ব্যর্থতার সরণি বেয়েই সাফল্যের শিখরে সোইখিম মীরাবাই চানু
ময়ূখ লাহিড়ীদাদার সঙ্গে রোজ কাঠ কুড়োতে যেত ১২ বছরের মেয়েটি। ইম্ফলের অদূরে নংপক কাকচিং-এ তাদের বাড়ি। মেইতেই জাতির আর পাঁচটি পরিবারের মতোই তারাও জ্বালানি সংগ্রহ করত বন থেকে। কিন্তু বড় পরিবারে জ্বালানির চাহিদা তো নেহাত কম নয়। কুড়িয়ে নেওয়া কাঠের পরিমাণ হত অনেকটাই। কাঠের ভারী বোঝা তুলতে পারত না দাদা। কিন্তু দাদাকে অবাক করে বোন অবলীলায় তুলে নিত কাঠের বোঝা! সেই দাদাই প্রথম বুঝিয়েছিল পরিবারকে, সোইখিমের মধ্যে ওজন বইতে পারার আশ্চর্য ক্ষমতা রয়েছে। সেখান থেকেই শুরু বৃত্তের। যে বৃত্ত সম্পূর্ণ হল শনিবারের টোকিওতে। যখন সোইখিম মীরাবাই চানুর গলায় উঠল অলিম্পিকের রুপোর পদক। স্ন্যাচে ৮৭ কেজি আর ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১১৫ কেজি। মেয়েদের ৪৯ কেজি বিভাগে ২০২ কেজি ওজন তুলে ভারোত্তোলনে রুপো পেলেন মণিপুরের সোইখিম। চার ফুট ১১ ইঞ্চির শারীরিক উচ্চতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে।
বিশ্ববন্দিত আবিষ্কারক টমাস আলভা এডিসন একবার বলেছিলেন, “আমি জীবনে কখনও ব্যর্থ হইনি। শুধু ১০ হাজার এমন উপায় আবিষ্কার করেছি যা কাজে লাগবে না।“ এডিসনের ‘ভোকাল টনিক’ চানু পড়েছেন কি না জানা নেই। কিন্তু ব্যর্থতার যে সরণি বেয়ে শেষমেশ তিনি চূড়ান্ত সাফল্যের মুখ দেখলেন তা বোধহয় শুধু এডিসনের কথা দিয়েই ব্যাখ্যা করা সম্ভব। ২০১৬ রিও অলিম্পিকের কথাই ধরা যাক। ৪৮ কেজি বিভাগে নেমেছিলেন। স্ন্যাচে তবু ৮২ কেজি তুলেছিলেন। কিন্তু ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ডাহা ফেল। তখন কারও মনেই নেই যে এই মেয়েই ২০১৪ গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসে দেশকে রুপো এনে দিয়েছিল। কিন্তু ভিতরের বারুদটায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল রিও-র ওই ব্যর্থতাই। যে আগুন কাজে লাগিয়ে পরের বছরের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতে নিয়েছিলেন সোইখিম। ২০১৮ সালে গোল্ড কোস্টে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ গেমসেও রেকর্ড গড়ে সোনা জিতেছিলেন। যার জেরে সেই বছরেই পেয়েছিলেন রাজীব গান্ধী খেলরত্ন পুরস্কার এবং পদ্মশ্রী সম্মান। ২০১৯ সালের এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে এবং বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে একটুর জন্য ফস্কে গিয়েছিল পদক। আর পদকের সেই ক্ষিদেই টোকিওর বিশ্বদরবারে আরও একবার প্রতিষ্ঠিত করল ভারতকে, সোইখিমকে, তাঁর মণিপুরকে। সেই মণিপুর যেখানে সোইখিমের মতোই আর এক চানু দেড় দশক ধরে অনশন চালিয়েছিলেন আফস্পা-র প্রতিবাদে। মণিপুরে সেই ইরম শর্মিলা চানু পরিচিত ‘লৌহমানবী’ নামে। সে চানুর মতোই কাজের ক্ষেত্রে তিনিও যে লৌহমানবী তা শনিবারের টোকিওতেই প্রমাণ করে দিলেন ২৭ ছুঁইছঁই সোইখিম।