আফগানিস্তানের সামনে নিউজিল্যান্ড।
অবশেষে ঘুম ভেঙেছে। কিন্তু বড্ড দেরি হয়ে গেল না কি? প্রশ্নের উত্তর পেতে অপেক্ষা করতে হবে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। তাকিয়ে থাকতে হবে অন্য দু’টি দেশের লড়াইয়ের দিকে। ১৩০ কোটি ভারতবাসীর সমর্থন পাবে তালিবান অধ্যুষিত আফগানিস্তান। রবিবার দুপুরে রশিদ খান-মহম্মদ নবিদের হয়ে গলা ফাটাবেন ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা।
দ্বিতীয় গ্রুপ থেকে প্রথম চার ম্যাচের সবকটিতেই জিতে শীর্ষে পাকিস্তান। ইতিমধ্যেই সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছে ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীরা। দ্বিতীয় দল হিসাবে শেষ চারে যাওয়ার লড়াইয়ে রয়েছে নিউজিল্যান্ড, আফগানিস্তান এবং ভারত। ফলে শুধু টিম ইন্ডিয়ার সুবিধা করে দেওয়ার জন্যই নয়, নিজেদের আশা টিকিয়ে রাখতেও এই ম্যাচে জয়ের জন্য মরিয়া থাকবেন আফগানরা।
নিউজিল্যান্ডের কাছে অবশ্য সমীকরণটা একেবারেই সহজ। আফগানিস্তানকে হারাতে পারলেই গ্রুপ পর্বে চার ম্যাচে জয়ের সুবাদে আট পয়েন্ট নিয়ে সেমিতে চলে যাবে কেন উইলিয়ামসনের দল। কিন্তু ভারত এবং আফগানিস্তানের জন্য শেষ চারের রাস্তাটা এতটা মসৃণ নয়। গ্রুপের শেষ ম্যাচ জিতলে তিনটি দেখা পাবে মহম্মদ নবির দল। সেক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ডের থেকে রানরেট ভালো থাকায় বিদায় নিতে হবে কিউইদের। একটা বিষয় একেবারে পরিষ্কার, এদিনের দ্বৈরথে যে দল হারবে, তারাই এবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে গুডবাই জানাবে।
আফগানিস্তান জিতলে গ্রুপের দ্বিতীয় স্থান দখল করবে ঠিকই, কিন্তু সেমিফাইনাল নিশ্চিত হবে না তাদের। কারণ, তখন পাল্লা ভারী থাকবে ভারতের দিকেই। কারণ, গ্রুপের শেষ ম্যাচে বিরাট কোহলি অ্যান্ড কোং মুখোমুখি হবে নামিবিয়ার। বড় কোনও অঘটন না ঘটলে ভারতের জেতার সম্ভাবনাই বেশি। আর গ্রুপের গত দুই ম্যাচে আফগানিস্তান এবং স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে রানরেটের বিচারে বাকিদের থেকে অনেক এগিয়ে ভারত। তবে নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারলে আফগানরা তাকিয়ে থাকবে অঘটনের আশায়। যদি ভারতকে রুখে দিতে পারে নামিবিয়া, সেক্ষেত্রে সেমিফাইনালে পৌঁছে যাবে আফগানিস্তান।
অর্থাৎ নিউজিল্যান্ড এবং আফগানিস্তানের সামনে এই ম্যাচটি কার্যত সেমিফাইনাল। পাকিস্তানের কাছে হেরে এবারের বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করেছিলেন কিউইরা। তবে এরপর ঘুরে দাঁড়িয়ে জয়ের হ্যাটট্রিক সেরে এখন ব্ল্যাক ক্যাপস শিবিরে ফিল গুড ফ্যাক্টর। টানা তিন ম্যাচে ভারত, স্কটল্যান্ড এবং নামিবিয়াকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটছেন ট্রেন্ট বোল্ট-মার্টিন গাপ্তিল’রা। আফগানদের বিরুদ্ধে যা প্রধান হাতিয়ার হতে চলেছে কিউইদের।
তবে নিউজিল্যান্ডের দুর্বল জায়গায় আঘাত হানতে মুখিয়ে রয়েছেন আফগানরাও। গত ম্যাচে নামিবিয়ার বিরুদ্ধে গাপ্তিল রান পেলেও, তার আগে কিন্তু একেবারেই ছন্দে ছিলেন না এই ডানহাতি ওপেনার। অপর ওপেনার ড্যারেল মিচেলেরও ধারাবাহিকতার চূড়ান্ত অভাব রয়েছে। ফর্ম হাতড়ে বেড়াচ্ছেন অধিনায়ক উইলিয়ামসনও। আর কনওয়ে-ফিলিপ্স-নিশাম সম্বলিত নিউজিল্যান্ডের মিডল অর্ডার যে একেবারেই শক্তিশালী নয়, তা বেশ ভালোই জানে আফগানিস্তান। ফলে কিউইদের ‘টপ থ্রি’কে দ্রুত প্যাভিলিয়নে পাঠানোই হবে আফগান শিবিরের মূল লক্ষ্য।
সেই তুলনায় বোলিং ডিপার্টমেন্ট অবশ্য বেশ শক্তিশালী নিউজিল্যান্ডের। ভালো ছন্দে রয়েছে তিন পেসার বোল্ট-সাউদি-মিলনে। এছাড়া স্পিনার ইশ সোধিও নিজেকে প্রমাণ করেছেন। স্যান্টনার-নিশামরাও বল হাতে দলের প্রয়োজনে কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছেন। আর ঠিক এই জায়গাতেই আফগাস্তিানের সঙ্গে টক্কর তাদের। গত ম্যাচে বারতের বিপক্ষে মুখ থুবড়ে পড়লেও, আফগানদের বোলিং বিভাগ কিন্তু যথেষ্ট সমীহ করার মতো। রশিদ খানের মতো বিশ্বত্রাস স্পিনার রয়েছে তাদের হাতে। টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত শুরু করেছিলেন মুজিব উর রহমানও। তবে শেষ দুই ম্যাচে চোটের কারণে তিনি খেলতে পারেননি। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মরণ-বাঁচন ম্যাচে মুজিব ফের মাঠে নামবেন বলেই আশা আফগান শিবিরের। এছাড়া নবি-নভীন উল হকরাও বল হাতে চলতি প্রতিযোগিতায় দারুণ পারফরম্যান্স করেছেন। সেই তুলনায় আফগানদেরও ব্যাটিং লাইনআপ কিছুটা দুর্বল।
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেতাব জয়ের অন্যতম দাবিদার ছিল ভারত। কিন্তু হট ফেবারিট হয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেও প্রথম দুই ম্যাচে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে বসে তারা। যার জন্য এখন অন্য দলের ‘দয়া-দাক্ষিণ্য’-এর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে বিরাট-রোহিতদের। এখন টিম ইন্ডিয়ার সামনে একটাই প্রত্যাশা, আফগানিস্তানের জয়। তাহলেই শেষ ম্যাচে দুর্বল নামিবিয়াকে হারিয়ে সেমির টিকিট পেয়ে যাবে মেন ইন ব্লু। তবে আপাতত ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে যাবতীয় লাইমলাইট কেড়ে নিয়েছেন আফগানরা। কে জানে, রশিদদের হয়ে গলা ফাটাতে, উৎসাহ জোগাতে হয়তো মাঠেও হাজির হয়ে যেতে পারে বিরাট অ্যান্ড কোং।