গত নয় দশকে ভারতীয় ক্রিকেটের পারফরম্যান্সের খতিয়ান
সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়বক্সিং ডে টেস্ট আট উইকেটে জিতে একবিংশ শতকের দ্বিতীয় দশক শেষ করল টিম ইন্ডিয়া। গত দু’দশকে ভারতীয় ক্রিকেটে বদলে গিয়েছে অনেক কিছুই। শচীন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রাহুল দ্রাবিড়, ভিভিএস লক্ষ্মণরা যেমন বিদায় নিয়েছেন আন্তর্জাতিক আঙিনা থেকে, তেমনই স্মরণীয় পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে গিয়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি, বীরেন্দ্র শেহওয়াগ, যুবরাজ সিং, বিরাট কোহলিরা। ‘দেশের মাঠে বাঘ, কিন্তু বিদেশে বিড়াল’ তকমা অনেকটাই ঝেড়ে ফেলতে পেরেছে ভারত। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে গত দু’দশকে যেমন এসেছে একদিনের বিশ্বকাপ এবং টি-২০ বিশ্বকাপ জয়, তেমনই টেস্ট ক্রিকেটেও অস্ট্রেলিয়া থেকে সিরিজ জিতে ফিরেছে ভারত। নতুন দশকের প্রথম দিনে ফিরে দেখা গত কয়েক দশকে ভারতীয় ক্রিকেটের রেকর্ডকে।
১৯৩২-এর ২৫ জুন লর্ডসে ভারত প্রথম টেস্ট খেলতে নামে সি কে নাইডুর নেতৃত্বে। সেই তিরিশের দশকে ভারত সাতটি মাত্র টেস্ট খেলেছিল। যার মধ্যে পাঁচটি টেস্টেই হেরে যায় তারা, মাত্র দুটি ড্র করে। বিদেশের মাটিতে চারটি টেস্টের তিনটিতেই হারে, ড্র মাত্র একটি। চল্লিশের দশকে বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪৬ সালের আগে ক্রিকেট মাঠে নামতে পারেনি ভারত। দশকের বাকি সময়েও পারফরম্যান্স ছিল একেবারে তলানিতে। যার নেপথ্যে ছিল দেশভাগও। ১৩ টি টেস্টের মধ্যে ছ’টিতে হার হজম করতে হয়েছিল। ড্র হয়েছিল বাকি সাতটি ম্যাচ। অর্থাৎ, টেস্ট খেলিয়ে দেশের মর্যাদা পাওয়ার পর দু’দশক জয়হীন ছিল ভারত। বিদেশের আটটি টেস্টের পাঁচটি টেস্টেই হেরে গিয়েছিল তারা।
অবশেষে পঞ্চাশের দশকে প্রথম জয়ের স্বাদ পায় ভারত। তবে ৪৪ টি টেস্টের মধ্যে মাত্র ছ’টি টেস্ট জিততে সক্ষম হয় ভারত। ১৭ টি হার এবং বাকি ২১ টি টেস্ট ড্র হয়। এর মধ্যে বিদেশে ১৯ টি টেস্টের কোনোটিতেই জয় পায়নি ভারত। ন’টি হার আর ১০ টি ড্র। তবে অপরাজিত থাকা ম্যাচের সংখ্যা বেড়েছিল।
ষাটের দশকে ৫২ টি টেস্টের মধ্যে ন”টিতে জয় পেয়েছিল ভারত। এর মধ্যে তিনটি বিদেশে। ১৯৬৭ সালে মনসুর আলি খান পতৌদির নেতৃত্বে নিদেশের মাটিতে (নিউজিল্যান্ডে) প্রথম সিরিজ হাসিল করে ভারত। সত্তরের দশকে নিজেদের সুনীল গাভাসকর কপিল দেবদের আবির্ভাবের পর রেকর্ডের কিছুটা উন্নতি হয়। ৬৪ টি টেস্টের মধ্যে ১৭ টি টেস্টে জিতেছিল ভারত। যার মধ্যে বিদেশে খেলা ৩০ টি টেস্টের মধ্যে ছ’টিতে জয় এসেছিল। এই সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ইংল্যান্ডের মাটিতে অজিত ওয়াদেকরের নেতৃত্বে সিরিজ জিতেছিল ভারত। কিন্তু অবস্থা শোচনীয় হয় আশি ও নব্বইয়ের দশকে। যার মূলে ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের দুর্দান্ত দল। আশির দশকে ৮১ টি টেস্টের মধ্যে মাত্র ১১ টি টেস্টে জেতে ভারত। এর মধ্যে বিদেশে ৩৯ টি টেস্টে সাকুল্যে তিনটি জয়। নব্বইয়ের দশকে দেশের মাটিতে খেলা ৩৫ টেস্টের ১৭ টি টেস্টেই জয় পেয়েছিল ভারত। হারতে হয়েছিল মাত্র পাঁচটি টেস্টে। কিন্তু বিদেশের মাটিতে পারফরম্যান্স ছিল শোচনীয়। বিদেশে ৩৯ টি টেস্টের মাত্র একটিতে জয় পায় ভারত। তাও নবাগত জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে।
সব হিসেব পাল্টে যায় নতুন সহস্রাব্দে। যার প্রথম দশকে ১০৩ টি টেস্টের মধ্যে ৪০ টিতেই জয়লাভ করে ভারত। যার মধ্যে বিদেশে ৫৬ টি টেস্টের মধ্যে ১৯ টি জয়। মনে রাখা প্রয়োজন, তার আগে পর্যন্ত সবমিলিয়ে বিদেশে ১৩ টি টেস্ট জিতেছিল ভারত।
একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে ভারত আরও উন্নত করেছে এই রেকর্ড। এই সময়ে ৫৭ টি টেস্ট জিতেছে ভারত, যার মধ্যে ২০ টি ম্যাচই বিদেশে। শেষ পাঁচ বছরে বিদেশে খেলা ২৫ টি টেস্টে ১৪ টি জয় ভারতকে বিদেশের মাটিতে প্রবল শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসাবে তুলে ধরেছে।
বস্তুত, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় অধিনায়ক হওয়ার আগে ৩৩৩ টি টেস্টে জয় ছিল মাত্র ৬১ টি। বিদেশে ১৫৬ ম্যাচে ১৩ টি। সৌরভ অধিনায়ক হওয়ার পর ২০৯ টি টেস্টের মধ্যে ৯৬ টিতে জিতেছে ভারত। এর মধ্যে বিদেশে খেলা ১১৪ টির ম্যাচের মধ্যে ৩৮ টিতে জয় এসেছে।
নিঃসন্দেহে ম্যাচের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং ক্ষুদ্র সংস্করণের ক্রিকেট খেলা ভারতের জয়ের সংখ্যা বাড়িয়েছে। একইসঙ্গে, ড্র করার নেতিবাচক মনোভাব কাটিয়ে তুলেছে, যা গুণগতভাবে খেলার মান বাড়িয়েছে। নতুন দশক ভারতীয় ক্রিকেটের পক্ষে কেমন কাটবে তার পরীক্ষা শুরু সিডনির ‘নিউ ইয়ার’স’ টেস্টেই।