অনিচ্ছাকৃতভাবে আঘাত মহিলা লাইন আম্পায়ারকে
স্পোর্টি ওয়ার্ল্ড নিউজ ডেস্কনিজের দেশের কোর্টেই কি তাঁর উত্তরসূরি খুঁজে পেলেন জন ম্যাকেনরো? রবিবার ফ্লাশিং মিডজের আনাচে-কানাচে ঘরপাক খাচ্ছে এই প্রশ্নই। নেপথ্যে যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের শীর্ষবাছাই নোভাক জকোভিচের অখেলোয়াড়োচিত আচরণ। অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও লাইন জাজকে বল দিয়ে আঘাত করেছেন জোকার। যার জেরে এবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র ওপেন থেকে বহিষ্কৃত হলেন সার্ব তারকা।
রবিবার আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে চতুর্থ রাউন্ডের ম্যাচে স্পেনের পাবলো ক্যারেনো বুস্তার বিরুদ্ধে নেমেছিলেন জকোভিচ। প্রথম সেটে পিছিয়ে ছিলেন ৫-৬ গেমে। তিনবার চেষ্টা করেছিলেন বুস্তার সার্ভিস ভাঙার। কিন্তু সফল হননি। সেই হতাশা থেকেই একটি বল সজোরে কোর্টের পিছন দিকে মারেন জোকার। বল গিয়ে আঘাত করে মহিলা লাইন জাজকে। বল থেকে নিজেকে বাঁচাতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়েছিলেন ওই লাইন জাজ। সেই অবস্থাতেই বল আঘাত করে তাঁর গলায়। তৎক্ষণাত তাঁর কাছে গিয়ে ক্ষমা চান জোকার। কিন্তু তাতে চিঁড়ে ভেজেনি। বিষ্যটিতে হস্তক্ষেপ করেন প্রতিযোগিতার রেফারি সোরেন ফ্রিমেল, গ্র্যান্ড স্লাম সুপারভাইজার আন্দ্রেয়াস এগলি এবং চেয়ার আম্পায়ার অরেলি তুর্তে। দশ মিনিট কোর্টের মধ্যেই চলে আলোচনা। তারপরেই এবারের প্রতিযোগিতা থেকে বহিষ্কার করা হয় জকোভিচকে। ফলে, ম্যাচ হেরে প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যাওয়াই শুধু নয়, আড়াই লক্ষ মার্কিন ডলার পুরস্কারমূল্যও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে জোকারের কাছ থেকে। র্যাঙ্কিং পয়েন্টও কেটে নেওয়া হচ্ছে তাঁর।
ফ্রিমেল জানিয়েছেন, “জকোভিচ বলেছেন যে তিনি ইচ্ছা করে লাইন আম্পায়ারকে আঘাত করেননি। তাঁর কথায়, ‘আমি রেগে গিয়েছিলাম। বল সজোরে মেরেছি। সেই শটেই লাইন আম্পায়ার আহত হয়েছেন। কিন্তু ওঁকে আঘাত করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না’। সেই কারণেই নিজেকে দোষী বলে মানতে চাননি জকোভিচ। আমরাও এই বিষয়ে একমত যে জকোভিচ ইচ্ছাকৃতভাবে লাইন আম্পায়ারকে আঘাত করেননি। তবে আম্পায়ারের দিকে উনি শট মেরেছেন এবং আম্পায়ার তাতে আহত হয়েছেন, এটা স্পষ্ট।“
যুক্তরাষ্ট্র টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “গ্র্যান্ড স্লামের নিয়ম অনুযায়ী, কোর্টের মধ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে বল মারলে, তার প্রভাব যাই হোক না কেন, তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে।“
ঘটনার পর সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনও কথা না বলেই স্টেডিয়াম ছেড়ে বেরিয়ে যান জকোভিচ। পরে গোটা বিষয়টি নিয়ে টুইটারে ক্ষমা চেয়েছেন সার্বিয়ান তারকা। লিখেছেন, “গোটা পরিস্থিতির জন্য আমি অত্যন্ত দুঃখিত। তখনই লাইন আম্পায়ারের কাছে গিয়েছিলাম। প্রতিযোগিতার উদ্যোক্তাদের তরফ থেকেও আমাকে জানানো যে, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, উনি সুস্থ রয়েছেন। ওঁকে এভাবে আঘাত দেওয়ার জন্য আমি অত্যন্ত দুঃখিত। পুরোটাই অনিচ্চকাকৃত ভুল। প্রতিযোগিতা থেকে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। নিজের হতাশার কারণ নিয়ে বিবেচনা করতে হবে আমাকে। যাতে একজন খেলোয়াড় এবং মানুষ হিসাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে এই ঘটনা আমার কাছে শিক্ষণীয় হয়ে থাকে।“
প্রসঙ্গত, নিজের পেশাদারি জীবনে বেশ কয়েকবার বিতর্কে জড়িয়েছেন ম্যাকেনরো। চেয়ার আম্পায়ার বা লাইন জাজের সঙ্গে অখেলোয়াড়োচিত আচরণ করেছেন ম্যাকেনরো। যার জেরে একাধিকবার শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। জকোভিচের এদিনের আচরণ সেইসব ঘটনার স্মৃতিকেই আরও একবার উস্কে দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের নিরিখে রজার ফেডেরার (২০) এবং রাফায়েল নাদালের (১৯) পরেই রয়েছেন জকোভিচ (১৭)। এবার ফেডেরার এবং নাদাল যুক্তরাষ্ট্র ওপেন থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ায় জকোভিচের সামনে সুযোগ ছিল ফ্লাশিং মিডজে চতুর্থ খেতাব জেতার। কিন্তু সেই আশা আপাতত পূরণ হচ্ছে না ৩৩ পেরোনো জকোভিচের। যার জেরে এবার নতুন চ্যাম্পিয়ন পেতে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র ওপেন। বিশেষজ্ঞদের মত, ফেডেরার-নাদাল-জকোভিচ ত্রয়ী যুগের অবসান হতে চলেছে ফ্লাশিং মিডোজেই।