তুলসীদাস বলরাম ফুটবল খেলতেন ময়দানে। আর তুলসিচাঁদ? তিনি কে? বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই চেনেন না বাংলার এই ক্রীড়াবিদকে। অথচ তাঁর নামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাংলার ক্রিকেটের সাফল্যের ইতিহাস। যে সাফল্যের পথ বেয়ে ইতিহাসকে ফের ছুঁয়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়েরা। সেই তুলসিচাঁদকে ইতিহাসের পাতা থেকে তুলে আনলেন ক্রিকেট গবেষক সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুধু ব্রিটেনের অর্থনীতি নয়, সমাজজীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। প্লাম ওয়ার্নার যাঁকে ইংল্যান্ডের ভবিষ্যৎ অধিনায়ক হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন, সেই টম লংফিল্ডের বাবা রয়্যাল ইন্সুরেন্সে কাজ করতেন। কিন্তু কলকাতা শহরে এসে অ্যান্ড্রু ইউলে চাকরি নেন। কারণ তখন সব ব্রিটিশের স্বপ্ন ছিল ব্রিটিশ নয়নের মনি কলকাতায় চাকরি করা। কলকাতায় এসে খেলা শুরু করেন ক্যালকাটা ক্রিকেট ক্লাবে। যথারীতি ভারতীয় মরশুমে ইউরোপীয়ান আর বাংলার হয়ে খেলতেন। আর কাউন্টি খেলতেন গরমে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পেলে। এভাবেই কেন্টের হয়ে দুটো সেঞ্চুরি করেন, আর রঞ্জিতে বাংলার হয়ে প্রথম হ্যাটট্রিক।
১৯০৬ সালে ১২ই মে জন্মেছিলেন বাংলার প্রথম রঞ্জি জয়ী অধিনায়ক টমাস কাথবার্ট লংফিল্ড। যিনি কলকাতার ময়দানে পরিচিত ছিলেন তুলসিচাঁদ নামে। ১৯২১ সালে আলডেনহ্যাম স্কুলের হয়ে খেলতে নেমে ফরেস্ট স্কুলের বিরুদ্ধে ৫২ রান করেন। ১৯২৪ অবধি নিয়মিত খেলার পরে ১৯২৫ সালে ডাক পান কেন্টের দ্বিতীয় দলে। মাইনর কাউন্টি খেলতে। প্রথম মরশুমে কিছু না করতে পারলেও দ্বিতীয় মরশুমে ২৬ উইকেট নেন। গোটা কেরিয়ারে কেন্টের দ্বিতীয় দলের হয়ে ৩৭ উইকেট নেন ও ৩৮১ রান করেন।
১৯২৭ সালে কেমব্রিজের ব্লু পান। কেন্টের হয়ে কাউন্টি খেলা শুরু করেন। দুই মরশুমে ১০০০ এর ওপর রান করেন। ৯০ টা উইকেট নেন। খেলেছেন জার্ডিনের এমসিসির বিরুদ্ধে প্রাচ্যের ইউরোপীয় দলের হয়ে ও ভারতের হয়ে (বেসরকারি টেস্ট)। বাংলা তাঁরই অধিনায়কত্বে প্রথম রঞ্জি জেতে। বাংলার ক্রিকেটারদের অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন লংফিল্ড। ক্রিকেটার ও পরবর্তীকালে ধারাভাষ্যকার কমল ভট্টাচার্যকে বিশেষ পছন্দ করতেন।
পুরোনো দিনের মিডিয়াম ফাস্ট বোলার লংফিল্ড সাহেব ৮২টি প্রথম শ্রেণির খেলায় ২৪৪৬ রান করেন (২x১০০, ৭x৫০) ও ১৯৫ টি উইকেট নেন।
১৯৫৩/৫৪ মরশুম অবধি কলকাতায় নিয়মিত ক্রিকেট খেলেছেন। বর্তমানে কলকাতা ময়দানে হাতে গোনা দু চারজন আছেন যাঁরা টমাস কাথবার্ট লংফিল্ড কে ইডেনে বা বালিগঞ্জে খেলতে দেখেছেন। ১৯৩০-৫০/৫১ খবরের কাগজের খেলার পাতায় ক্রিকেট মরশুমে রোজই তাঁর নাম ছাপা থাকতো। নিজে বিয়ে করেছিলেন ক্রিকেটার ফ্রাঙ্ক গার্নেটের মেয়েকে। নিজের মেয়ের বিয়ে দেন ইংল্যান্ডের পরবর্তীকালের অধিনায়ক টেড ডেক্সটারের সাথে। ময়দানের ‘তুলসিচাঁদ’ আজও নিজ মহিমায় ভাস্বর।