ফুটবল মাঠে দাদার মৃত্যুও দমিয়ে দিতে পারেনি তাঁর লড়াকু মানসিকতা
চলে গেলেন ভারতের একমাত্র অলিম্পিক ফুটবলের সেমিফাইনালে তোলা অধিনায়ক সমর বন্দ্যোপাধ্যায়। ময়দান যাঁকে চেনে বদ্রু ব্যানার্জী বলে। বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। থেমে গেল হাসপাতালে ২৪ দিনের লড়াই। ২০১২ ও ২০১৮ সালে তিনি হারিয়ে ছিলেন স্ত্রী ও পুত্রকে। রেখে গেলেন পুত্রবধূ ও নাতনিকে।
মাত্র ১৮ বছর বয়সে ডাক্তারি পড়ার সময় বালি প্রতিভা ক্লাবে ফুটবল জীবন শুরু করেন তিনি। একপ্রকার লুকিয়েই বলা যায়। কখনও কলেজে যাওয়ার সময় ব্যাগের মধ্যে, কখনও ছাতার মধ্যে, কখনও চটের ব্যাগে করে ফুটবলের সরঞ্জাম বন্ধুদের হাতে পাচার করে খেলতে যেতেন। ধরা পড়লে মারও খেতেন। কারণ বাড়ি সবসময় ভয়ে থাকত। দাদা রাধানাথ ব্যানার্জি বিয়ের সাতদিনের মাথায় ফুটবল খেলতে গিয়ে মাঠেই মারা যান।
এরপরে সব বদলে যায় ১৯৫২ সালে। তখন তিনি বি এন আরে খেলেন। সেবার ইউনিভার্সিটি খেলায়, মহামেডান মাঠের পাশে ইউনিভার্সিটি মাঠে আর জি কর কলেজের হয়ে আশুতোষ কলেজের বিরুদ্ধে গোল করে দলকে জেতান। খেলা শেষে উমাপতি কুমার ও শৈলেন মান্না তাঁকে গাড়িতে তুলে মোহনবাগানে সই করাতে নিয়ে যেতে চাইলে তিনি বাবার অনুমতি চান। বাবা এক কথায় অনুমতি দেন। শুধু বলেছিলেন মোহনবাগানের সম্মান রাখতে।
১৯৫২-৫৯ মোহনবাগানে খেলতেন। '৫২ সালে ঢুকেই শিল্ড জেতেন। '৫৩ সালে জেতেন ডুরান্ড কাপ (এটাই মোহনবাগানের প্রথম ডুরান্ড জয়)।
ওই বছর ('৫৩) সন্তোষ ট্রফিও জয়ী হন। রোভার্সও জিতে নেন।
'৫৪ সালে লিগ, শিল্ড দুটোই জেতেন। ফাইনালে হায়দরাবাদ পুলিশ তাঁর গোলেই হারে।
১৯৫৫ সালে আবার লিগ জেতেন তিনি মোহনবাগানের হয়ে। সন্তোষ ট্রফিও বাংলার ঘরে আসে।
পরের বছর সোনায় মোড়া মরশুম। লীগ ও শিল্ড দুটোই জিতলেন। অলিম্পিকে ভারতীয় দলের অধিনায়ক হলেন। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায় অভিনন্দন জানলেন।
অলিম্পিকে ভারত অস্ট্রেলিয়া কে হারিয়ে সেমিফাইনাল যায়। যদিও চতুর্থ হয়। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে নেভিল ডি' সুজা হ্যাটট্রিক করেন।
ইতিমধ্যে মোহনবাগান দলের হয়ে দূর প্রাচ্য ভ্রমণ হয়ে গেছে।
১৯৫৯ সালে শেষ বার লিগজয়ী হন। এরপর বেশিদিন খেলেননি। ১৯৬১ সালে তাঁর কোচিংয়ে বাংলা সন্তোষ ট্রফি জেতে।
ভারতীয় ফুটবল যখন এশিয়ার উপরের সারির দল ছিল, সেই সময়ের শেষ আলোকচ্ছটা ছিলেন বদ্রু ব্যানার্জী। স্ট্রাইকার। রহিম সাহেবের ছাত্র, চুনি-পিকের বন্ধু।
জীবন্ত সেই ইতিহাসের অবসান ঘটল শনিবার সকালে।