১৯৮৩ সালের ২৫ জুন। লর্ডসের মাঠে সে দিন সীমিতও ওভারের ক্রিকেটে ভারতীয় ক্রিকেট শৈশব থেকে সাবালকত্ব অর্জন করেছিল। কপিল দেবের নেতৃত্বে মহিন্দর-গাভাসকারেরা দু’বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বিশ্বত্রাস ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে লর্ডসে গড়েছিল ইতিহাস। ৩৯ বছর পরে ভারতের সেই বিশ্বজয় অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে পাতা উল্টে দেখলেন ক্রিকেট গবেষক সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়
কথায় বলে বার বার তিন বার। হ্যাঁ তৃতীয় বারেই সফল হয়েছিল ভারত। এক ঐতিহাসিক দিনে। ঠিক ওই মাঠে ওই দিনে ৫১ বছর আগে পৃথিবীর প্রথম পূর্ণাঙ্গ ব্রিটিশ হীন দল হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ করেছিল ভারত। ৫১ বছরের মাথায় তাঁরা বিশ্বজয়ের স্বাদ পায়।
১৯৭৫ ও ১৯৭৯- এর বিশ্বকাপ-এ ৬ ম্যাচে ১ টি জয় ভারতের ব্যর্থতা তুলে ধরে। প্রথমবার শ্রীনিবাস ভেঙ্কটরাঘবনের নেতৃত্বে প্রথম খেলায় ডেনিস অ্যামিসের সেঞ্চুরি (১৩৭) সমৃদ্ধ ইংল্যান্ডের বিশাল রান (৩৩৪/৩) তাড়া করে ভারত নির্ধারিত ৬০ ওভারে ১৩২/৩ তোলে। গাভাসকার পুরো ৬০ ওভার ব্যাট করে ৩৬ রান করেন (১৭৪ বলে ১×৪)।
দ্বিতীয় খেলায় অবশ্য পূর্ব আফ্রিকা ( ১২০) কে অতি সহজেই হারায় ভারত। মদনলাল ৯.৩ ওভারে ১৫ রানে ৩ উইকেট নেন। বেদী ১২ ওভারে ৬ রান দেন এবং ভারত ২৯.৫ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ১২৩ তুলে নেয়। গাভাসকার আর ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার দু'জনের অর্ধশতরান করেন। এর মধ্যে ফারুখ ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হন। তিনিই ওয়ান ডে ক্রিকেটে ভারতের প্রথম ম্যান অব দ্য ম্যাচ।
তৃতীয় ম্যাচে ভারত ২৩০ রান করে। আবিদ আলি ৭০ রান করে। জবাবে নিউজিল্যান্ড ৭ বল বাকি থাকতে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৩৩ তুলে নেয়। গ্লেন টার্নার ১৭৭ বলে ১১৪ করেন। আবিদ আলি বল হাতেও লড়াই করেন (২/৩৫), কিন্তু তবুও ভারত হেরে বিদায় নেয়।
১৯৭৯ সালেও ভেঙ্কটরাঘবন অধিনায়ক। এইবার দলে ছিলেন কপিল দেব। আগের বার ‘A' গ্রুপে থাকা ভারত সেবার ‘ B' গ্রুপে। প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ভারত তোলে ১৯০। শুধু বিশ্বনাথ একা ১৩৪ বলে ৭৫ রান করেন। হোল্ডিং ৩৩ রানে ৪ উইকেট নেন। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫১.৩ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ১৯৪ রান তুলে দেয় । গ্রিনিজ করেন ১০৬ রান।
তার পরের খেলায় নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারত ১৮২ রান করে, যার মধ্যে গাভাসকার করেন ৫৫ রান ( ১৪৪ বলে)। জবাবে নিউজিল্যান্ড ৫৭ ওভারে মাত্র ২ উইকেট হারিয়েই প্রয়োজনীয় রান তুলে নেয়। এডগার ৮৪ আর জন রাইট ৪৮ রান করে। টার্নার ৪৩ রানে অপরাজিত ছিলেন।
এমনকি টেস্ট না খেলা দেশ ( তৎকালীন) শ্রীলঙ্কা ও ৬০ ওভারে ২৩৮/৫ তোলে। ওয়েত্তিমুনি ৬৭, ডায়াস ৫০ এবং মেন্ডিস ৬৪ রান করেন। ভারতের মহিন্দর অমরনাথ (৩/৪০) ছাড়া কেউ সেভাবে সমীহ জাগাতে পারেনি। ভারত কিন্তু মাত্র ১৯১ রানে গুটিয়ে যায়।
১৯৮৩ সালের মাহাত্ম্যই আলাদা ছিল। ভারত ৬ ম্যাচে ৫ খানা হেরে বিদায় নিল আগের দু'বার। এবার দলে ছিল অনেক নতুন মুখ। অধিনায়ক ছিলেন কপিল দেব, যিনি ১৯৭৯-এর বিশ্বকাপে ৩ ম্যাচে ৫৩ রান করেন আর ২টি উইকেট নেন। দলে ছিলেন গাভাসকার, মহিন্দর অমরনাথ, মদনলাল ( আগের দু’বারও ছিলেন), কীর্তি আজাদ, রজার বিনি, সৈয়দ কিরমানি, সন্দীপ পাটিল , বলবিন্দর সিং সান্ধু, যশপাল শর্মা, রবি শাস্ত্রী, কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত, সুনীল ভালসন (একটাও ম্যাচ খেলেননি), দিলীপ বেঙ্গসরকার।
এবারই প্রথম গ্রুপ লিগে প্রতিটি দলের মধ্যে দুটি করে ম্যাচ খেলানো হয়। ভারতের ব্যর্থতা সম্পর্কে নিশ্চিত এক ব্রিটিশ সংবাদপত্রের সম্পাদক (পড়ুন বিখ্যাত ক্রিকেট ইতিহাসবিদ ডেভিড ফ্রিথ, উইজডেন ক্রিকেট মান্থলির সম্পাদক) জানিয়ে দিলেন যে ভারত জিতলে তিনি নিজের লেখা নিজে খাবেন । এই বক্তব্যে আরও ইন্ধন যোগায় প্রায় সবকটি প্র্যাকটিস ম্যাচে ভারতের পরাজয়। দু'বারের বিজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখনও অপ্রতিরোধ্য।
এবারও গ্রুপ ‘ বি’ তে থাকা ভারত ৯ই জুন প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে পড়ে ১৪৪/৫ হয়ে যায়। এটা যদিও অন্যান্য বারের তুলনায় কিছুটা ভালো। অবশেষে যশপাল শর্মা (৮৯), পাটিল (৩৬), বিনি (২৭), মদনলাল (২১) সবাই মিলে ৬০ ওভারের শেষে ভারতকে ২৬২/৮ এ পৌঁছে দেয়। আশায় বুক বাঁধলেন সমর্থকেরা । বিশ্বকাপের আগে একটা খেলায় ভারত ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল। তবে কি…
ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুরুটা ভালো হয়। ডেসমন্ড হেইন্স (২৪) ও গর্ডন গ্রিনিজ (২৪) দলকে ৪৯ অবধি টানে, কিন্তু সান্ধু, বিনি মদনলালরা ওয়েষ্ট ইন্ডিজকে শুইয়ে দেয়। ওয়েষ্ট ইন্ডিজের রান হয়ে যায় ৯ উইকেটে ১৫৭। ৮ বছর পর ভারত বিশ্বকাপে কোনো ম্যাচ জিততে চলেছে, তাও আবার দু'বারের চ্যাম্পিয়নকে হারিয়ে। এই অবস্থায় দশম উইকেটে অ্যান্ডি রবার্টস ও জোয়েল গার্নার ৭১ রান যোগ করে ফেলে। শেষে শাস্ত্রীর বলে কিরমানি গার্নারকে স্টাম্প করতেই উল্লাসে মেতে ওঠে ভারত । ৩৪ রানে জয় এল। বিনি (৩/৪৮) আর শাস্ত্রী (৩/২৬) অসাধারণ বোলিং করেন। এখানে বলে রাখা ভালো বৃষ্টির জন্য খেলা ৯ ও ১০ ই জুন হয়েছিল।
১১ ই জুন ভারত সহজেই জিম্বাবোয়েকে হারায়। জিম্বাবোয়ে প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে চমক দিলেও ভারতের কাছে মাত্র ১৫৫ রানেই গুটিয়ে যায়। মদনলাল (৩/২৭) ভালো বল করেন। কিরমানি নেন ৫ টা ক্যাচ। জবাবে ভারত অমরনাথ (৪৪) ও পাটিলের (৫০) ব্যাটের ওপর ভর করে ৩৭.৩ ওভারেই প্রয়োজনীয় রান তুলে নেয়।
১৩ ই জুন তৃতীয় ম্যাচ ( অস্ট্রেলিয়া) থেকে বিপর্যয় শুরু হলো। কেপলার ওয়েসেলসকে কপিল ৫ রানের মাথায় বোল্ড করে দিলেও ট্রেভর চ্যাপেল (১১০) আর অধিনায়ক কিম হিউজ ( ৫২) দলের রানকে ১৫৫ -এ নিয়ে গেল। এরপর গ্রাহাম ইয়ালপের ৬৬ রানের দৌলতে অস্ট্রেলিয়া ৫০ ওভারে ৩২০/৯ তোলে। কপিল দেবের দুর্দান্ত বোলিংকে (৫/৪৩) সাহায্য করলনা কেউ। উল্টে মদনলাল (১২ ওভারে ২/৬৯), পাটিল (৬ ওভারে ৩৬), অমরনাথ (৪ ওভারে ১/২৭) বেধড়ক মার খেলেন। কপিল দেব প্রথম ভারতীয় বোলার হিসেবে বিশ্বকাপে এক ইনিংসে ৫ টি উইকেট নিলেন। এরপর শ্রীকান্ত (৩৯) , কপিল দেব (২৭ বলে ৪০ ), মদনলাল (২৭) ছাড়া কেন ম্যাকলের বলের সামনে (৬/৩৯) কেউই দাঁড়াতে পারেনি। ৩৭.৫ ওভারে ১৫৮ রানের মধ্যে গুটিয়ে যায় ভারত। ১৬২ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হয়।
১৫ ই জুন বদলা নিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথমে ব্যাট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তোলে ২৮২/৯ ।রিচার্ডস ১১৯ রান করেন। বিনি ৩ উইকেট নিলেও ৭১ রান দেন। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ভারতের ইনিংস শেষ ২১৬ রানে। মহিন্দর অমরনাথ শুধু ৮০ রান করেন। তাঁকে বাদ দিলে হোল্ডিং (৩/৪০), রবার্টস (২/২৯) এর সামনে কেউ দাঁড়াতে পারেনি।
যাই হোক টার্নব্রিজ ওয়েলস-এ ১৮ ই জুন১৯৮৩। ভারতের ইতিহাসে আর এক সোনালী দিন। জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে ভারত ব্যাট করতে নামল। প্রথম ওভারে রসনের দ্বিতীয় বলে গাভাসকার এলবিডব্লিউ। ভারত ০/১। ১৩ বল খেলে কুরানের বলে বুচারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন শ্রীকান্ত (০) । ভারত ৬/২ । তারপরেই রসনের বলে ডেভিড হাউটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে অমরনাথ আউট (২০ বলে ৫) । ভারত ৬/৩ । পাটিলও গেল ১০ বলে ১ রান করে কুরানের পরের ওভারে হাউটনের হাতেই ক্যাচ দিয়ে। গোটা বিশ্ব স্তম্ভিত। ভারতে ততক্ষণে হাহাকার পড়ে গেছে। যদিও সেদিন টিভিতে খেলা দেখাচ্ছে না, কারণ এই ম্যাচকে বিবিসি পাত্তা দেয় নি খুব একটা। এমতাবস্থায় ব্যাট করতে নামলেন ক্যাপ্টেন কপিল দেব। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আবার সেই রসনের বলে হাউটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন যশপাল শর্মা (২৮ বলে ৯ রান)। ভারত ১৭/৫ । এবার বিনির সাথে জুটি বাঁধলেন কপিল। ধীরে ধীরে রান উঠতে লাগলো। প্রাক্তন দক্ষিণ আফ্রিকান টেস্ট খেলোয়াড় জন ট্রাইকসের বলে বিনি ( ৪৮ বলে ২২) যখন আউট হচ্ছেন তখন ভারত ৭৭/৬ । তারপরেই রবি শাস্ত্রী (৬ বলে ১) পাইক্রফট-এর বলে ফ্লেচারের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট। ভারত ৭৮/৭ । এরপর কপিলকে খানিকটা সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করেন মদনলাল। দলীয় ১৪০ রানের মাথায় আবার সেই কুরান- হাউটন জুটির শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান তিনি ৩৯ বলে ১৭ রান করে। অপর প্রান্তে কপিল তখন বিধ্বংসী মেজাজে। রসনের বলে টাইমিং ঠিক না হওয়ার পরও ছয় হয়ে গেছে। শুরু হলো লড়াই। একদিকে কিরমানি (৫৬ বলে ২৪ অপরাজিত) শুধু ধরে স্ট্রাইক দিচ্ছে আর অন্যদিকে কপিল জিম্বাবোয়েকে শেখাচ্ছেন ‘ক্রিকেট কিভাবে খেলতে হয়'। শেষে ১৩৮ বলে ১৬ টা চার আর ৬ টা ৬ মেরে ১৭৫ অপরাজিত কপিল। নবম উইকেটে গড়ল বিশ্বরেকর্ড ( ১২৬ অপরাজিত) । ভারত ৬০ ওভারে ২৬৬/৮ । কুরান (৩/৬৫), রসন (৩/৪৭) এর লড়াই কাজে এলো না। জিম্বাবোয়ের হয়ে কুরন (৭৩)ছাড়া ব্যাট হাতে সেভাবে কেউই দাঁড়াতে পারল না। ৫৭ ওভারে ২৩৫ রানে জিম্বাবোয়ে অলআউট। মদনলাল (৩/৪২) , বিনি (২/৪৫), কপিল (১/৩২), সান্ধু (১/৪৪), অমরনাথ (১/৩৭) সেদিন প্রায় অপ্রতিরোধ্য ছিল। আর সেদিন থেকেই গোটা দেশ অন্য খেলা ভুলতে শুরু করল।
২০ শে জুন দেখা গেল অন্য ভারতকে। যশপাল (৪০), পাটিল (৩০), কপিল (২৮) সবাই মিলে ২৪৭ তুললেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। হগ (৩/৪০) ও টমসন (৩/৫১) শুধু প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চেষ্টা করেছিল। জবাবে মদনলাল (৪/২০) ও বিনি (৪/২৯) অস্ট্রেলিয়াকে গুঁড়িয়ে দিল। অস্ট্রেলিয়াকে মাত্র ১২৯ রানে অলআউট করে সেমিফাইনালে গেল ভারত। যা প্রথম দিকে কেউই ভাবেনি।
২২ শে জুন ১৯৮৩, সেমিফাইনালে মুখোমুখি ইংল্যান্ড ও ভারত। বাটলার (৩৩), ট্যাভারে (৩২) রান ছাড়া আর কোনো ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানই কীর্তি আজাদ (১২ ওভারে ১/২৮) ও মহিন্দর অমরনাথের (২/২৭) বলের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি। আসলে দীর্ঘ রান আপের দ্রুতগতির স্পিনার আজাদ আর ছোট রান আপের ধীরগতির পেসার অমরনাথের মধ্যে কে পেসার আর কে স্পিনার তা বুঝতে নাজেহাল হয়ে যায় ইংরেজ ব্যাটসম্যানরা। উপরন্তু কপিল দেব (৩/৩৫) ও বিনির (২/৪৩) বোলার ইংল্যান্ডকে ২১৩ তে আটকে দেয়। এরপর ভারত ব্যাট করতে নেমে অমরনাথ (৪৬), যশপাল (৬১), ও পাটিলের মারমার কাটকাট ব্যাটিং(৩২ বলে ৫১)- এর ওপর ভর করে ৫৪.৪ ওভারে মাত্র৪ উইকেট হারিয়েই জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান তুলে নেয়। ভারত পৌঁছে যায় ফাইনালে। ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হন অমরনাথ।
২৫ শে জুন ১৯৮৩। ফাইনাল। মুখোমুখি দু'বারের বিজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শ্রীকান্ত (৫৭ বলে ৩৮, ৭×৪,১×৬) আর অমরনাথ (৮০ বলে ২৬) ছাড়াও পাটিল একটু ব্যাট করলেন। কপিল দেব নেমেই ৮ বলে তিনটি ৪ মেরে আউট। শেষে মদনলাল ২৭ বলে ১৭ আর কিরমানি ৪৩ বলে ১৪ করেন। এমনকি ১১ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে সান্ধু ৩০ বলে ১১ রান করে ভারতের রান ১৮৩ তে পৌঁছে দেন। রবার্টস (৩/৩২), মার্শাল (২/২৪), হোল্ডিং (২/২৬), গোমস (২/৪৯) ভালো বল করেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ১৮৪ ছিল নস্যি, তাই অনেকেই ভেবেছিলেন যে ভারতের স্বপ্ন এবারও অধরাই থাকবে। যাই হোক, প্রথমেই সান্ধুর বল বেশ খানিকটা সুইং করে গ্রিনিজের (১২ বলে ১) স্টাম্প উড়িয়ে দেয়। তখন ওয়েষ্ট ইন্ডিজ ৫/১। নামলেন রিচার্ডস। নেমেই মার শুরু। দেখতে দেখতে ওয়েষ্ট ইন্ডিজ ৫০। তারপর মদনলালের বলে বিনির হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরলেন হেইন্স (৩৩ বলে ১৩, ২×৪)। ওয়েষ্ট ইন্ডিজ ৫০/২ ।এবার এলেন লয়েড। রিচার্ডসের রান যখন ২৭ বলে ৩৩(৭×৪), তখন তিনি তুলে মারলেন মদনলালের বল। কপিল দেব উল্টো দিকে ২৫ গজ দৌড়ে অনবদ্য ক্যাচ লোফেন। ওয়েষ্ট ইন্ডিজ ৫৭/৩। এরপরই ধ্বস নামে। দেখতেই লয়েড (৮), গোমস (৫) ও বাঙ্কাস( ৮) ফিরে যান। যখন ওয়েষ্ট ইন্ডিজ ৭৬/৬ তখন দুঁজো (২৫) এবং মার্শাল (১৮) কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন কিন্তু এইসময় অমরনাথ এসে দুজনকেই ফিরিয়ে দেন। ওয়েষ্ট ইন্ডিজ ১২৫/৮ । সারা ভারত আশায় বুক বাঁধছে। একরানের মধ্যেই কপিলের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে গেলেন অ্যান্ডি রবার্টস। বিশ্বকাপ আর ভারতের মাঝে তখন দুরত্ব ১ টি উইকেটের। গার্ণার (১৯ বলে ৫) ও হোল্ডিং (২৪ বলে ৬) আরও ২৮ মিনিট অপেক্ষা করালেন। তারপর অমরনাথের বলে হোল্ডিং এলবিডব্লিউ হতেই সারা ভারত মেতে উঠল বিশ্বজয়ের আনন্দে। ওয়েষ্ট ইন্ডিজের ইনিংস শেষ হলো ১৪০ রানে। দারুণ বল করেছিলেন মদনলাল (৩/৩১) ও অমরনাথ) অমরনাথ ম্যান অফ দ্য সিরিজ হন্। পরের দিন ছুটি ঘোষণা করা হয়।
এবার আলোচনার বিষয় হচ্ছে ঠিক কি কি কারনে জিতল ভারত
• বিশ্বকাপের আগে ওয়েষ্ট ইন্ডিজকে হারানো তাদের শিখিয়েছিল যে ওয়েষ্ট ইন্ডিজ অপ্রতিরোধ্য নয়।
• প্রথম ম্যাচেই ওয়েষ্ট ইন্ডিজকে হারানো তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়।
• জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে কপিলের ব্যাটিং
• অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অনবদ্য বোলিং
• সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারানো
• ফাইনালে রিচার্ডসের ক্যাচ
• একাধিক অলরাউন্ডারের দলে থাকা।
মনে রাখা উচিৎ বিনি (১৮ উইকেট), মদনলাল (১০২ রান ও ১৭ টি উইকেট), কপিল দেব (৩০৩ রান ও ১২ উইকেট), অমরনাথ (২৩৭ রান ও ৮ উইকেট) – দের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স ভারতের পক্ষে গিয়েছিল। তাছাড়া পাটিল, শাস্ত্রী, যশপাল, শ্রীকান্ত, কীর্তি, সান্ধু সকলেই বল এবং ব্যাট দুটোই করতেন। স্বাভাবিকভাবেইএই দলের খেলা আলাদা হবে।
অনেক স্বপ্নের শুরু হয় ওখান থেকেই। সেদিনের ১০-১২ বছরের শিশুরা যারা আনন্দ করেছিল তারাই পরবর্তীতে ভারতীয় ক্রিকেটের মুখ উজ্জ্বল করে। আজও সানি-কপিলের হাতে ধরা লর্ডসের ব্যালকনিতে প্রুডেনশিয়াল কাপের ছবি অমলিন।