শোকের ছায়া ভারতীয় টেনিস মহলে।
স্পোর্টি ওয়ার্ল্ড নিউজ ডেস্করবিবার ছুটির দিন সকালে চোখ খুলতে না খুলতেই দুঃসংবাদ ক্রীড়ামহলে। ভারতীয় টেনিসে নক্ষত্র পতন। শনিবার গভীর রাতে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন আখতার আলি। দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। অবশেষে ৮২ বছর বয়সে পৃথীবির মায়া ত্যাগ করলেন দেশের প্রাক্তন টেনিস তারকা।
১৯৫৮ সাল থেকে ভারতের হয়ে ডেভিস কাপে দাপটের সঙ্গে খেলেছেন আখতার। ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত দেশের হয়ে ডেভিস কাপে নয়টি ম্যাচে জয়ের মুখ দেখেছেন তিনি। হেরেছেন মাত্র দুটি ম্যাচে। সিঙ্গলসের পাশাপাশি ডাবলসেও র্যাকেট হাতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন আখতার আলি। রামানাথন কৃষ্ণান, নরেশ কুমার, প্রেমজিৎ লাল এবং জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের জুটি বেঁধে কোর্ট মাতিয়েছেন তিনি।
১৯৫৫ সালে জুনিয়র ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিলেন আলি। সেই বছরেই জুনিয়র উইম্বলডনে সেমিফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিলেন তিনি। টেনিস থেকে বিদায় নেওয়ার পরও থেমে থাকেনি তাঁর দৌড়ে। রমেশ কৃষ্ণান, বিজয় অমৃতরাজ, আনন্দ অমৃতরাজ এমনকি লিয়েন্ডার পেজকেও কোচিং করিয়েছেন আখতার আলি। ভারতীয় টেনিস সুন্দরী সানিয়া মির্জাও দীর্ঘদিন তাঁর তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাঁর ছেলে জিশান আলি প্রাক্তন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। বর্তমানে ডেভিস কাপে ভারতীয় দলের কোচ হিসাবে নিযুক্ত রয়েছেন জিশান।
স্বাভাবিকভাবেই এরকম একজন তারকার প্রয়াণে শোকে মূহ্যমান ভারতীয় টেনিস মহল। দেশের অন্যতম সেরা টেনিস তারকা সোমদেব দেববর্মন টুইটে শোকপ্রকাশ করে জানিয়েছেন, ‘১৯৯৯ সালে কলকাতার সাউথ ক্লাবে আখতার স্যারের থ্রো ডাউনে আমার টেনিসে হাতেখড়ি। সেই স্মৃতি আজও অমলীন। উনি আমাদের সকলকে অনেক কিছু শিখিয়েছেন। ভারতীয় টেনিসের কিংবদন্তি আখতার আলির আত্মার শান্তি কামনা করি।’
সোশ্যাল মিডিয়ায় শোকবার্তা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটে তিনি লেখেন, ‘আখতার আলির প্রয়াণের খবরে শোকস্তব্ধ। ভারতের একাধিক টেনিস চ্যাম্পিয়নের স্যার ছিলেন উনি। উনাকে ২০১৫ সালে বাংলার সর্বোচ্চ ক্রীড়াসম্মান প্রদান করা হয়েছিল। যখনই দেখা হয়েছে, উনার থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছি। এই শোকের সময়ে উনার পরিবার ও অনুরাগীদের সমবেদনা জানাতে চাই।’
২০০০ সালে লন টেনিসে অর্জুন পুরস্কার পেয়েছিলেন আখতার আলি। মৃত্যুকালে তিনি রেখে গেলেন স্ত্রী, দুই কন্যা ও এক পুত্রকে। এদিন দুপুরে তাঁর বাসভবনে যান ক্রীড়ামন্ত্রী অরুপ বিশ্বাস। বিকেল ৪ টেয় তাঁর নিথর দেহ সমাধিস্থ করা হবে।
তাঁর জয়-পরাজয়ের রেকর্ড, প্রতিভা তুলে আনার ক্ষেত্রে তাঁর বিচক্ষণতা, পেজ-সানিয়া-সোমদেবদের মতো খেলোয়াড়দের তারকা হয়ে ওঠার পিছনে তাঁর অবদান, সবই রয়ে গেল। আজ শুধু ইতিহাস হয়ে গেলেন স্বয়ং আখতার আলি।