মিন্টু, পিন্টু’রা।
প্রথম ইনিংসে ৫৩ রানের লিড পেয়েছিল ভারত। খুব একটা আহামরি কিছু না হলেও, বিরাট কোহলি অ্যান্ড কোং যে অ্যাডভান্টেজে ছিল, তা বলতে দ্বিধা নেই। দ্বিতীয় দিনের অন্তিম লগ্নে মায়াঙ্ক আগরওয়ালের উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ৯ রান তুলেছিল ভারতীয় দল। খেলা হয়েছিল ছয় ওভার। শেষ বেলায় নাইট ওয়াচম্যান হিসাবে যশপ্রীত বুমরাকে নামিয়েছিল ভারত।
তৃতীয় দিনের দ্বিতীয় ওভারে বল করতে আসেন প্যাট কামিন্স। ওই ওভারের একেবারে শেষ বলে কামিন্সের হাতেই ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বুমরা। এই উইকেট হারানোর জন্য অবশ্য ‘গেল গেল রব’ ওঠার কোনও কারণ নেই ভারতের। প্রস্তুতি ম্যাচে যতই কেরিয়ারের সেরা ব্যাটিং প্রদর্শন করুন না কেন, বড় মঞ্চে বুমরার থেকে ব্যাট হাতে বিশাল কিছু আশা হয়তো কেউই করেননি।
স্বাভাবিকভাবেই অস্ট্রেলিয়া গেম প্ল্যান সাজিয়েছিল কোহলি, পূজারা’দের নিয়ে। দিনের শুরুতেই একটি ছোট্ট মাইলস্টোন ছুঁয়ে এগিয়ে চলেছিলেন মায়াঙ্ক। টেস্টের ইতিহাসে এক হাজার রান পূর্ণ করেন এই ডানহাতি ওপেনার। নিয়েছেন ১৯টি ইনিংস। যা ভারতীয় ক্রিকেটে তৃতীয় দ্রুততম। ১৮ ইনিংসে হাজার ক্লাবের সদস্য হয়ে দ্বিতীয় স্থানে চেতেশ্বর পূজারা। শীর্ষে রয়েছেন বিনোদ কাম্বলি (১৪ ইনিংস)।
এরপর যা ঘটল, সেটা ভারতীয় ক্রিকেটের ‘কালো দিন’ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকল ইতিহাসের পাতায়। সাদা জার্সির ফরম্যাটে সর্বনিম্ন স্কোর করল বিরাট ব্রিগেড। মাত্র ৩৬ রানে গুটিয়ে গেল মেন ইন ব্লু। কামিন্সের বাউন্সারে চোট পেয়ে মহম্মদ শামি মাঠ ছাড়ায় দৃশ্যত অলআউট না হলেও, আদতে ইতিহাস তা মানবে না। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এটাই সর্বনিম্ন স্কোর ভারতের। এর আগে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৪২ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল ভারত। ১৯৭৪ সালের সেই লজ্জার ‘নায়ক’রা আজ হয়তো মুক্তি পেলেন।
আড়াই দিনেই ইতি ঘটল গোলাপি বলের টেস্টের। এদিন দু’অঙ্কের রানের মুখ দেখলেন না ভারতের কোনও ক্রিকেটারই। বিরাট বাহিনীর উজ্জ্বলতম ব্যাটসম্যান হলেন মায়াঙ্ক আগরওয়াল। সর্বোচ্চ ৯ রান এবং সবথেকে বেশি ৪০টি বলের মোকাবিলা করেছেন তিনি। অজিদের প্রথম ইনিংস নায়ক মিচেল স্টার্ক খালি হাতে ফিরলেও, উইকেটগুলি নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেন প্যাট কামিন্স এবং জশ হ্যাজেলউড। কামিন্স পাঁচটি এবং হ্যাজেউল চারটি উইকেট নেন। মাত্র ২১.২ ওভার স্থায়িত্ব ছিল ভারতীয় ব্যাটিংয়ের।
জয়ের জন্য মাত্র ৯০ রানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ব্যাট করতে নামে অজিরা। ভারতীয় সমর্থকদের মনে তখনও ক্ষীণ আশা, ঘটতে পারে কোনও মিরাাকেল। হতে পারে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের ‘পুনরাবৃত্তি’। কিন্তু সেই সব জল্পনায় জল ঢেলে দিলেন দুই ওপেনার। ম্যাথু ওয়েড এবং জো বার্নস ব্যাট চালিয়ে খেলে দলকে জয়ের দোরগড়ায় নিয়ে যান। ওয়েড (৩৩ রান) রান আউট হওয়ার পর লাবুশানেও (৬ রান) দ্রুত ফিরে যান। তবে বার্নস ৫১ রানে অপরাজিত থেকে স্মিথকে (১ রান) সঙ্গে নিয়ে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন।
লজ্জার হারের পাশাপাশি ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের কপালে চিন্তার ভাঁজ চওড়া করল শামির চোট। ইনজুরির কবলে মাঠ ছাড়ার পর আর ফেরেননি বাংলার এই পেসার। দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর খেলা নিয়ে সংশয় দেখা দিল। থাকছেন না বিরাট কোহলিও। এরকম অবস্থায় সফরের বাকি সময়ে অর্থাৎ সিরিজের পরবর্তী তিনটি ম্যাচে আর ঠিক কতটা লজ্জার ‘উপহার’ দেয় টিম ইন্ডিয়া, সেই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে।