শুক্রবার শুরু প্রথম টেস্ট।
প্রহর গোনা শেষ। শুক্রবার সাত সকালে ঘুমের ঘোর ঠিক মতো কাটার আগেই শুরু হয়ে যাবে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মহারণ। পারথের অপ্টাস স্টেডিয়ামে হাইভোল্টেজ সিরিজের প্রথম টেস্টের ঢাকে কাঠি পড়বে। টেস্ট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলতে হলে দুই দলের কাছেই এই সিরিজ মহাগুরুত্বপূর্ণ। এই মুহূর্তে অজিরা রয়েছেন শীর্ষে, দুইয়ে ভারত।
শেষ দু’বার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতে দেশে ফিরেছিল ভারত। গত চারটি সিরিজে ভারতে হারাতে পারেনি ক্যাঙারুবাহিনী। কিন্তু এবার পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। গৌতম গম্ভীর ভারতীয় দলের কোচ হয়ে আসার পর এখনও পর্যন্ত আশানুরূপ পারফরম্যান্স মেলে ধরতে পারেনি ভারত। ঘরের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে হোয়াইওয়াশের লজ্জা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল রোহিত শর্মার দলকে। ফলে আত্মবিশ্বাসেও ঘাটতি থাকতে পারে। তার ওপর নিয়মিত অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে পাওয়া যাবে না এই ম্যাচে। দলের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া আসেননি হিটম্যান। চোট রয়েছে শুভমন গিলের। তিনিও পারথে অনিশ্চিত। বিরাট কোহলির ব্যাটে সেই পুরোনো ঝাঁজ আর নেই। তবে বিরাট ভক্তরা আশাবাদী, অজিদের বিরুদ্ধে স্বমেজাজে থাকবেন তিনি। তবে অনুশীলন বা প্র্যাকটিস ম্যাচে সেরকম কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। ফলে ব্যাটিং নিয়ে বেশ চিন্তায় ভারতীয় শিবির। চোটের জন্য দলে জায়গা হয়নি মহম্মদ শামির। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে শামির সুইং এবং অভিজ্ঞতা কতটা কাজে লাগতে পারত, তা সকলেরই জানা। তাই শামির অভাব ভোগাতে পারে দলকে। এরকম বেশ কিছু সমস্যা থাকলেও, ভারতীয় দল অবশ্য আশাবাদী ভালো পারফর্ম মেলে ধরতে। উলটোদিকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তেতে রয়েছে অস্ট্রেলিয়াও।
পারথে প্রথম একাদশ বেছে নেওয়াটাই প্রধান চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে গম্ভীরের কাছে। যশস্বী জয়সওয়াল ওপেনিংয়ে অটোমেটিক চয়েজ। কিন্তু তাঁর সঙ্গী কে হবেন, সেটাই এখন বড়ো প্রশ্ন। দৌড়ে সবথেকে এগিয়ে কেএল রাহুল। তাঁর ফর্ম চিন্তার বিষয় হলেও, আর কোনও উপায় নেই ভারতের। অভিমন্যু ঈশ্বরণ থাকলেও, তাঁর না খেলার সম্ভাবনাই বেশি। তবে গিল যদি শেষ মুহূর্তে সুস্থ হয়ে ওঠেন, তাহলে পঞ্জাব তনয়কে দিয়েও ওপেন করানোর চিন্তা-ভাবনাও করতে পারেন গম্ভীর। রাহুল ওপেন করলে গিল আসবেন তিনে। আর গিল যদি একান্তই খেলতে না পারেন, তাহলে দরজা খুলে যাবে দেবদত্ত পাড়িক্কলের কাছে। তিনিই হবেন পারথে ভারতের নম্বর তিন। চারে বিরাটের জায়গা পাকা। ক্যাঙারুদের দেশে বিরাটের অতীত পারফরম্যান্স নিঃসন্দেহে গর্বের। সমর্থকরাও চাইবেন, সেই পুরোনো বিরাটকে দেখতে।
পাঁচে নামবেন ঋষভ পন্থ। মিডল অর্ডারে ভারতের অন্যতম ভরসা তিনি। কিন্তু শর্ট বলের প্রতি পন্থের দুর্বলতা বারবার ফুটে উঠেছে। ফলে প্যাট কামিন্স-মিচেল স্টার্করা চাইবেন শর্ট বলের অস্ত্রেই পন্থকে ঘায়েল করতে। ছয় নম্বরের জন্য লড়াইয়ে আছেন ধ্রুব জুরেল এবং সরফরাজ খান। তবে জুরেল এই লড়াইয়ে কিছুটা এগিয়ে। কারণ, সম্প্রতি ভারত ‘এ’ দলের হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছেন এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। ভারতের জার্সিতে নিজেকে প্রমাণও করেছেন তিনি।
পারথের পিচে নীতীশ কুমার রেড্ডিকে খেলানোর ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে ভারতীয় শিবির। ফলে তাঁর অভিষেক হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। বিশেষজ্ঞদের মনে, রবীন্দ্র জাদেজা এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিন, দুই স্পিনারকে এই পিচে খেলানোর কোনও মানে হয় না। পরিবর্তে বাড়তি একজন পেসার প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে নীতীশের মতো অলরাউন্ডার দলে থাকলে পেস বিভাগকে সাহায্য করার পাশাপাশি ব্যাটিংও শক্তিশালী হবে দলের। তাই সাতে হয়তো নীতীশকে দেখা যেতে পারে। আর একজন স্পিনারের মধ্যে অশ্বিন অথবা জাদেজাকে বেছে নিতে হবে গম্ভীরকে। ট্রাভিস হেড, উসমান খোয়াজা, অ্যালেক্স কারিদের মতো বাঁহাতি ব্যাটার রয়েছে অজিদের অস্ত্রভাণ্ডারে। ফলে অশ্বিনের পাল্লাই ভারী। ওয়াশিংটন সুন্দর নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুরন্ত পারফর্ম করলেও, পারথের পিচে তাঁর সুযোগ না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
তিন বিশেষজ্ঞ পেসার নিয়েই দল সাজাবেন গম্ভীর। জসপ্রীত বুমরা যে এই ম্যাচে শুধু পেস আক্রমণের দায়িত্বে থাকবেন, তা নয়। রোহিতের অবর্তমানে ভারতেও নেতৃত্ব দেবেন তিনি। অভিজ্ঞতার নিরিখে বুমরার সঙ্গী হবেন মহম্মদ সিরাজ। বাকি একটি জায়গার জন্য লড়াইয়ে আছেন তিনজন। বাংলার আকাশ দীপ, কেকেআর পেসার হর্ষিত রানা এবং প্রাক্তন নাইট প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা। তবে সিরাজের সাম্প্রতিক ফর্মের কথা মাথায় রেখে তিন তরুণ পেসারের মধ্যে যে কোনও দু’জনকে সুযোগ দিতে পারেন জিজি। দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন আকাশ। তবে আলোচনায় আছেন হর্ষিতও। পারথে এই ডানহাতির অভিষেক হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। প্রসিদ্ধ কিছুটা পিছিয়ে রয়েছেন লড়াইয়ে।
পারথের আবহাওয়া অবশ্য ব্যাটারদের চিন্তায় রাখতে বাধ্য। পূর্বাভাস অনুযায়ী, শুক্রবার সকালে বৃষ্টি হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রথমে ব্যাট করা দল নিশ্চিত ভাবে সমস্যায় পড়বে। ফলে ম্যাচে প্রভাব ফেলবে টস। তবে বাকি চার দিন কোনও বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। আকাশ মেঘলা থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথম দু’দিন পিচে গতি এবং বাউন্স থাকবে।