প্রথম ইনিংসে আপাতত ৮২ রানের লিড ভারতের; লড়ছেন জাদেজাও
স্পোর্টি ওয়ার্ল্ড নিউজ ডেস্ক‘একজন প্রকৃত ব্যাটসম্যান তাঁর স্ট্রোকের মাধ্যমেই নিজের বিষয়ে প্রকৃত সত্য তুলে ধরেন’। ১৯৩০ সালে তাঁর ‘ক্রিকেট’ নামের বইয়ে এমনই মন্তব্য করেছিলেন স্যার নেভিল কার্ডাস। দীর্ঘ নয় দশক বাদে সেই কথাকেই আরও একবার মনে করিয়ে দিলেন অজিঙ্ক রাহানে। রবিবারের এমসিজি-তে সাড়ে পাঁচ ফুটের মারাঠির ব্যাট থেকে বেরোল একের পর এক দর্শনীয় স্ট্রোক। মেঘলা আবহাওয়া। সঙ্গে ঝিরঝিরে বৃষ্টি। পরিবেশের ফায়দা পুরোপুরি নিচ্ছিলেন প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজলউডরা। তিনজনেই বল করছিলেন ১৪০-১৪৫ কিলোমিটার বেগে। সঙ্গে বিষাক্ত সুইং। কিন্তু সবকিছু সামলেই অপরাজিত ১০৪ রানের স্মরণীয় ইনিংস খেলে গেলেন রাহানে। তাঁর ইনিংসে ভর করেই দ্বিতীয় দিনের শেষে পাঁচ উইকেটে ২৭৭ রান তুলেছে ভারত। লিড আপাতত ৮২ রানের।
আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান শুভমান গিল এবং চেতেশ্বর পুজারা প্রথম ঘণ্টায় প্রায় সামলে দিয়েছিলেন কামিন্সদের। কিন্তু তখনই জোড়া আঘাত হানেন কামিন্স। প্রথমে ড্রাইভ করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হন গিল (৪৫)। তারপরেই আউটসুইং-এ ব্যাট ছুঁইয়ে আউট পুজারা।
টেস্ট শুরুর আগেই অজিত আগরকর বলেছিলেন, বিরাট কোহলির অনুপস্থিতিতে নিজেকে চার নম্বরে তুলে আনা উচিৎ রাহানের। সিনিয়র মুম্বইকরের কথা অগ্রাহ্য করেননি জিঙ্কস। কিন্তু যখন ক্রিজে এলেন তখন দল যথেষ্ট বিপদে। স্কোরবোর্ডে ৬৪/৩। সঙ্গী হনুমা বিহারী। কিন্তু সেই পরিস্থতিতেই রাহানে বুঝিয়ে দিলেন, যতই ধারাবাহিকতার অভাবের অভিযোগ উঠুক, যতই সীমিত ওভারের ক্রিকেট থেকে তাঁকে ব্রাত্য করে দেওয়া হোক, বিদেশের মাটিতে কঠিনতম চ্যালেঞ্জ সামলানোর জন্য এখনও তিনিই ভারতের সেরা বাজি। প্রথম সেশনে আর কোনও বিপদ আসেনি। কিন্তু দ্বিতীয় সেশনের শুরু থেকেই আচমকা বাড়তি বাউন্স পাচ্ছিলেন অজি বোলাররা। হঠাৎই বেশি টার্ন করতে শুরু করল ন্যাথান লিয়ঁর অফস্পিন। যার জেরে কয়েকবার পরাস্তও হলেন টিম পেইন। আর সেই লিয়ঁই গতির হেরফের করে বোকা বানালেন হনুমাকে (২১)। তবে যেরকম দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে হনুমা আউট হলেন তাতে পরের টেস্টে কে এল রাহুল না খেললেই অবাক হতে হবে। ঋদ্ধিমান সাহার জায়গায় দলে আসা ঋষভ পন্থ স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে শুরু থেকেই চালাচ্ছিলেন। কিন্তু এমসিজি তো কোটলার মতো বোলারদের বধ্যভূমি নয়! তারই খেসারত দিয়ে ২৯ রানে ফিরলেন ঋষভ। তখনও অস্ট্রেলিয়ার থেকে ২২ রানে পিছিয়ে ভারত। কিন্তু দিনের বাকি সময়ে আর কোনও বিপদ আসতে দেননি রাহানে এবং রবীন্দ্র জাদেজা। বরং ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশনকে বিপাকে ফেলতে গিয়ে লাইন গুলিয়ে ফেললেন অজি বোলাররাই। দ্বিতীয় নতুন বল নেওয়ার পরেও রাহানে এবং জাদেজাকে বিশেষ বিব্রত করতে পারেননি কামিন্সরা। উল্টে, ক্রিকেটের ব্যাকরণ বই থেকে তুলে আনা ড্রাইভ, কাট, ফুটওয়ার্ক আর প্লেসমেন্টকে কাজে লাগিয়ে বক্সিং ডে টেস্টে নিজের দ্বিতীয় শতরান করে গেলেন রাহানে। ২০১৪-১৫ সিরিজের অবিস্মরণীয় ১৪৭-এর পর আরও একবার। অবিচ্ছিন্ন ষষ্ঠ উইকেটে জাদেজার (৪০ ব্যাটিং) সঙ্গে এখনও পর্যন্ত ১০৪ রান যোগ করেছেন রাহানে।
পরিসংখ্যান বলছে, এই প্রথম বক্সিং ডে টেস্টে দু’বার শতরান করলেন কোনও সফরকারী ব্যাটসম্যান। একইসঙ্গে, বিরাট কোহলিকে (৩১৬) টপকে এমসিজি-তে ভারতের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হলেন রাহানে (৩৩৪)। সম্ভবত, তার জেরেই কোহলি টুইটারে লিখেছেন, “আমাদের জন্য দিনটা দারুণ গেল। অসাধারণ ইনিংস খেলল জিঙ্কস!” ১৯৯৯-এ বক্সিং ডে টেস্টে ১১৬ রানের চোখধাঁধানো ইনিংস খেলেছিলেন তৎকালীন ভারত অধিনায়ক শচীন তেন্ডুলকর। তারপরে রাহানেই প্রথম ভারতীয় অধিনায়ক হিসাবে এই কৃতিত্ব দেখালেন। মুম্বইতুতো অনুজকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন মাস্টার ব্লাস্টারও। টুইটারে লিখেছেন, "দুর্ধর্ষ ইনিংস খেলল রাহানে। শুধু ডিফেন্সই করেনি, আক্রমণাত্মক শটও খেলেছে। ওর এবং জাদেজার এই জুটিই অস্ট্রেলিয়ার হাত থেকে মায়চ ছিনিয়ে নিয়ে আসতে পারে।"
অ্যাডিলেডে প্রথম ইনিংসে ৫৩ রানের লিড নেওয়ার পরেও কুৎসিত হার হজম করতে হয়েছিল। সোমবার অধিনায়ক রাহানে দলকে কতদূর টানতে পারেন সেটাই এখন দেখার।